নিজেদের দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা।
বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওঠা গাফিলতি এবং হয়রানির অভিযোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করেছে রাজ্য সরকার। সরকারি হাসপাতালগুলিকে এই কমিশনের বাইরে রাখা হবে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ বার আয়নাটা নিজেদের দিকে ঘোরাতেই অবাক স্বাস্থ্যকর্তারা। অনেক অসুখের মধ্যে সরকারি হাসপাতালের চারটি মূল অসুখ চিহ্নিত করে হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
চিকিৎসক শিবিরের একাংশ এবং সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা, দায় এড়াতে ‘রেফারেল’ বা অন্য হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাই এখন সরকারি হাসপাতালের সব থেকে বড় অসুখ। নির্বিচার রেফারে রাশ টানতে স্বাস্থ্য ভবনের দাওয়াই, রেফারেল রেজিস্ট্রিতে সমস্ত রেফার কেস কারণ-সহ নথিভুক্ত করতে হবে এবং এই বিষয়ে রিপোর্ট পাঠাতে হবে প্রতি মাসে।
জেলায় তো বটেই, কলকাতার সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগেও চিকিৎসক না-থাকা ওই ধরনের আরোগ্য নিকেতনের আরও একটা বড় রোগ। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ, প্রত্যেক চিকিৎসককে প্রতিদিন কর্মস্থলে নিজের হাজিরার বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে এসএমএস করে জানিয়ে দিতে হবে। সমস্যা শুধু তো বহির্বিভাগেই নয়। সরকারি হাসপাতালের ইন্ডোরেও প্রয়োজনে চিকিৎসকদের পাওয়া যান না বলে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের অভিযোগ। এই রোগ সারাতে হাজিরা খাতার বদলে সব জায়গায় বায়োমেট্রিক হাজিরা ব্যবস্থার দাওয়াই দেওয়া হচ্ছে।
সিনিয়র ডাক্তারদের ধারেকাছে রোগীর স্বজনদের পৌঁছতে না-দেওয়াটা সরকারি হাসপাতালের বড় ব্যাধি। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ, সিনিয়র চিকিৎসকেরা দিনে অন্তত এক বার রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করছেন কি না, সেই রিপোর্ট নিয়মিত দাখিল করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেছেন, ‘‘বারবার এই সব নির্দেশিকা হাসপাতালগুলিতে পাঠানো হয়েছে। আবার পাঠানো হল। এ বার নির্দেশিকা না-মানলে আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব বলে জানিয়ে দিয়েছি।’’
স্বাস্থ্য দফতর দাওয়াই দিলে কী হবে, সমস্যা দেখা দিয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে। আঙুলের ছাপ দিয়ে হাজিরা চালু হলেও মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদের মতো অনেক মেডিক্যাল কলেজে খাতায় সই করে হাজিরা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। নজর রাখছে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)। সংস্থার এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান অজয় কুমারের অভিযোগ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো হাসপাতালের দোষ দেখছেই না!’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জনবাবু জানান, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যাতে শুধু বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতেই হাজিরার হিসেব রাখা হয়, সেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।