জনসভায় বিজেপি নেতা বিজয় বর্গীয় এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার গড়িয়ার শশাঙ্ক মন্ডলের তোলা ছবি।
এক সময়ে ছিল ‘ভাগ মুকুল ভাগ’! শোনা গিয়েছিল ‘ম্যায় হুঁ অমিত শাহ!’’ তার পরে ঝালমুড়ি-পর্ব এসে মাঝে সব কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল! দিদি আর মোদীর নৈকট্যের তত্ত্বে বাজার গরম করতে শুরু করেছিল সিপিএম-কংগ্রেস। এ বার ফের হুঙ্কারে ফিরল বিজেপি! এ বারের মন্ত্র— ‘আভি নহি তো কভি নহি’!
গড়িয়ায় কর্মিসভা করতে এসে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের নেতাদের কড়া আক্রমণ শানালেন এ রাজ্যে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁর ঘোষণা, কালীপুজোর পর থেকে এক দিকে তাঁদের আন্দোলনে কেঁপে উঠবে বাংলা আর অন্য দিকে রাজ্যের বেশ কিছু মন্ত্রী জেলে যাবেন। এই পথ বেয়েই ২০১৬ সালে বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের জন্য ঝাঁপাবে। আগামী বছরের বিধানসভা ভোট যাতে আধা-সামরিক বাহিনীর কড়া প্রহরায় হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন কৈলাস।
দলীয় বৈঠকের পরে এ দিন কৈলাস বলেছেন, ‘‘কালীপুজোর পরে রাজ্যের অর্ধেক মন্ত্রীই জেলে যাবেন। ওঁর (মমতা) খারাপ চেহারা সকলের সামনে আসবে!’’ কৈলাসের অভিযোগ, ‘‘ওঁর পরিবার, মন্ত্রী সকলেই দুর্নীতিতে যুক্ত!’’ দুর্নীতিতে জড়িত এমন একটি সরকারকে সরিয়ে বিধানসভা ভোটে বিজেপি-কে ক্ষমতায় আনতে দলের প্রতি কৈলাসের নির্দেশ, ‘‘কর্মীদের বলছি, তৈরি হোন। আভি নেহি তো কভি নহি!’’ ঠিক যে ভাবে ২০০১ সালে মমতা সিপিএমকে উৎখাত করতে ডাক দিয়েছিলেন, ‘‘হয় এ বার, নয় নেভার!’’ সেই ডাক অবশ্য বাস্তবে ফলেছিল ১০ বছর পরে!
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতার আহ্বানও কবে সফল হবে, তা নিয়ে এখন পাল্টা কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন শাসক তৃণমূলের নেতারা!
কৈলাসের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জবাব দিয়েছেন, ‘‘পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়! এরা এখন কী বলছে, নিজেরাই জানে না! দেশের আইন, সংবিধান বলে একটা কথা আছে। কেন্দ্রে ওদের সরকার আছে ঠিকই কিন্তু সেই জন্য দেশে আর আইন নেই নাকি?’’
শাসক দল কটাক্ষ করলেও ২০১৬-র জন্য দলকে তৈরি করতে কালীপুজোর পর থেকে লাগাতার আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আইন অমান্যের কর্মসূচি যেমন এ দিনের বৈঠকেই ঠিক হয়েছে। আন্দোলনের গতিমুখ ঠিক রাখতে ও কর্মীদের উৎসাহ দিতে কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যায়ক্রমে এ রাজ্যে আসবেন। একই ভাবে রাজ্যের নেতারা জেলায় এবং জেলার নেতারা নিয়মিত বুথ স্তরে ঘুরে ঘুরে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর কাজ করবেন। এর আগে মালদহ, হুগলি বা খড়গপুরে কৈলাসের বৈঠকেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
তৃণমূলকে হুঙ্কার এবং আন্দোলনের কৌশল ঠিক করার সময়েও রাজ্য বিজেপি-তে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব অবশ্য অব্যাহতই। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকে অপসারণের দাবিতে এ দিন গড়িয়ার সভার বাইরে অনুগামীদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখান দলের সাসপেন্ডেড নেতা জয়ন্ত বসু। কেন ওই সভায় সব ব্লক সভাপতিকে ডাকা হয়নি, সে বিষয়েও কৈলাসের কাছে অভিযোগ জানাতে চান তাঁরা। প্রথমে তাঁদের সভায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরে সভায় উপস্থিত নেতাদের হস্তক্ষেপে জয়ন্তবাবুদের কৈলাসের কাছে যেতে দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে পরে তিনি কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
রাহুলবাবুকে নিয়ে ক্ষোভের আঁচ শুধু এ দিন কলকাতাতেই ছিল না। বীরভূমের বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডল কালনায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে ফের রাহুলবাবুকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রাজ্য সভাপতির নাম করেই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘উনি তিন বারের সভাপতি। বাংলায় একটা পুরসভাও নিজের যোগ্যতায় জেতাতে পারেননি! উনি শুধু আমার প্রতি অবিচার করেননি। আমার অনুগামীদের প্রতিও ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’