দুর্গাপুরে সরানো হল প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রারকে

সরিয়ে দেওয়া হল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্তকে। তাঁকে দুর্গাপুরের সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া প্রবীরবাবুকে প্রেসিডেন্সি থেকে ‘রিলিজ’ করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দুর্গাপুর সরকারি কলেজে শিক্ষকের প্রয়োজন। তাই তাঁরা এই পদক্ষেপ করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৩
Share:

প্রবীর দাশগুপ্ত

সরিয়ে দেওয়া হল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্তকে। তাঁকে দুর্গাপুরের সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া প্রবীরবাবুকে প্রেসিডেন্সি থেকে ‘রিলিজ’ করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দুর্গাপুর সরকারি কলেজে শিক্ষকের প্রয়োজন। তাই তাঁরা এই পদক্ষেপ করেছেন। যদিও গত বছর প্রেসিডেন্সিতে বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় দ্বার-রক্ষী পাপ্পু (সন্তোষ) সিংহকে পুলিশি হেনস্থার প্রতিবাদ করার ফলেই প্রবীরবাবুকে সরে যেতে হল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত অনেকের ধারণা। তবে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ধারণা ভিত্তিহীন।

Advertisement

প্রবীরবাবু দীর্ঘদিন প্রেসিডেন্সিতে ভূতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। ২০১০ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পরে প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার পদের জন্য আবেদন জানান তিনি। সেই পদে নির্বাচিত হওয়ার পরে আগের চাকরি থেকে লিয়েন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে যোগ দেন তিনি। এক বছর পরে রেজিস্ট্রার হিসেবে তাঁকে স্থায়ী করে প্রেসিডেন্সি। তখন সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি চান ওই শিক্ষক। কিন্তু তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি বলেই সরকারি সূত্রের খবর।

প্রবীরবাবুর কথায়, “এ দিনই সন্ধ্যায় উপাচার্যের কাছে একটি ফ্যাক্স এসেছে সরকারের কাছ থেকে। তাতে বলা হয়েছে, আমাকে রিলিজ করে দিতে। সরকার আমাকে দুর্গাপুর সরকারি কলেজে বদলি করেছে। উপাচার্য তা মেনে আমাকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।” তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী রেজিস্ট্রার হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সরকার কী ভাবে বদলি করল, তা নিয়ে প্রবীরবাবুর ঘনিষ্ঠ মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে প্রবীরবাবু অবশ্য বলেন, “উপাচার্য আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে বলেছেন। সেটাই শেষ কথা। অন্য কোনও বিতর্কে আমাকে জড়াবেন না।” উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে এখন কিছুই বলব না।”

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে থাকেন রেজিস্ট্রার। যদিও প্রেসিডেন্সির মুখপাত্র সেখানকার ডিন অব স্টুডেন্টস। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজ চালানোর দায়িত্ব মূলত রেজিস্ট্রারের। প্রবীরবাবুকে ‘রিলিজ’ করার ফলে প্রেসিডেন্সিতে এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ আপাতত খালি।

কিন্তু হঠাৎ কেন সরানো হল ওই আধিকারিককে? শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, “উনি সরকারি কর্মচারী। যখন যেখানে প্রয়োজন হবে, সরকার তো তখন সেখানেই তাঁকে নিয়োগ করবে। এ নিয়ে জল্পনার কী আছে?” যদিও দুর্গাপুর সরকারি কলেজে এখন শিক্ষকের তেমন হাহাকার নেই বলেই কলেজ সূত্রের খবর। প্রেসিডেন্সি কলেজের অনেক শিক্ষককেই ওই কলেজে আগে বদলি করা হয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, পাপ্পু-কাণ্ডের খেসারতই দিতে হল প্রবীরবাবুকে। গত বছর এপ্রিলে প্রেসিডেন্সির মূল ফটকের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় পাপ্পুকে থানায় নিয়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা করে পুলিশ। পাপ্পুর সঙ্গে থানায় গিয়েছিলেন প্রবীরবাবুও। তখনই সরকারের রোষে পড়েন তিনি। আচমকা তাঁকে অন্যত্র বদলি করে তারই প্রতিশোধ নেওয়া হল বলে ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধারণা।

প্রবীরবাবুর ‘রিলিজ’-এর খবর একেবারেই অপ্রত্যাশিত বলে এ দিন প্রেসিডেন্সির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ জানিয়েছেন। এক শিক্ষকের কথায়, “দাবি আদায়ের জন্য অবস্থানকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে ওঁদের আন্দোলন প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা করেন প্রবীরবাবু। তার পরেই ওঁকে আচমকা সরিয়ে দেওয়ার খবরে আমরা স্তম্ভিত।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্সি কলেজের যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা লিয়েন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, তাঁদের অনেককেই সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। তাঁদেরও যে কোনও সময় অন্যত্র বদলি করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হবে তাঁদেরও। প্রেসিডেন্সিতে এমনিতেই অনেক শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে। তার উপর পুরনোরাও চলে গেলে পঠনপাঠনের হাল কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন