মহোৎসবের আকাশে রাজ্য জুড়ে হুঙ্কার ঘূর্ণাবর্তের

বছরভর প্রতীক্ষার পরে আনন্দময়ীর আগমনের পটভূমি প্রস্তুত। কিন্তু সেই আনন্দে বাদ সাধার হুমকি দিচ্ছে এক অবাঞ্ছিত অতিথির আগমন। সেই আগন্তুকের নাম ঘূর্ণাবর্ত। পুজোর সামগ্রিক আবহাওয়াকেই ঘোরতর অনিশ্চিত করে তুলেছে সে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২১
Share:

পুজোয় বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার শহরের রাস্তায়। শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

বছরভর প্রতীক্ষার পরে আনন্দময়ীর আগমনের পটভূমি প্রস্তুত। কিন্তু সেই আনন্দে বাদ সাধার হুমকি দিচ্ছে এক অবাঞ্ছিত অতিথির আগমন। সেই আগন্তুকের নাম ঘূর্ণাবর্ত। পুজোর সামগ্রিক আবহাওয়াকেই ঘোরতর অনিশ্চিত করে তুলেছে সে!

Advertisement

ওই ঘূর্ণাবর্তের আগমনবার্তা বৃহস্পতিবার ধরা পড়েছে উপগ্রহ-চিত্রে। এ দিন বিকেলে তার অবস্থান ছিল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে। বিক্ষিপ্ত ভাবে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি ছাড়া এত দিন পুজোর প্রস্তুতিতে সহযোগিতাই করে এসেছে আবহাওয়া। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা, সবই বিঘ্নহীন ভাবে সেজে উঠেছে তার আনুকূল্যে। কিন্তু হঠাৎ উটকো ঘূর্ণাবর্তের আগমনেই বদলে গিয়েছে পুজোর আকাশ। দুর্গার সঙ্গে অসুরও আসবে এবং দেবীর হাতেই তার নিধন স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু ঘূর্ণাবর্ত নামক এই অসুরটি কতটা জ্বালাবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রকৃতির ওই দূতের দাপটে উৎসবের ক’টা দিন আবহাওয়া কেমন যাবে, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না পুজোর উদ্যোক্তা থেকে সাধারণ মানুষের। উৎসবের মরসুমে জনতার উৎসাহে কতটা জল সে ঢালবে, সেই বিষয়ে হাওয়া অফিসে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, ওই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে পুজোর সময় কলকাতা-সহ উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। নবমীর পর থেকে বৃষ্টি বাড়তেও পারে। ঘূর্ণাসুর যে রীতিমতো রণসাজে সেজে এসেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে এ দিনই। বিকেল থেকেই সে সমানে মেঘসৈনিক ঢুকিয়ে চলেছে কলকাতা এবং লাগোয়া জেলাগুলির আকাশে। কোথাও কোথাও বৃষ্টিও হয়েছে কমবেশি। আজ, শুক্রবার দেবীর বোধনের দিনেও মেঘ থাকবে যথেষ্ট। বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে।

Advertisement

মহালয়ার দিনটা ছিল রোদ ঝলমলে। নীল আকাশে ভেসেছে শারদীয় সাদা মেঘের ভেলা। পরের কয়েক দিন কোথাও কোথাও বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে স্থানীয় ভাবে বৃষ্টি হয়েছে ঠিকই। তবে তাতে দুর্যোগের তেমন কোনও ইঙ্গিত দেখতে পায়নি আবহাওয়া দফতর। সেখানকার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, পুজোর সময় বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে। তবে উৎসব একেবারে ভাসিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা বিশেষ নেই। কিন্তু এ দিনের মেঘসজ্জা সেই আশ্বাসে আস্থা রাখতে দিচ্ছে না। কেননা ঘূর্ণাবর্ত হঠাৎ করেই পরিস্থিতি বদলে দিতে চলেছে বলে হাওয়া অফিসের আশঙ্কা।

এই ঘূর্ণাবর্ত এল কোথা থেকে?

হাওয়া অফিসের খবর, ঘূর্ণাবর্তটি তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ উপকূলে। তবে তার উদ্ভব পর্বে বঙ্গোপসাগরের উপরে বায়ুর চাপ এবং হাওয়ার অভিমুখ দেখে বিজ্ঞানীদের ধারণা হয়েছিল, ঘূর্ণাবর্তটি এ রাজ্যের দিকে আসবে না। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের খামখেয়ালি আবহাওয়ার টানে সে সরে এসেছে এ-পার বাংলার দিকেই। দিল্লির মৌসম ভবনের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, দেশ থেকে বর্ষা ধীরে ধীরে পাততাড়ি গোটাচ্ছে। প্রতি বছরই এই ঋতুবদলের সময় বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া অস্থির হয়ে থাকে। ফলে হঠাৎ হঠাৎ মতি-মেজাজ বদলে যায় তার। এ বারেও সেটাই হয়েছে। তার ফলে ও-পার বাংলার ঘূর্ণাবর্ত শুধু এ-পারে সরে এসেই ক্ষান্ত হয়নি। সে জোট বেঁধেছে অন্ধ্রপ্রদেশের কাছে থাকা অন্য একটি ঘূর্ণাবর্তের সঙ্গে!

মৌসম ভবনের নির্ঘণ্ট মেনে চললে কাল, শনিবার সপ্তমীর দিন কাগজে-কলমে বর্ষার বিদায় নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এখনও বর্ষা-বিদায়ের কোনও লক্ষণই দেখতে পাচ্ছেন না আবহবিদেরা। গত কয়েক বছরের হিসেব বলছে, বিদায়বেলায় বর্ষা কিছুটা দুলকি চালেই চলে। তার উপরে যদি কোনও নিম্নচাপ দানা বাঁধে, তা হলে আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বর্ষার ইনিংস। যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো-র ভঙ্গিতে ব্যাটিং চালিয়েই যেতে পারে সে।

বর্ষার শেষ লগ্নে সেই ধরনের নিম্নচাপ তৈরির আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহবিদদের একাংশ। তাঁদের ধারণা, পুজোর অবাঞ্ছিত আগন্তুক এই ঘূর্ণাবর্ত সহজে শক্তি খোয়াবে না। বরং বিজয়াদশমীর পরে তার শক্তি বাড়তে পারে। মৌসুমি বায়ু এ বার মরসুমের সূচনা থেকেই যথেচ্ছ তুঘলকিপনা করে চলেছে। বিদায়বেলাতেও ঘূর্ণাবর্ত বা কোনও নিম্নচাপের সহযোগে রীতিমতো ভোগাতে পারে খামখেয়ালি বর্ষা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement