আপাতত দিন দশেক স্কুলবাস ও স্কুলগাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রাখছে সরকার। তবে পড়ুয়াদের সুরক্ষার স্বার্থে গাড়িগুলির বেহাল দশার ক্ষেত্রে কোনও রকম আপসের পথে হাঁটতে রাজি নয় পরিবহণ দফতর। চাকায় বা রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি থাকলে এই দশ দিনের মধ্যেও প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বাস বা গাড়িকে আটক করা হতে পারে। এ ক’দিনে ছাড় পাবে শুধু নথিপত্র সংক্রান্ত গাফিলতি। বুধবার বৈঠকে পরিবহণকর্তাদের এমনই নরমে-গরমে চলার নির্দেশ দিলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
২৪ জুন থেকে পরপর কয়েকটি স্কুলবাস এবং স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পরেই নড়েচড়ে বসে সরকার। পুলিশ রিপোর্ট দেয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কারণ গাড়ির উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। এর পরেই পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের কর্মীদের নিয়ে গড়া পাঁচটি দল কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় স্কুলগাড়ি এবং বাসের অনিয়ম ধরতে ব্যাপক হারে ধরপাকড় শুরু করে। এ দিকে, সরকারের নজরদারি কড়া হতেই বেঁকে বসে স্কুলবাস ও স্কুলগাড়ির মালিকদের একাংশ। বুধবার রাস্তায় গাড়ি না-নামিয়ে সরকারকে পাল্টা চাপ দেওয়ার পথে হাঁটেন তাঁরা। যার জেরে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েন অভিভাবকেরা।
এর পরেই বুধবার সন্ধ্যায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পরিবহণ-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী। পরপর কয়েক দিন সরকারের কড়া নজরদারির পরেই যে মালিকেরা বেঁকে বসেছেন, সে কথা মন্ত্রীকে জানান ওই কর্তারা। এর পরেই এমন নির্দেশ দিয়েছেন শুভেন্দুবাবু। তবে একইসঙ্গে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত দিন দশেক অভিযান বন্ধ রাখবে সরকার। তার মধ্যে যদি গাড়ি বা বাসমালিকেরা চাকা মসৃণ হয়ে যাওয়ার মতো নিরাপত্তার প্রশ্নে উদাসীন থেকে যান, তা হলে সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট গাড়িগুলি আটক করা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
তবে যে সব গাড়ির কাছে পর্যাপ্ত আইনি কাগজপত্র নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে সরকার খানিকটা নরম মনোভাব নেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই মালিকেরা যাতে সহজে নিজেদের গাড়িকে আইনি করে নিতে পারেন, সে ব্যাপারেও পরিবহণ দফতর তাঁদের সাহায্য করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক পরিবহণ কর্তা বলেন, ‘‘শিশুরা নিয়মিত যে সব গাড়িতে চেপে স্কুলে যায়, তার নিরাপত্তা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। সুরক্ষা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। কাজেই বাকি বিষয় প্রয়োজনীয় হলেও তা নিয়ে অযথা কড়াকড়ি করার পক্ষপাতী নয় পরিবহণ দফতর।’’
স্কুলগাড়ি ও স্কুলবাসের কাগজপত্র নিয়ে কড়াকড়ি শুরুর পরে গাড়ি ও বাসমালিকদের অভিযোগ ছিল, সরকারের নিয়ম বেশ জটিল। তা মানতে গেলে লোকসান হবে তাঁদের। স্কুলগাড়ি সর্বাধিক তিনটি জেলায় চলার পারমিট পায়। একই পরিমাণ কর দিয়ে বাণিজ্যিক গাড়ি দার্জিলিং ছাড়া রাজ্যের সব জেলায় চালাতে পারে। শুধু স্কুলগাড়ির ছাড়পত্র থাকলে তাকে আর অন্য কোথাও ভাড়া খাটানো যায় না। ফলে স্কুলে লম্বা ছুটি থাকার সময়ে গাড়ি কার্যত বসিয়ে রাখতে হয়। এই কারণেই অনেকে বাণিজ্যিক গাড়ির ছাড়পত্র নিয়ে স্কুলগাড়ি চালাচ্ছেন। পরিবহণ দফতরের ওই কর্তা বলেন, এ ক্ষেত্রে মালিকদের কথাতেও কিছু যুক্তি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আইনের মধ্যে থেকে স্কুলগাড়িগুলিকে ছুটির সময়ে বা অন্য সময়ে বাণিজ্যিক ভাবে চালাতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। তবে একইসঙ্গে পরিবহণ দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, স্কুলগাড়ি বা বাসের মালিকদের নানা সুবিধা দিতে সরকারের আপত্তি নেই। কিন্তু তা দেওয়া হবে একটাই শর্তে— কোনও অবস্থাতেই সুরক্ষার প্রশ্নে আপস করা যাবে না।