স্বস্তির বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
বৃহস্পতিবার বিকেলের এক পশলা বৃষ্টিতে মন ভরে গিয়েছিল শহরবাসীর। শুক্রবার সকাল থেকেই সেই চিত্রটা বদলে যায়। আকাশ মেঘলা থাকলেও অত্যধিক আর্দ্রতার জেরে আবহাওয়া অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে।
ক’দিন ধরে উত্তরবঙ্গে দাপট দেখানোর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে এক পশলা ঝড়বৃষ্টিতে সে আক্ষেপ অনেকটাই মিটে যায়। স্বস্তি দিয়েছিল হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসও। আজ, শুক্রবারও ঝড়বৃষ্টি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, গরমের দাপট কমতে পারে। দক্ষিণবঙ্গে ঝড়বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ দিন সকাল থেকেই গুমোট আবহাওয়া বহাল থাকে।
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার পথ সুগম হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘আরবসাগরে ঘূর্ণিঝড় আশোবা দুর্বল হচ্ছে। ফলে বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তা বাড়বে। শুক্রবার পরিস্থিতি আরও ভাল করে বুঝতে পারব আমরা।’’
আবহবিদেরা জানান, এ দিন দুপুরে পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ড সীমানায় বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়। সেটি বাঁকুড়া, বর্ধমান হয়ে কলকাতার দিকে এগোতে থাকে। দুপুরে নদিয়া-বাংলাদেশ সীমান্তে আরও একটি মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়। সেটি হুগলি গিয়ে ঝাড়খণ্ড সীমানা থেকে আসা মেঘের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল। সব মিলে মেঘটির উচ্চতা দাঁড়ায় ১৪-১৬ কিমি। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, এ দিন ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৮৮ কিমি। সেই নিরিখে একে কালবৈশাখীর গোত্রেই ফেলেছেন আবহবিদেরা।
এ দিনের বৃষ্টি যে কতটা স্বস্তি এনেছে, তার ছবি দেখা গিয়েছে বিধানসভাতেও। উচ্চশিক্ষা-বাজেট নিয়ে আলোচনার সময়ে মেঘ জমার খবর আসতেই কয়েক জন বিধায়ক বাইরে চলে যান। ঝড়বৃষ্টি শুরু হতেই সেই সুখবর ভিতরে বয়ে আনেন কয়েক জন বিধায়ক। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জবাবি ভাষণের শেষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সুখবর’ শোনান সকলকে। বিধানসভা কক্ষের বাইরে বৃষ্টি নিয়ে রসিকতাও করেন বিধায়ক ও সাংবাদিকেরা। অনেকেই পার্থবাবুকে বলেন, তানসেন দীপক রাগ গেয়ে প্রদীপ জ্বালাতেন। এই আমলে শিক্ষামন্ত্রীর ভাষণে নাকাল করা গরমে বৃষ্টি আসছে! রসিকতা শুনে পার্থবাবু মুচকি হাসেন।
তবে বৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটে বিমান ও ট্রেন পরিষেবায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু জায়গা এবং গড়িয়া, বাঁশদ্রোণীতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, ঝড় শুরু হতেই বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একাধিক বিমানকে অন্যত্র পাঠানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। রেল জানায়, ওভারহেড তারে ডাল পড়ে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয় শিয়ালদহ মেন ও দক্ষিণ শাখায়। বজবজ লাইনে রাত পর্যন্ত ট্রেন বন্ধ থাকে। দুপুরে গরমের দাপট এতটাই ছিল যে নিউ জলপাইগুড়ি-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা একটি কামরায় ঠান্ডা কম হওয়ার দরুণ ক্ষোভে জানলা ভাঙেন। রেল সূত্রে খবর, ওই কামরায় একটি এসি কাজ না করাতেই এই বিপত্তি।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্গাপুর ব্রিজ, ট্র্যাঙ্গুলার পার্ক, এনএসসি রোড-সহ নানা জায়গায় গাছ ও বাতিস্তম্ভ উপড়ে যানজট হয়।