পরিবার মানছে না ‘লাভ জেহাদ’

স্ত্রী-ও বলেন, স্বামীর নামে চক্রান্ত করে নানা কথা রটানো হচ্ছে। বাড়িতে বৃদ্ধা মা ও তিন মেয়ে। তিনি অন্য কোথাও বিয়ে করেননি। খুনের পিছনে ব্যবসা সংক্রান্ত ঘটনা থাকতে পারে। একই দাবি তিন মেয়েরও।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৫
Share:

কান্নায় ভেঙে পড়েছে আফরাজুলের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

আফরাজুল খানকে খুনের পিছনে ‘লাভ জেহাদ’-এর তত্ত্ব মানতে রাজি নয় তাঁর পরিবার। তাঁদের আশঙ্কা, ঠিকাদারি সংক্রান্ত কোনও কারণে চক্রান্ত করে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে। শুক্রবারই রাজস্থান থেকে মালদহে তাঁর দেহ নিয়ে আসার কথা রয়েছে।

Advertisement

আফরাজুলের বাড়ি কালিয়াচক-১ ব্লকের জালুয়াবাথাল পঞ্চায়েতের সৈয়দপুর শেখপাড়া গ্রামে। বাড়িতে রয়েছে তাঁর স্ত্রী গুলবাহার বিবি ও তিন মেয়ে জোসনারা বিবি, রেজিনা বিবি ও হাবিবা খাতুন। পরিবার সূত্রে খবর, আফরাজুল ২০ বছর আগে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে রাজস্থানে যান। তিন মাস অন্তর এক বার করে বাড়িতে আসেন তিনি। ক’মাস আগেও বাড়িতে এসেছিলেন। রাজস্থানের রাজসমুন্দ জেলার কাকরোলি গ্রামে একটি আবাসনে থাকতেন আফরাজুল। তিনি সেখানে পঞ্চায়েতের রাস্তার কাজে ঠিকাদারি করতেন। তাঁর সঙ্গে একই আবাসনে থাকেন ছোট ভাই রুম খান ও দুই ভাগ্নে জাহাঙ্গির খান এবং জসিম খান। গুলবাহার বিবি বলেন, বুধবার বেলা ১১টা নাগাদও তাঁর স্বামী ফোনে কথা বলেন এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা দেবেন বলে জানান। কিন্তু তার পরে আর ফোনও আসেনি, অ্যাকাউন্টে টাকাও ঢোকেনি। রাতে দেওর রুম ফোন করে জানায় যে, তাঁর স্বামীকে কুপিয়ে ও জ্যান্ত পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে।

রুম খান টেলিফোনে বলেন, আফরাজুল রাস্তার একটি কাজ হাতে নিয়েছিল। বুধবার সকাল ন’টা নাগাদ তিনি আবাসন থেকে বের হন। ১১ টা নাগাদ ব্যাঙ্কে টাকা জমা করার কথা জানান। কিন্তু এর পর তাঁর খোঁজ মেলেনি। রাজস্থান পুলিশ এ দিন মরদেহ নিয়ে মালদহে রওনা হয়। রুমের দাবি, তাঁর দাদার মৃত্যু নিয়ে ‘লাভ জেহাদ’-এর যে কথা বলা হচ্ছে, তা রটনা। স্ত্রী-ও বলেন, স্বামীর নামে চক্রান্ত করে নানা কথা রটানো হচ্ছে। বাড়িতে বৃদ্ধা মা ও তিন মেয়ে। তিনি অন্য কোথাও বিয়ে করেননি। খুনের পিছনে ব্যবসা সংক্রান্ত ঘটনা থাকতে পারে। একই দাবি তিন মেয়েরও।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দা ও প্রাক্তন প্রধানের স্বামী একরামুল শেখ বলেন, ‘‘আফরাজুল কয়েক মাস পরপরই বাড়িতে আসে। সে অন্য কোথাও বিয়ে করেছে বলে শুনিনি। তা ছাড়া তার নিজের ভাই ও এলাকার আরও অনেকেই সেখানে থাকে। ওই ঘটনা হলে সকলেই জানত। অন্য কোনও কারণে তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।’’ এ দিন শেখপাড়ার বাড়িতে সমবেদনা জানাতে গিয়ে সিপিএমের মালদহ জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, সাম্প্রদায়িক তকমা লাগিয়ে এই ঘটনাকে অন্য দিকে মোড় দেওয়ার রাজনীতি হচ্ছে। আর সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াতেই ভিডিও ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রচার করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন