CBI

Rampurhat Clash: দুষ্কৃতীদের বেশির ভাগই স্থানীয়, হামলা চালায় ৮০ জন, বগটুইয়ে শুনল সিবিআই

গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ কথা শুনে সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা জানতে চান, এ ভাবে বাড়ি জ্বালানোর মূল কারণ কী? বেশিরভাগ গ্রামবাসীই জানান, নিহত ভাদু শেখ আর সোনা শেখের বাড়ি একই পাড়ায়।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২ ০৬:৪১
Share:

নমুনা সংগ্রহের জন্য সিবিআইয়ের তত্ত্বাবধানে বগটুই গ্রামে পোড়া বাড়ি পরিষ্কারের কাজ চলছে। রবিবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

কী ভাবে সোমবার রাতে হত্যালীলা চলল, তদন্তের দ্বিতীয় দিনে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের বাসিন্দাদের থেকে তা শুনলেন সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরেই এই তাণ্ডব চলেছিল কি না, তা-ও খোঁজ নিলেন তাঁরা। রবিবার সিবিআই-সঙ্গী, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) দল ঘটনাস্থল থেকে শাবল ও ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করেছে। সূত্রের খবর, খুনের আগে ওই অস্ত্র ব্যবহার হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা।

Advertisement

রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ সিএফএসএলের দল বগটুইয়ে আসে। তার ১০ মিনিট পরে সিবিআইয়ের দল পৌঁছয়। গাড়ি থেকে নেমে গ্রামের ইদগাহ মোড়ে পরপর চারটে অগ্নিদগ্ধ বাড়ি দেখেন আধিকারিকেরা। সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁরা একান্তে কয়েক জন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথাও বলেন। একাধিক গ্রামবাসী তাঁদের কাছে দাবি করেন, ভয়ানক কিছু একটা ঘটতে চলেছে সেটা আঁচ করতে পারলেও তা যে এমন নারকীয় হবে, তাঁরা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি।

এ দিন গ্রামে সিবিআই আধিকারিক ও গ্রামবাসীদের কথোপকথন থেকে জানা গেল, অন্তত ৭০-৮০ জন দুষ্কৃতী দল বেঁধে এসে প্রথমে ইদগাহের পাশের গলিতে চারটি বাড়িতে আগুন দেয়। গ্রামবাসীরা জানান, এক প্রতিবন্ধী যুবকও হামলাকারীদের হাতে আক্রান্ত হন। গ্রামের এক ছাগল ব্যবসায়ীর সঙ্গে রাজনীতির সংস্পর্শ না থাকলেও তাঁর পরিবারও আক্রান্ত হয়। সিবিআইয়ের কাছে বাসিন্দারা জানিয়ে দেন, দুষ্কৃতীদের বেশির ভাগই স্থানীয়। সিবিআইয়ের দাবি, স্বজনহারাদের অভিযোগ, শাবল, কুড়ুল দিয়ে কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালানো হয়েছিল। মারধর করে আধমরা করার পরে ঘরের মধ্যে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা অভিযোগ জানান। শনিবার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীনদের এক প্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। ওই দিনের ঘটনার অধিকাংশ বিবরণ তাঁদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি।

Advertisement

এ দিন গ্রামে সিবিআইয়ের কাছে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাড়িতে আগুন দেওয়ার পরে দুষ্কৃতীরা ইদগাহ মোড়ে এসে ফের তাণ্ডব শুরু করে। তখন রাত আন্দাজ সাড়ে ৯টা। বাসিন্দারা জানান, রাস্তার উপর বোমাবাজি করতে করতে গ্রামের ভিতরে এগিয়ে যায় দুষ্কৃতীদের দলটি। কিছুটা যাওয়ার পরে তিনটি দলে দুষ্কৃতীরা ভাগ হয়ে যায়। দু’টি দল রাস্তার ডান ও বাঁ দিকের মাঠে নেমে পড়ে। আর একটি দল রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যায়। গ্রামবাসীরা সিবিআইকে জানান, ওই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই সন্ধে নাগাদ গ্রামে আসেন বানিরুল শেখের মেয়ে ও জামাই। তাঁরা রাস্তাতেই ঘুরছিলেন। পরিস্থিতি ভাল নয় দেখে সোনা শেখের পাকা বাড়ির ভিতর একটি ঘরে দরজা বন্ধ করে ওই দু’জন-সহ সাত জনকে রেখে দিয়ে গিয়েছিলেন পরিজনেরা। গ্রামের অনেকে জানালেন, পরিজনেরা ভেবেছিলেন, দুষ্কৃতীরা বাড়ির চার দিকে বোমা ছুড়লেও পাকা বাড়ির ভিতর ঢুকবে না। তবে পর দিন সকালে ওই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় সাত জনের দগ্ধ দেহ।

গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ কথা শুনে সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা জানতে চান, এ ভাবে বাড়ি জ্বালানোর মূল কারণ কী? বেশিরভাগ গ্রামবাসীই জানান, নিহত ভাদু শেখ আর সোনা শেখের বাড়ি একই পাড়ায়।

২০১৮ সালে ভাদু উপপ্রধান হয়ে গ্রামে ঢোকার মুখে বাড়ি করে চলে আসেন। তারপর থেকে ক্ষমতার বিস্তার নিয়ে দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ইদগাহ মোড়ে যে সব বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তারা সোনার আত্মীয় বলে সিবিআইকে জানান গ্রামবাসীরা। তবে দুষ্কৃতীরা ওই বাড়িতে ঢুকেছিল কি না বা ঢুকলেও কী ভাবে ঢুকেছিল তা এ দিন জানাতে পারেননি ওই বাসিন্দারা। সিবিআইয়ের কাছে তাঁরা দাবি করেন, সোনা শেখের ওই বাড়ি থেকে তাঁদের বাড়ি প্রায় ৭০০ মিটার দূরে হওয়ায় এবং তাঁরা নিজেরাও ঘরের ভিতরে থাকায় তা বুঝতে পারেননি।

এ দিনও সকাল থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা সোনা শেখের বাড়ি-সহ পরপর তিনটি পুড়ে যাওয়া বাড়িতে সিএফএসএল নমুনা সংগ্রহের অভিযান চালায়। সোনার বাড়ি থেকে শাবল, হাঁসুয়া উদ্ধার করেছে। ওই বাড়ি থেকেই লোহার রড, লোহার জাল, বিদ্যুতের তার বাজেয়াপ্ত করেছে তারা। বেশ কয়েক বার ওই বাড়ির ছাদে গিয়েও পর্যবেক্ষণ চালায় সিএফএসএলের দল। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “গ্রামের দিকে অনেক বাড়িতেই শাবল বা হাঁসুয়ার মতো জিনিস থাকে। এখানে ওই সব জিনিস খুনের আগে ব্যবহার হয়েছিল কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।” আর একটি বাড়ি থেকে পুড়ে যাওয়া দু’টি মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সোনা ও বানিরুলের বাড়ির পোড়া অংশ থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছে সিএফএসএল। বাড়ির শৌচাগার, গোয়ালঘর থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তল্লাশি করা হয় বাড়ির বাইরে গিয়েও। কয়েকটি জায়গায় লাল রঙের রক্তের ছোপ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।

এ দিন দুপুরে সিবিআইয়ের ডিআইজি অখিলেশ সিংহ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বগটুই গ্রামের অগ্নিদগ্ধ এক নাবালক ও তিন মহিলাকে দেখতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি চিকিৎসাধীন মহিলাদের সঙ্গে কথাও বলেন। হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাস জানান, সিবিআই আধিকারিকেরা বগটুই গ্রামের চিকিৎসাধীনদের সঙ্গে কথা বলে বয়ান নথিভুক্ত করেছেন। এর পরে জাতীয় সড়কের ধারে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অতিথিশালায় অস্থায়ী শিবিরে গিয়ে ওই আধিকারিকেরা ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

(সহ প্রতিবেদন: অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় ও শুভাশিস ঘটক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন