এফআইআর শিক্ষকের, কী করছে পুলিশ

শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে দুপুরের দিকে উপাচার্য বিজ্ঞান বিভাগের ডিন, প্রযুক্তি বিভাগের ডিন, সহ উপাচার্যকে (অর্থ) নিয়ে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ভাস্করবাবুর দফতরে যান। শিক্ষামন্ত্রী পরে বলেন, ‘‘উপাচার্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যপার।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৫
Share:

ফাইল চিত্র।

রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের নিগৃহীত শিক্ষক আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় বৃহস্পতিবার এফআইআর করলেন বটে, কিন্তু অভিযুক্ত ছাত্রনেতা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেলেন।

Advertisement

বছর কয়েক আগে ই-মেলে একটি কার্টুন ফরওয়ার্ড করার দায়ে যাদবপুর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে অভিযোগ জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এক ছাত্রনেতা এক শিক্ষককে পর পর চড় মারার পরেও কী ভাবে প্রকাশ্যে ঘুরছেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন নিগৃহীত শিক্ষকের সহকর্মীদের অনেকেই।

মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটলেও, তাদের কাছে নিগৃহীত শিক্ষক ভাস্কর দাস কোনও অভিযোগ না করায় তাঁরা অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা গৌরব দত্ত মুস্তাফির বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে পুলিশ-কর্তারা দাবি করছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা নাগাদ অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে গৌরবকে ধরতে তাঁরা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছে লালবাজার। ও দিকে গৌরব গোটা নিগ্রহের ঘটনা অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। সমস্ত বিষয়টা উপাচার্যকে জানিয়েছি।’’

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে গৌরব ভাস্করবাবুকে মারধর করার পরে পরেই গোটা বিষয়টি উপাচার্য়ের নজরে আনা হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সারাদিন ও বুধবার নিগৃহীত শিক্ষকের খোঁজ উপাচার্য বা সহ-উপাচার্য কেউ নেননি বলেই ভাস্করবাবু জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে গিয়ে দেখা করেন ভাস্কবাবুর সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশেই উপাচার্য এ দিন ভাস্করবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।

গৌরব গাথা (ভাস্করবাবুর অভিযোগ)

বলেছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে তাড়িয়ে দেবে। আমার পেনশন আমি কিছুতেই পাব না

আমার মায়ের নাম নিয়ে ছাত্রদের সামনে গালাগাল দিয়েছে। এমন আমি আমার ছাত্র ও শিক্ষক জীবনে শুনিনি

ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের শিক্ষক সনাতন চট্টোপাধ্যায়ের নাম করে বলতে থাকে, উনি বলেছেন আপনি পাগ

উপাচার্য বলেন, ‘‘কখনও উপাচার্যকে, কখনও শিক্ষককে মারধর করা হবে, অপমান করা হবে, বারংবার এই ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না। ভাস্করবাবুর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দুর্ভাগ্যাজনক এবং দুঃখজনক।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হবে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু পুলিশ কেন গৌরবকে গ্রেফতার করল না সেই প্রশ্ন এড়িয়ে সোনালীদেবী বলেন, ‘‘উনি (ভাস্করবাবু) পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বার যা করার পুলিশই করবে।’’

পুলিশ অবশ্য রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি ওই টিএমসিপি নেতাকে। কেন? কলকাতা পুলিশের ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকারের দায়সারা মন্তব্য, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে ভাস্করবাবু বলেছেন, ‘মঙ্গলবার সকালে বিজ্ঞান কলেজে নিজের ঘরে বসে কাজ করার সময় একজনকে নিয়ে ঢোকেন গৌরব-সহ দুই ছাত্র। ফেল করা পড়ুয়াদের পাশের দাবিতে কথাবার্তা চলার মধ্যে হঠাৎই গৌরব আমার বাঁ গালে সপাটে চড় মারেন গৌরব। মায়ের নাম করে গালাগালও দেন। লিখিত অভিযোগে ভাস্করবাবু জানান, গৌরব নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলে তাঁর মনে হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে দুপুরের দিকে উপাচার্য বিজ্ঞান বিভাগের ডিন, প্রযুক্তি বিভাগের ডিন, সহ উপাচার্যকে (অর্থ) নিয়ে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ভাস্করবাবুর দফতরে যান। শিক্ষামন্ত্রী পরে বলেন, ‘‘উপাচার্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যপার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন