মিলিয়ে দিল ধর্মতলাই!
ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়িয়েই তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, ২০১৪-য় ভাগ মদন ভাগ হবে। ২০১৫-য় হবে ভাগ মুকুল ভাগ। কথাটা বলেছিলেন ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর। আট মাস পরে ২১ জুলাইয়ের ধর্মতলায় তাঁর সেই কথাই ফলে গিয়েছে! সহাস্যে দাবি করছেন এ রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ!
কেন? রাজ্য বিজেপির দফতরে ‘মহাসম্পর্ক অভিযান’ নিয়ে বৈঠকের ফাঁকে বুধবার সিদ্ধার্থনাথের প্রশ্ন, ২৪ ঘণ্টা আগেই তৃণমূলের যে এত বড় সমাবেশ হল, সেখানে কোথায় ছিলেন মদন মিত্র? কোথায়ই বা ছিলেন মুকুল রায়? তা হলে ৮ মাস আগে তিনি ভুল কী বলেছিলেন? সে দিনের সেই মন্তব্যের শেষে ছিল ২০১৬-য় হবে
ভাগ মমতা ভাগ! ধর্মতলায় তৃণমূলের ২১শে দেখে না ঘাবড়ে সিদ্ধার্থনাথ বলছেন, ‘‘এখনও যা বলেছি, মিলে গিয়েছে। ফের বলছি ২০১৬ আসতে দিন! ভাগ মমতা ভাগও মিলবে!’’
বস্তুত, সিদ্ধার্থনাথের ওই ‘ভাগ-সিরিজে’র জন্য এখনও ঘরোয়া আলোচনায় তাঁর মুণ্ডপাত করেন রাজ্য বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের একাংশ! সিদ্ধার্থনাথ ওই মন্তব্য করার দু’সপ্তাহের মধ্যে সিবিআই মন্ত্রী মদনকে গ্রেফতার করেছিল ঠিকই। কিন্তু তার পরে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাক পেয়েও মুকুলের গ্রেফতার না হওয়া এবং আরও পরে পুরভোটে বিজেপির আশানুরূপ ফল পেতে ব্যর্থতা— এই দুইয়ে মিলে হতাশা থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতার উপরে রাগ গিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবিরের একাংশের। সেই চাপ বিলক্ষণ টের পান সিদ্ধার্থনাথ নিজেও। এমনকী, মঙ্গলবার ধর্মতলার সভায় সিদ্ধার্থনাথের নাম না করেই দুই তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও ফিরহাদ হাকিম বিজেপি নেতার সেই ‘ভাগ-মন্তব্যে’র পাল্টা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘ভাগ বিজেপি ভাগ’ করে দেখাবে বাংলার মানুষ। কিন্তু সেই সমাবেশকেই মুকুল এবং মদন-হীন দেখে সিদ্ধার্থনাথ এ বার নিজের উপরে চাপ হাল্কা করে নিলেন!
জেলবন্দি মদন এবং দিল্লিস্থিত মুকুলের অনুপস্থিতি দেখিয়ে নিজের ভবিষ্যদ্বাণীর কার্যকারিতা বোঝানোর পাশাপাশিই তৃণমূলের ২১শে-র সভার নিজস্ব বিশ্লেষণও করেছেন সিদ্ধার্থনাথ। বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপিকে এক বন্ধনীতে ফেলে বিরোধীদের
‘হ য ব র ল’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সিদ্ধার্থনাথের দাবি, তৃণমূল নেত্রী আসলে ভয় পাচ্ছেন বিজেপিকেই। তাঁর কথায়, ‘‘একমাত্র বিজেপিই রাজ্যে মমতার বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করে চলেছে। তাই তাঁর আক্রমণের নিশানায় বিজেপি।’’ আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের পরে মমতা এ রাজ্যের ‘প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী’ হয়ে যাবেন বলেও এ দিন আগাম ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি!
তবে আগামী বছর ভোটবাক্সে সিদ্ধার্থনাথের ভবিষ্যদ্বাণী ফলাতে গেলে সাংগঠনিক অগ্রগতি যেখানে নিয়ে যাওয়ার আশা ছিল বিজেপির, তার কাছাকাছি তারা এখনও পৌঁছতে পারেনি। বাংলায় বিজেপির ‘মহাসম্পর্ক অভিযানে’র অগ্রগতি নিয়ে কলকাতায় এ দিন রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করতে এসেছিলেন ওই কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনিল জৈন ও অন্যতম সহ-পর্যবেক্ষক সুরেশ পূজারী। আসার কথা থাকলেও আসেননি দলের নতুন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। দিনপনেরো আগে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ কলকাতায় এসে ‘মহাসম্পর্ক অভিযান’ নিয়ে বৈঠক করে যাওয়ার পরে এই এক পক্ষকালে ৪৩ লক্ষ নতুন সদস্যের মধ্যে ৪৩ হাজারের সঙ্গে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব ‘মহাসম্পর্ক’ স্থাপন করতে পেরেছেন। অর্থাৎ ১% কাজ এগিয়েছে! বৈঠকে এই পরিসংখ্যান পেয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে তিরস্কার না করলেও অসন্তোষ গোপন করেননি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। তবে এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘১% হলেও এই অভিযানে দেশের মধ্যে আমাদের স্থান ১২ নম্বরে। আমরা মাত্র চার দিন আগে কাজ শুরু করেছি।’’ বৈঠকের আগে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন বিজেপির দুই কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক, রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এবং বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য।