Recruitment Scam

দ্রুত নিয়োগের সান্তা-স্বপ্নেই ধর্নামঞ্চে বড়দিন

ময়দানে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বসা উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা প্রত্যাশা করছিলেন, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, অন্তত শিক্ষা দফতরের কোনও কর্তা এই শুভ দিনে সান্তা ক্লজ় হয়ে তাঁদের মঞ্চে অবতীর্ণ হবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:১৫
Share:

পথনাটকে প্রতীকী সান্তা। নিজস্ব চিত্র।

তাঁদের নিয়ে, তাঁদের দীর্ঘ আন্দোলন নিয়ে সুযোগসন্ধানী, মুনাফালোলুপ রাজনীতির টানাপড়েন কম নেই। কিন্তু তাঁরা যে নিজেদের যোগ্যতামাফিক চাকরিটুকু ছাড়া আর কিছুই চান না, সান্তা ক্লজ়ের উপহারের ধাঁচেও রাজ্য সরকার যদি সেটুকু দেয়, তা হলেও যে তাঁরা কৃতার্থ হয়ে যাবেন, বড়দিনে সেই বার্তা দিলেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর পদপ্রার্থীরা। কিন্তু দিনশেষে প্রত্যাশা পূরণের সোনালি রেখাটুকুও দেখা যায়নি, জানালেন আন্দোলনকারীরা।

Advertisement

ময়দানে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বসা উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা প্রত্যাশা করছিলেন, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, অন্তত শিক্ষা দফতরের কোনও কর্তা এই শুভ দিনে সান্তা ক্লজ় হয়ে তাঁদের মঞ্চে অবতীর্ণ হবেন। উপহার হিসেবে তাঁর ঝোলা থেকে বেরিয়ে আসবে নিয়োগপত্র! অন্তত নিয়োগের প্রতিশ্রুতিপত্র। আর সন্ধ্যা নামলে তাঁরা ঘরে ফিরে যাবেন স্বপ্নপূরণের অফুরান আনন্দ নিয়ে।

কোথায় কী! হাপিত্যেশই সার। গঙ্গাপারের নবান্ন থেকে সারা দিনে কেউ আসেনি। অগত্যা ধর্নায় বসা কর্মপ্রার্থীদেরই এক প্রতিনিধি সান্তা ক্লজ় সেজে প্রতীকী মুখ্যমন্ত্রীকে গেজেট মেনে স্কুলে খালি পদের সংখ্যা ‘আপডেট’ বা হালতামামি করে তুলে দিলেন ইন্টারভিউ নেওয়ার দাবিপত্র।

Advertisement

‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের ধর্নামঞ্চও সারা দিন আচ্ছন্ন ছিল সান্তা-স্বপ্নে। সরকারের প্রতিনিধি সান্তা হয়ে আবির্ভূত না-হোন, কর্মপ্রার্থীদের পথনাটিকায় এক প্রার্থীই সান্তা সেজে হয়ে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি। এবং সেই সান্তার ঝোলা উপচে পড়ছে স্বপ্ন-চিরকুটে, নিয়োগপত্রে। সেই সান্তা কর্মপ্রার্থীদের মধ্যে বিলিয়ে দিলেন সেই সব ‘নিয়োগপত্র’। ‘‘আমরা আশা রাখি, এক দিন মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবেই সান্তা ক্লজ়ের মতো আমাদের জীবনে আসবেন। আমাদের ডেকে দেবেন নিয়োগপত্র,’’ বললেন কিংশুক চৌধুরী নামে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মপ্রার্থী।

মাতঙ্গিনী-মূর্তির নীচের ধর্নামঞ্চ থেকে মেরেকেটে এক কিলোমিটার দূরে পার্ক স্ট্রিট। বড় দিন উপলক্ষে আলোয় ঝলমলে ওই রাজপথ তত ক্ষণে উৎসব-সরণি। বড়দিনের বিকেলে মাতঙ্গিনী-মূর্তির নীচের ধর্নামঞ্চে আর-পাঁচটা দিনের মতোই আঁধার নামল। আর চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিদিনের মতোই ধর্নাশেষে এক রাশ হতাশা নিয়ে ধরলেন বাড়ির পথ। সোমবার আবার তাঁদের ফিরে আসতে হবে এই ধর্নামঞ্চে। বড়দিনেও তাঁদের কাছে কোনও ‘বড়’ খবর আসেনি। বাড়ি ফেরার পথে হতাশা ঝরে পড়ে অবসন্ন চাকরিপ্রার্থীদের কণ্ঠে, ‘‘আমাদের অপরাধ, আমরা সাদা খাতা জমা দিইনি! তাই দিনের পর দিন আমাদের রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে। যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়েছেন, তাঁরা আনন্দে বড়দিন পালন করছেন।’’

‘‘সরস্বতী পুজো থেকে দুর্গা পুজো, লক্ষ্মী পুজো যেমন বেরঙা কেটেছে, তেমনই কাটল বড়দিন,’’ বললেন গান্ধী-মূর্তির পাদদেশে বসা নবম-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকপদ প্রার্থীরা। অভিষেক সেন নামে এক চাকরিপ্রার্থী বললেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী— কেউ কথা রাখেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন