পুবালি হাওয়ায় পগার পার ‘মগ দস্যু’

তার মন ও মতি যে বিশেষ স্থির নয়, নিরন্তর পথ পরিবর্তনেই ছড়ানো রয়েছে প্রমাণ। বাংলাদেশ, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ‘মগ দস্যু’ নিম্নচাপ সোমবার ঝাড়খণ্ডে পৌঁছে যাওয়ার পরে বোঝা গেল, নিছক নিজের ইচ্ছেতেই তার এই দৌড়ঝাঁপ নয়। প্রবলতর অন্য শক্তির জব্বর ধাক্কাই তাকে এ-যাত্রা সাততাড়াতাড়ি বাংলা-ছাড়া করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

তার মন ও মতি যে বিশেষ স্থির নয়, নিরন্তর পথ পরিবর্তনেই ছড়ানো রয়েছে প্রমাণ। বাংলাদেশ, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ‘মগ দস্যু’ নিম্নচাপ সোমবার ঝাড়খণ্ডে পৌঁছে যাওয়ার পরে বোঝা গেল, নিছক নিজের ইচ্ছেতেই তার এই দৌড়ঝাঁপ নয়। প্রবলতর অন্য শক্তির জব্বর ধাক্কাই তাকে এ-যাত্রা সাততাড়াতাড়ি বাংলা-ছাড়া করেছে।

Advertisement

কী সেই অন্য শক্তি?

তার নাম পুবালি হাওয়া, জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। সক্রিয় বর্ষার টানেই মায়ানমার থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে ছুটে এসেছিল নিম্নচাপ। মাঝপথে মত ও পথ বদলে সে হঠাৎ ঢুঁ মারে বাংলাদেশে। সেখান থেকে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ দিয়ে আবার ফিরে আসে এ-পারে। তত ক্ষণে তার শক্তি কমে গিয়েছে অনেকটাই। সেই সুযোগে পিছন থেকে ছুটে আসা পুবালি হাওয়া কার্যত ধাক্কা দিয়েই তাকে বঙ্গ-ছাড়া করে দিয়েছে! বড় বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছে এ-পার বাংলাকে। উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা বলছেন, সোমবার দুপুরে ঝাড়খণ্ডে হাজির হয় মায়ানমারের ওই নিম্নচাপ। কিন্তু পুবালি হাওয়ার তাড়ায় থিতু হতে পারবে না সেখানেও। আজ, মঙ্গলবার তার মধ্য ভারতে চলে যাওয়ার কথা।

Advertisement

তবে যাওয়ার আগে বাংলাদেশে এবং দক্ষিণবঙ্গে কিছু ছাপ রেখে গিয়েছে নিম্নচাপ। ও-পার বাংলায় প্রাণহানি থেকে ঘরবাড়ি ভাঙা পর্যন্ত নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক কাণ্ড ঘটিয়েছে সে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তার প্রভাবে উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমানের কিছু জায়গায় অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারী বর্ষণ হয়েছে গাঙ্গেয় বঙ্গের অনেক জেলাতেই। প্রায় দেড় দিনের ঘ্যানঘেনে বৃষ্টি নাকাল করে ছেড়েছে কলকাতাকেও। নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদায় নেওয়ার পরে, এ দিন দুপুর থেকেই আবহাওয়ার মুখ উজ্জ্বল হতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে আগামী দিন দুয়েক বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি কমে যাবে ঝাড়খণ্ডেও।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ চিন সাগরে তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝ়ড় ‘দিয়ানমু’। ভিয়েতনামে আঘাত হেনে সে পৌঁছে যায় মায়ানমারে। সেখান থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে রওনা দিয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের দিকে। এতটা সাগরপথ পাড়ি দেওয়ার সুবাদে শক্তি বাড়ানোর সম্ভাবনা ছিল নিম্নচাপের। তা দেখেই অতিভারী বৃষ্টি এবং বানভাসি পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু শনিবার গভীর রাতে পথ বদল করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে সে। ফলে সাগরের জোলো হাওয়া শুষে শক্তি বাড়ানোর সুযোগ আর পায়নি সে। তার উপরে লাগাতার তাড়া করে গিয়েছে পুবালি হাওয়া। আবহবিদেরা এ দিন জানান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে জোরালো হাওয়া বইছে। সেই হাওয়ার দাপটেই এ রাজ্যে ঢুকে থিতু হতে পারেনি নিম্নচাপটি।

কিন্তু সেই নিম্নচাপের অস্থিরতার মধ্যেই ঘোর বিপদের ইঙ্গিত ছিল। নিম্নচাপের খবর পাওয়ার পরেই দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-এর বিরুদ্ধে জল ছাড়া নিয়ে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিসি যাতে কম জল ছাড়ে, সেই আবেদন জানিয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন রাজ্যের সেচ দফতরের কর্তারা। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীষূষ গয়াল অবশ্য এ দিন কলকাতায় বলেন, ‘‘ডিভিসি মোটেই নিজেদের মর্জিমাফিক জল ছাড়ে না। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কমিটি রয়েছে। জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারাই।’’ জল ছাড়া নিয়ে ডিভিসি-র আধিকারিকেরা এ দিন নবান্নে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং অন্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার এ দিনও ডিভিসি-কে কম জল ছাড়তে বলেছে। ডিভিসি-কর্তারা জানান, তাঁরা যথাসম্ভব কম জলই ছাড়ছেন। কেন্দ্রীয় জল কমিশনকে সব জানানো হয়েছে। কমিশন ডিভিসি-কে পাঞ্চেত থেকে পাঁচ হাজার কিউসেক কম জল ছাড়তে বলেছে। ডিভিসি মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে এ দিন বেলা পৌনে ৩টেয় ৪৯ হাজার কিউসেক এবং বিকেল সাড়ে ৪টেয় ৪৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে।

টানা বর্ষণে হাওড়া-হুগলির কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সেচ দফতরের খবর, আমতা চ্যানেলে জল বিপদসীমার উপরে বইছে। তার উপরে ডিভিসি রবিবার মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৫৪ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল। সেই জল কাল, বুধবার ভোরে আমতায় পৌঁছবে। গত কয়েক দিন ভরা কোটাল চলায় এমনিতেই নদীর জল বেশি ছিল। তার উপরে অতিবৃষ্টিতে আশপাশের খালবিলও ভরে গিয়েছে। এই অবস্থায় ডিভিসি-র ছাড়া জল এসে পৌঁছলে আমতা, খানাকুল, উদয়নারায়ণপুর, জগৎবল্লভপুরে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ‘‘ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে রাখাই আমাদের লক্ষ্য,’’ বলেছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন