গৃহবন্দি রাজীব, সিবিআই ডাকলেই যেতে হবে

বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে শুনানির সময় রাজীব নিজে হাজির ছিলেন না। তাঁর আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্রকে বিচারপতি সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনার মক্কেল কি ধর্নায় ছিলেন?’’ আইনজীবী জানান, তিনি ছিলেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:৪৩
Share:

রাজীব কুমার। ফাইল চিত্র।

গ্রেফতার নয় ১০ জুলাই পর্যন্ত। তার আগে আইপিএস রাজীব কুমারকে কার্যত ‘গৃহবন্দি’ থাকার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

উচ্চ আদালতের বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজন এবং সিবিআইয়ের তলব ছাড়া কলকাতার প্রাক্তন এই পুলিশ কমিশনার বাড়ি ছেড়ে আপাতত কোথাও যেতে পারবেন না। অফিসেও না। এর অর্থ, তাঁকে সারা দিন বাড়িতেই থাকতে হবে। এত দিন যে-জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব তিনি এড়িয়ে যাচ্ছিলেন, তা-ও আর সম্ভব হবে না। যে-কোনও সময় সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাতে পারে এবং সে-ক্ষেত্রে তাঁকে হাজির হতেই হবে।

বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে শুনানির সময় রাজীব নিজে হাজির ছিলেন না। তাঁর আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্রকে বিচারপতি সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনার মক্কেল কি ধর্নায় ছিলেন?’’ আইনজীবী জানান, তিনি ছিলেন না।

Advertisement

অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার তছরুপের মামলায় প্রচুর নথি নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে রাজীবের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ রয়েছে আইপিএস অফিসার, বিধাননগরের প্রাক্তন গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষের বিরুদ্ধেও। বুধবারের মতো এ দিনও সল্টলেকে সকাল থেকে অর্ণবকে জেরা করে সিবিআই। দুপুরে সল্টলেকের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা থেকে দুই ট্রাঙ্ক-ভর্তি নথি এসে পৌঁছয় সিবিআই দফতরে। প্রশ্ন ওঠে, এত নথি এর আগে সিবিআই-কে দেওয়া হয়নি কেন? বেরোনোর সময় তার উত্তর দিতে চাননি অর্ণব। সিবিআই জানিয়েছে, প্রয়োজনে অর্ণবকে আবার ডাকা হতে পারে।

রাজীবকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল সিবিআই। ২৬ মে তাঁকে নোটিসও দেওয়া হয়। সেই তলবি নোটিসকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই এ দিন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাজীব। বিচারপতির নির্দেশ: জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআই ডেকে পাঠালে রাজীবকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রশ্ন না-এড়িয়ে দিতে হবে উত্তরও। জেরার সময় তাঁর সঙ্গে কোনও আইনজীবী থাকতে পারবেন না। প্রতিদিন বিকেল ৪টেয় রাজীবের কলকাতার ঠিকানায় সিবিআইয়ের এক অফিসার গিয়ে কলকাতায় থাকার ব্যাপারে তাঁর ‘হাজিরা’ নথিভুক্ত করিয়ে আনবেন।

অর্ণব ঘোষ

বিচারপতি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, এই মামলার নিষ্পত্তির আগে রাজীবকে যেন কলকাতার বাইরে কোনও সরকারি কাজে পাঠানো না-হয়। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন রাজীবকে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই সারদা মামলার তদন্তে সিবিআই-কে বাধা দেওয়া যাবে না। কারও নজর এড়িয়ে তিনি যাতে দেশের বাইরে যেতে না-পারেন, সেই জন্য সিবিআইয়ের কাছে তাঁকে নিজের পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে।

নির্বাচনের আগে দিল্লিতে বদলি করা হয়েছিল রাজীবকে। নির্বাচনী আচরণবিধি শেষ হওয়ার পরে আবার তাঁকে এডিজি (সিআইডি) পদে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি কোথায় থাকছেন, কোথায় অফিস করছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এ দিন হাইকোর্টে সুদীপ্তবাবু জানান, রাজীব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এখন তিনি এডিজি (সিআইডি) পদেই রয়েছেন।

সুদীপ্তবাবুর দাবি, সিবিআই রাজীবকে সারদা সংক্রান্ত কোনও মামলায় সাক্ষী না-করলেও সাক্ষী হিসেবেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। সারদা মামলায় সিবিআই এখনও পর্যন্ত যে-সাতটি চার্জশিট পেশ করেছে, তার কোনওতেই তিনি অভিযুক্ত বা সাক্ষী নন। রাজীবকে দিয়ে কিছু বলিয়ে নিতে পারে না সিবিআই। তাই ওই তলবি নোটিস বৈধ নয়। নোটিস খারিজ করার জন্য আদালতে আবেদন জানান কৌঁসুলি। তিনি জানান, এর আগে রাজীবকে শিলংয়ে ডেকে দীর্ঘ ৩৯ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তিনি তাদের তদন্তে সহযোগিতা করেননি, এমন নয়।

সিবিআই কৌঁসুলি ইয়েডেজার্ড জাহাঙ্গির দস্তুর এ দিন আদালতে সারদার একটি ডায়েরির প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি জানান, সারদা-কাণ্ডে কাকে কত নগদ টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল। মামলার একাধিক সাক্ষী ওই ডায়েরির কথা বলেছেন। রাজীব ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্ত দলের প্রতিদিনের কাজকর্ম তদারক করতেন। অথচ জিজ্ঞাসাবাদের সময় বলছেন, ওই ডায়েরির বিন্দুবিসর্গ তিনি জানেন না। সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে রাজীবকে। শিলং ছাড়া কোথাও যাননি। সেখানে গিয়েও বহু প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। তদন্তে কোনও সহযোগিতাই তিনি করেননি।

রাজীবকে ৪ জুনের মধ্যে তাঁর বক্তব্য অতিরিক্ত হলফনামা-সহ পেশ করতে হবে বলেও বিচারপতি জানিয়ে দেন। গরমের ছুটির পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১২ জুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন