ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের। —নিজস্ব চিত্র।
প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ থেকে শিলিগুড়ি শহরকে মুক্ত রাখতে পুরসভার ব্যর্থতা নিয়ে দলকে আন্দোলনে নামতে বললেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের হলঘরে দলীয় সভায় এ কথা জানিয়েছেন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনে দার্জিলিং জেলায় একটিও আসন না জেতায় দলের কাছে তাদের যে মাথা ‘হেঁট’ হয়ে গিয়েছে, তা তুলে ধরেই সভায় মন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এ ভাবে চললে হবে না। ঘুরে দাঁড়াতে প্রতি মাসে লাগাতার আন্দোলন করতে হবে। শহর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখতে পারছে না পুরসভা। অন্য পরিষেবাও মিলছে না নাগরিকদের। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের মতো বিষয়গুলি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করতে হবে। দেখবেন এক দেড় মাস পরে অশোক ভট্টাচার্য শুধু মাত্র বিধায়ক থাকবেন।’’
পুরভোটে তৃণমূলকে পর্যুদস্ত হতে হয়েছে অশোকবাবুদের কাছে। তারপর মহকুমা পরিষদের ভোটেও। ফের শিলিগুড়ি আসনে বিধানসভা ভোটেও জিতেছেন মেয়র অশোকবাবু। দলের একটি সূত্রই জানিয়েছে, অশোকবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া পরাজয়ে পরে দলনেত্র্রীর কাছে দলের স্থানীয় একাংশ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন। তাই অশোকবাবুদের হারাতে না পারলে হারানো গৌরব যে উদ্ধার করা যাবে না, তা বুঝেই এ দিন মন্ত্রী ওই নির্দেশ দেন বলে দলের একাংশ মনে করছেন।
সম্প্রতি বাজেট পুস্তিকায় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিয়ে তাদের কিছু দুর্বলতা রয়েছে, তা স্বীকারও করেছেন অশোকবাবু। সে কারণেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ফেরাতে যে চক্র কাজ করছে, তাদের সঙ্গে আঁতাত রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। ‘শিলিগুড়ি প্লাস্টিক মুক্ত শহর’—এই সুনাম ক্ষুণ্ণ হলে তার দায় মেয়রকেই নিতে হবে বলে তাঁরা সরব হন। তা নিয়েই আন্দোলনে নামতে চান তাঁরা। এ দিন অশোকবাবুও স্বীকার করেন, ‘‘আমাদের ওই ব্যাপারে কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। তাই বলে বসে নেই। আমরাও চেষ্টা করছি। তৃণমূল তা নিয়ে বলছে। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তাঁরা। সল্টলেক, কলকাতাতে তাঁরা প্লাস্টিক বন্ধ করতে পারেনি।’’ অশোকবাবুর ওই বক্তব্য অবশ্য মেনে নিতে রাজি নয় কংগ্রেসও। কংগ্রেসের বোর্ডের সময় যাঁর নেতৃত্ব এই সাফল্য মিলেছিল, তিনি এখন ৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুজয় ঘটক। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘অতীতে বাম জমানায় অশোকবাবুরাই আইন করেছিলেন। কিন্তু তা লাগু করতে পারেনি। আমরা ২০০৯ সালে পুরসভায় এসে তা কার্যকর করেছি। তাতে শিলিগুড়ি রাজ্যের বাইরেও সম্মান পেয়েছে। এর সঙ্গে শহরবাসীর সুনাম জড়িয়ে রয়েছে। আমরা যখন ওই কাজ করেছিলাম। তৃণমূল, সিপিএম কাউন্সিলররাও সঙ্গ দিয়েছিলেন। তাঁরাও প্রশংসা করেছিল। এখনও তাদেরই বোর্ড। মানুষ মেয়রকে সেই দায়িত্ব দিয়েছে। সকলেই যখন চাইছে, তখন তিনি কেন পারছেন না? এর পিছনে রহস্য কী তা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই?’’
সুজয়বাবুর দাবি, শহরের মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন। অথচ মেয়র মানুষকে সচেতন করার কথা বলে কেন হাত গুটিতে বসে রয়েছেন? এমনকী শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখতে মানুষের দাবি নিয়ে তৃণমূল বা অন্য রাজনৈতিক দল বোর্ডে সরব হলে তাকে কংগ্রেস কাউন্সিলররা সমর্থন করবে বলেও সুজয়বাবু জানিয়েছেন। তাঁরাও দ্রুত আন্দোলনে নামার কথা জানিয়েছেন।
তৃণমূলের আন্দোলন করা নিয়ে অশোকবাবু মনে করেন, আন্দোলন সকলেরই অধিকার। তবে আন্দোলনের নামে ঘেরাও করা, কাজ করতে না দেওয়ার চেষ্টা হলে সেটা ঠিক নয়। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যে বিধানসভা ভোটে আমাদের পরাজয় আমরা মেনে নিয়েছি। ঠিক তেমনি গৌতমবাবুদের উচিত শিলিগুড়ি পুর নির্বাচনে, মহকুমা পরিষদের ভোটে তাঁদের পরাজয় মেনে নেওয়া।’’ এ দিন সভায় মহকুমা স্তরের নেতাদের বৈঠকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন পর্যটনমন্ত্রী। তাঁর কথায়, কলকাতায় গেলে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে তাঁদের মাথা নিচু করে চলতে হচ্ছে। একই পরিস্থিতি মালদহের। তাতে নিজেদের আত্মবিশ্বাসও তলানিতে চলে গিয়েছে। ২১ জুলাই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শিলিগুড়ি থেকে দলের যাঁরাই কলকাতা যাবেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কলকাতায় গেলে মাথা নিচু করেই যেতে হবে। আমাদের খুব লজ্জিত ভাবে, সঙ্কুচিত ভাবে চলতে হয়। তাতে আত্মবিশ্বাস নীচের দিকে চলে যাচ্ছে।’’ ২১ জুলাই কলকাতায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে সভা হলেও সে কারণে ওই বৈঠক থেকেই নেতা, কর্মীদের আন্দোলনে নেমে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে চেয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী। কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি জানিয়েছেন, মহকুমা পরিষদে, পুরসভায় ঘেরাও আন্দোলন করতে হবে। পার্টি অফিস নিয়মিত খুলতে হবে। সেখানে নেতা, কর্মী সকলকে যেতে হবে। দলের আইনজীবী সেল রয়েছে। কিন্তু শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনে প্রতি বছর হারতে হচ্ছে। এটা মানা যায় না। নেতৃত্ব বদল করা হবে।
১৫ অগস্টের মধ্যে জেলা কমিটি, ব্লক, অঞ্চল, ওয়ার্ড কমিটি গঠনের উপর জোর দিতে বলেন তিনি। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভার মধ্যে পুরসভার ১৪ টি ওয়ার্ড রয়েছে। ওই এলাকা-সহ মহকুমা জুড়ে বিধানসভা এলাকার ৯০০টি বুথে বুথ কমিটি পুজোর মধ্যেই ঠিক করার কথা জানান। প্রতি মাসে বৈঠক করে তারা বিভিন্ন বিষয়ে কর্মসূচি নিতে হবে বলে নির্দেশ দেন। এ দিন সভায় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের দলেরই এক কর্মী অভিযোগ তোলেন, পার্টির নাম করে কিছু নেতা-কর্মী বালি, পাথর সরবরাহের সিন্ডিকেট চালাচ্ছে বলে।