সুন্দরবনের ধানের বিষাক্ত ক্রোমিয়াম ঝাড়বে ব্যাক্টেরিয়া

অবশেষে খোঁজ মিলল মুশকিল আসানের।ধানে বিপজ্জনক মাত্রার ক্রোমিয়াম ধরা পড়ায় সুন্দরবনের মাটিতে জন্মানো ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সেটা ২০০৯ সালের কথা। সেই থেকে সুন্দরবন এলাকার চাল আর নিচ্ছে না ইউরোপের দেশগুলি।

Advertisement

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:১৭
Share:

অবশেষে খোঁজ মিলল মুশকিল আসানের।

Advertisement

ধানে বিপজ্জনক মাত্রার ক্রোমিয়াম ধরা পড়ায় সুন্দরবনের মাটিতে জন্মানো ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সেটা ২০০৯ সালের কথা। সেই থেকে সুন্দরবন এলাকার চাল আর নিচ্ছে না ইউরোপের দেশগুলি। এতে মাথায় হাত সুন্দরবনের চাষিদের। এলাকার অন্যতম বাসিন্দা অনিল মিস্ত্রি যেমন বলছেন, এটা তাঁদের কাছে এক ভয়ানক সমস্যা।

কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব, তা নিয়ে গবেষণায় বসেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কলকাতা। পাঁচ বছরের গবেষণায় তাঁরা ওই দূষণ থেকে সুন্দরবনের ধান রক্ষার উপায় বের করে ফেলেছেন বলে দাবি দুই গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীদের।

Advertisement

‘‘এমন এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া আমরা খুঁজে পেয়েছি যা মাটির ক্রেমিয়ামের দূষণ কমিয়ে দিচ্ছে অনেকটাই’’— দাবি গবেষক দলের অন্যতম, স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের অধিকর্তা তড়িৎ রায়চৌধুরীর। বায়োরেমিডিয়েশন জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ওই ‘মুশকিল আসান ব্যাক্টেরিয়া’ উদ্ভাবনের গবেষণাপত্রটি। স্টেফাইলোকক্কাস স্কিউরি নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া কী ভাবে মাটির ক্রোমিয়ামকে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর রাসায়নিকে পরিবর্তিত করে ধানে ক্রোমিয়ামের দূষণ হ্রাস করে— তা ওই গবেষণাপত্রে ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য, স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অধিকর্তা আশিস ঘোষ জানাচ্ছেন, ওই ব্যাক্টেরিয়াটি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশেই পাওয়া যায়। তা বাইরে থেকে আনতে হয় না কিংবা গবেষণাগারে তৈরি করতে হয় না।

আরও পড়ুন: চুড়ি-খেলনা আর এল না, শোকে গ্রাম

আর্সেনিকের মতো ক্রোমিয়ামও কার্সিনোজেনিক। অর্থাৎ, দেহে ওই ক্ষতিকর রাসায়ানিক বিপজ্জনক পরিমাণে জমা হলে তা ক্যানসারের কারণ হতে পারে। এই কারণ দেখিয়েই সুন্দরবনের ধানের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ইইউ। গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়েছে, কলকাতার উপকণ্ঠে যে সব চামড়া কারখানা রয়েছে তাদের বর্জ্যের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ক্রোমিয়াম মিশে থাকে। নদীবাহিত হয়ে সেই বর্জ্য গিয়ে জমা হয় সুন্দরবন এলাকায়। ধীরে ধীরে সেখানকার মাটিতে ক্রোমিয়ামের পরিমাণ বাড়তে থাকে। আর এক সময়ে ওই মাটিতে জন্ম নেওয়া ফসলের মধ্যেও বাহিত হয় বিপজ্জনক মাত্রার ক্রোমিয়াম। যেমন ঢুকেছে ধানগাছে, সেখান থেকে ধানে।

ক্রোমিয়ামের দু’টি যোজ্যতা, তিন এবং ছয়। তিন যোজ্যতার ক্রোমিয়াম অপেক্ষাকৃত কম কার্সিনোজেনিক এবং তা মাটিতে ছড়ায় খুব ধীরে ধীরে। গবেষকদের দাবি, ওই ব্যাক্টেরিয়াটি ক্রোমিয়ামের যোজ্যতা ছয় থেকে কমিয়ে আনে তিনে। ফলে, কমে যায় ক্রোমিয়ামের ক্ষতির মাত্রা। সুন্দরবনের ক্রোমিয়াম অধ্যুষিত মাটিতে ওই ব্যাক্টেরিয়া প্রয়োগ করে প্রাথমিক যে ফল মিলেছে তাতে গবেষক দল আশাবাদী।

তাঁদের মতে, ব্যাক্টেরিয়াটি প্রয়োগ করে পরবর্তী কালে সুন্দরবনে ক্রোমিয়াম মুক্ত ধান উৎপাদন সম্ভব। সেই গবেষণার উপরেই জোর দিচ্ছে কলকাতার দুই গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন