যশোহর রোড

মমতা যাবেন শুনেই খন্দে প্রলেপ তড়িঘড়ি

মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার কথা। সেই সুবাদে এত দিন ফেলে রাখা রাস্তার ফাটা কপালে তুরন্ত মলম পড়ছে! যশোহর রোডের এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেট থেকে বিরাটি। সাকুল্যে চার কিলোমিটার। ভরা ‘অফিসটাইমেও’ গাড়ি চড়ে যেতে লাগে বড়জোর দশ মিনিট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩১
Share:

বেহাল যশোহর রোড। এয়ারপোর্টের কাছে। সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার কথা। সেই সুবাদে এত দিন ফেলে রাখা রাস্তার ফাটা কপালে তুরন্ত মলম পড়ছে!

Advertisement

যশোহর রোডের এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেট থেকে বিরাটি। সাকুল্যে চার কিলোমিটার। ভরা ‘অফিসটাইমেও’ গাড়ি চড়ে যেতে লাগে বড়জোর দশ মিনিট। অথচ গত ক’মাস ওটুকু পেরোতেই ঘণ্টাখানেক লেগে যাচ্ছে। রাস্তা জুড়ে গজিয়ে ওঠা বিরাট বিরাট গর্তে সৌজন্যে। যানজট সামলাতে রাত-দিন নাকের জলে-চোখের জলে হতে হচ্ছে পুলিশকে। এবং লাগাতার এমন অবস্থা দেখেও প্রশাসন এত দিন নড়েচড়ে বসেনি। কিন্তু শনিবার রাতে পূর্ত দফতর আচমকা কোমর বেঁধে গর্ত বোজাতে নেমেছে। প্রশাসনিক সূত্রের ইঙ্গিত, আজ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই রাস্তা ধরে হাবরা-অশোকনগরে যাওয়ার কথা, ঝড়-বিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য। তাঁর যাত্রা সুগম করতেই রাতারাতি এ হেন উদ্যোগ। যদিও এই মারকাটারি বর্ষার মধ্যে মেরামতি কতটা কার্যকর হবে, সে প্রশ্নও মাথা চাড়া দিয়েছে।

বিধাননগর সিটি পুলিশের ট্রাফিক কর্তারাও বলছেন, ওই রাস্তার হাল অনেক দিন ধরে খারাপ হচ্ছিল। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে পিচের আস্তরণ উঠে কার্যত পথের কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছে। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেট থেকে বিরাটি, বাঁকড়া মোড়, সুকান্তনগর মোড়, বিটি কলেজ ও মধ্যমগ্রাম চৌমাথায়। এয়ারপোর্ট থেকে বিরাটি অংশে তো রাস্তা নেই বললেই চলে। সপ্তাহখানেক আগে এক যুবক বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ মধ্যমগ্রামে বাস ধরেছিলেন। বিরাটিতে এসে জ্যামে আটকে বাস ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে ঝাড়া আধ ঘণ্টা। এয়ারপোর্ট পৌঁছান পৌনে বারোটা নাগাদ। এমনই চলছিল। শুক্রবার রাতের টানা বৃষ্টিতে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। গাড়ির সারি স্তব্ধ হয়ে যায়। পুলিশ-সূত্রের খবর: বৃষ্টির তোড়ে এয়ারপোর্ট থেকে বিরাটির মাঝে রাস্তার গর্তগুলো আরও বড় হয়ে গিয়েছে তাতে জল জমে গাড়ির গতি থমকে দেয়। রাত সাড়ে এগারোটায় দেখা যায়, ভিআইপি রোডের উপরে গাড়ির লাইন তেঘরিয়া, বাগুইআটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর যশোহর রোডে নাগেরবাজার মোড় পর্যন্ত! যাত্রীরা জানিয়েছেন, সে রাতে কৈখালি থেকে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগেছে! যে কারণে অনেকেই শনিবার ভোরের উড়ান ধরতে সময় মতো বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারেননি।

Advertisement


মধ্যমগ্রামের কাছে যশোহর রোডে চলছে মেরামতির কাজ। রবিবার সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

সূত্রের খবর, এই কাণ্ডের রেশ থাকতে থাকতেই শনিবার সকালে জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রী হাবরা-অশোকনগরে যাবেন। রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদাধিকারী এই পথ ধরে গেলে ‘ফল’ কী হতে পারে, তা ভেবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ঘোর চিন্তায় পড়ে যায়। পূর্ত দফতরের কর্তা ও শাসকদলের নেতারাও প্রমাদ গোনেন। শনিবারই বৈঠক করে স্থির হয়, তাপ্পি না-হোক, অন্তত খন্দ-পথের গর্ত বুজিয়েই আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। সেই মতো শনিবার রাতে পূর্ত-কর্মীরা ময়দানে নামেন। রবিবার ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও পূর্ত-সচিব ইন্দিবর পাণ্ডে গিয়ে মেরামতি তদারক করেছেন। দেখে-শুনে এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভাগ্যিস মুখ্যমন্ত্রী আসছেন! নয়তো কর্তাদের টনক নড়ত না।’’ ‘সরকারি ভাবে’ পূর্ত-কর্তারা এ তত্ত্ব মানতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। ‘‘রাস্তা সারাই আগেই শুরু হয়েছিল। বৃষ্টিতে মেরামতি ধুয়ে-মুছে গিয়েছে। তাই ফের শুরু হয়েছে।’’— বলেন এক পূর্ত আধিকারিক।

কিন্তু এখনও তো বর্ষা ধুন্ধুমার! তা হলে এখন এই মেরামতির মানে কী?

ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার মুখে উত্তরটা পাওয়া গিয়েছে। যাঁর মন্তব্য, ‘‘স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যাবেন। রাস্তা না-সারিয়ে উপায় কী?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন