হেমন্তে তার অকাল-উপদ্রবে মানুষের স্বাস্থ্য আর কৃষি দুই-ই বিষম বিপাকে পড়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সেই গভীর নিম্নচাপের মেজাজমর্জি দেখে কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছেন আবহবিদেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, আজ, শুক্রবার ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা কম। বৃষ্টির দাপট কিছুটা কমলেও আকাশ অবশ্য এখনই পরিষ্কার হচ্ছে না। মেঘ কাটতে কাটতে সেই সোমবার।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ওডিশায় গিয়ে স্থলভূমিতে আর বিশেষ না-ঢুকে মুখ ঘুরিয়ে গভীর নিম্নচাপ রওনা দেবে বাংলাদেশ-মায়ানমারের দিকে। তাই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ার উন্নতির আশা করছেন আবহবিদেরা।
কয়েক দিন আগে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ দানা বেঁধেছিল। ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তার পরে সে রওনা হয় ওডিশা উপকূলের দিকে। যত সে উপকূলের দিকে এগিয়েছে, ততই বৃষ্টি ঝরেছে ওই সব এলাকায়। বুধবার সারা দিনরাত ঘ্যানঘেনে বৃষ্টির পরে বৃহস্পতিবারেও দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে এ দিনই আশার আলো দেখতে পেয়েছেন আবহবিদেরা।
এ দিন উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানান, নিম্নচাপটি ওডিশা উপকূলের কাছাকাছি এলেও স্থলভূমিতে ঢুকবে না। বাংলাদেশ-মায়ানমারের রাস্তা ধরবে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের কথায়, এখন বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ এমনই যে, মনে হচ্ছে, মায়ানমার বা বাংলাদেশে পৌঁছনোর আগেই গভীর নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে পড়বে। শক্তি খুইয়ে শেষ বিলীন হয়ে যাবে সাগরের উপরেই।
কিন্তু এই ক’দিনে নিম্নচাপ যে-ধাক্কা দিয়েছে, সেটা সামলে হেমন্ত ছন্দে ফিরবে তো? ফিরলে কবে?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, গভীর নিম্নচাপের ধাক্কায় হেমন্তের ছন্দ পুরোটাই তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। গভীর নিম্নচাপ সরে গেলেও আগামী রবিবার পর্যন্ত আকাশ মেঘলাই থাকবে। সোমবার থেকে আকাশ পরিষ্কার হতে পারে। দীর্ঘদিন পরে হেমন্ত এ বার বেশ ভাল ভাবেই নিজের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেছিল। কিন্তু সাগরের অবাঞ্ছিত অতিথি এই গভীর নিম্নচাপে সে আবার কুণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। তাকে আবার স্বমহিমায় পেতে হলে চাই মেঘমুক্ত আকাশ আর পারদের দ্রুত পতন। হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, মেঘ কাটতে এখনও অন্তত তিন দিন আর আকাশ মেঘলা থাকায় রাতের তাপমাত্রা কমতে পারবে না। এ দিনও কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি। আগামী সপ্তাহে গিয়ে রাতের পারদ ২০ ডিগ্রির নীচে পৌঁছতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা।
কয়েক দিনের ছিঁচকে বৃষ্টিতে জীবাণু-ভাইরাস দাপট দেখানোর অনুকূল পরিবেশ পেয়ে গিয়েছে। এখানে-ওখানে জল জমে মশার আঁতুড়ঘরও তৈরি হয়েছে অসংখ্য। পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাকে নামতে হবে অন্তত ১৭ ডিগ্রির সেলসিয়াসের নীচে।
মেঘ পুরোপুরি কেটে যাওয়ার পরে বেশ কয়েক দিন ঝলমলে রোদ উঠলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দ্রুত নামতে পারে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। আর পারদ নামলে তবেই জীবাণুদের বাড়বাড়ন্ত ধাক্কা খাবে। মাঠের ধান ও অন্যান্য ফসল বাঁচবে। সর্বোপরি হেমন্তকে পাওয়া যেতে পারে স্বরূপে।