বর্ষা এলেই কপালে ভাঁজ পড়ে রাজনগরের পূজাদের

নদীর ধারে তাদের বাড়ি নয়। ঘুমের মধ্যে নদীতে ধসে যায় না ভিটে-মাটিও। তবু, বর্ষাকাল এলেই, চোখে জল আসে রাজনগরের গামরাকুণ্ড গ্রামের সোমনাথ দাস, পূজা মাল, টিয়া দাসদের। জল কেন? কেন না, বর্ষা মানেই ভরা নদী পেরিয়ে স্কুল যেতে হয়। নদী পেরিয়েই চলে রেশন দোকানে যাওয়া, চাষ-আবাদ। এবারও বর্ষার শুরুতেই কপালে ভাঁজ এলাকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাজনগর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০১:০১
Share:

নদীর ধারে তাদের বাড়ি নয়। ঘুমের মধ্যে নদীতে ধসে যায় না ভিটে-মাটিও। তবু, বর্ষাকাল এলেই, চোখে জল আসে রাজনগরের গামরাকুণ্ড গ্রামের সোমনাথ দাস, পূজা মাল, টিয়া দাসদের। জল কেন? কেন না, বর্ষা মানেই ভরা নদী পেরিয়ে স্কুল যেতে হয়। নদী পেরিয়েই চলে রেশন দোকানে যাওয়া, চাষ-আবাদ।
এবারও বর্ষার শুরুতেই কপালে ভাঁজ এলাকার। দিন কয়েক আগে গামরকুণ্ডুর এড়িয়ে কাঁটাশোলা সেতু দিয়ে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী হরিপুর গ্রামে গিয়েছিলেন একটি সরকারি প্রকল্প উদ্বোধন করতে। সেতুর প্রসঙ্গ উঠতেই বিষয়টি জেনে রাজনগরের বিডিও দীনেশ মিশ্রের উপস্থিতিতে সভাপতি সুকুমার সাধুকে দেখতে বলেন। বলেন, ‘‘ওই নদীর উপর কজওয়ে বানানোর এস্টিমেট কী জেলাপরিষদে জমা পড়েছে কি না দেখছি। না পড়ে থাকলে তা দ্রুত তা জামা দিন। বিষয়টি আমি দেখছি।’’
বর্ষা এলে নিজেদের যে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়, তার কথা বলছিলেন সোমনাথ, পূজারা। ‘‘এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষের নদী পেরিয়ে যেতে হয়। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সবাই প্রায় সিউড়ির লাঙুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের পড়ুয়া। অন্য ব্লকে স্কুলটি থাকলেও, বাড়ি থেকে দূরত্ব মাত্র চার কিমি। বর্ষাকাল এলেই দুর্ভাবনায় পড়তে হয়, কারণ যাওয়ার পথে কূশকর্ণিকা নদী পেরোতে হয়। সেতু না থাকায় বর্ষাকালে সেই নদীই স্কুল যাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisement

জানা গেল, স্কুলে যেতে চাইলে অন্য একটি বিকল্প রাস্তা রয়েছে। তবে, গনেশপুর কাঁটাশোলা হয়ে সেই রাস্তার ক্ষেত্রে স্কুল পৌঁছতে হলে আরও ৭ কিমি বেশি ঘুরে যেতে হয়। অসুবিধায় শুধু তাদের মতো ছাত্র-ছাত্রীরাই নয়, নদী পেরিয়ে কাজে যেতে সমস্যায় পড়েন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। নদীর এপারে থাকা রাজনগরের চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের গামারকুণ্ডু, সাজিনা আর ওপারে থাকা হরিপুর, রামডাঙা, কুমপুমা, কেষ্টপুরের মতো বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যা একটাই, বর্ষায় ভরা নদী পার হওয়া। কেউ জমিতে চাষ করবেন, কেউ রেশন দোকানে যাবেন, কেউ বা কর্মক্ষেত্রে, পঞ্চায়েত ব্লকে, সকলেই বিপাকে পড়েন গোটা বর্ষাকাল। বৃষ্টি শুরু হতেই, তার মধ্যেই নদীতে মাঝখান দিয়ে যাওয়া রাস্তা জলে ডুবে গিয়েছে। একরকম জলবন্দি হয়ে তুমুল অসুবিধায় পড়েছেন স্থানীয়রা।

অথচ এই অসুবিধাই অন্তত আট বছর আগেই মিটে যাওয়ার কথা ছিল। ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দ্রপুর থেকে কূশকর্ণিকা নদী পেরিয়ে হরিপুর ৯ কিমি ১২১ মিটার রাস্তা গত ১০ বছর আগেই প্রধান মন্ত্রী সড়ক যোজনায় ধরা হয়েছিল। ২০০৬ সালে রাস্তার কাজ শুরু হয়ে, বছর দুয়েকের মধ্যে তা শেষও হয়। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে গামরকুণ্ডু গ্রাম পর্যন্ত এসে দু’কিমি আগেই শেষ হয়ে যায় রাস্তার কাজ। বরাদ্দে ঘাটতি, না অন্য কোনও সমস্যা সেটা স্থানীয় বাসিন্দারা বলতে পারেননি।

Advertisement

হরিপুর গ্রামের যুবক তাপস রায়, বনকর্মী রামকুমার মাজি, বধূ পূর্ণিমা ভাণ্ডারী বা কুমকুমার কৃষিজীবী বৃন্দাবন মণ্ডল, সুধাময় ঘোষ, গামাককুণ্ড গ্রামের অজিত মণ্ডল, গোবিন্দ পাতররা বলছেন, বর্ষাকাল জুড়ে অত্যন্ত অসুবিধায় পড়তে হয় তাঁদের। অথচ ছোট্ট একটা কজওয়ে তৈরি হলেই সমস্যা মিটত। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, না বাম আমলে না তৃণমূলের আমলে সেতুটি তৈরি করার ক্ষেত্রে আন্তরিকতা দেখায়নি কেউ-ই।

দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেশি ছিল। তবে, কাঁটাশোলার কাছে একটি কাঁদরের উপর দীর্ঘ দিন ধরে ভাঙে পড়ে থাকা সেতুটি সম্প্রতি নতুন করে তৈরি হয়েছে। তাই ৭ কিমি বেশি ঘুরেও যাতায়াত করতে পারা যাবে। ঘটনা হল, এলাকাবাসী ওই নদীর উপর কজওয়ে বা ভাসাপুলের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। এখনও তা মেটেনি। এতদিন ওই সেতু তৈরির উদ্যোগ বা উপযুক্ত জায়গায় দরবার কেন হয়নি?

রাজনগরের তৃণমূল সভাপতি সুকুমার সাধু বলেন, ‘‘যখন রাস্তাটি অর্ধসমাপ্ত ছিল, বহু দরবার হয়েছে। কাজ হয়নি। ক্ষমতায় আসার পরে দেখি রাজনগরে বেশ কয়েকটি অসুবিধা রয়েছে। অন্য সমস্যার জন্যও টাকা বরাদ্দ হচ্ছে, তাই ওই সেতুটির জন্য জেলাপরিষদে চাপ দিতে পারিনি’’

জেলাশাসকের আশ্বাসে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন এলাকাবাসী। তাঁরা বলছেন, খোদ জেলাশাসক যদি বিষয়টি দেখেন তাহলে হয়তো অসুবিধা ঘুচবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন