জঞ্জালে জেরবার/১

শহর তো নোংরাই, মানছেন বাসিন্দারা

কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় নোংরা শহরের তালিকায় নাম রয়েছে বর্ধমানের। নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই না হওয়া, নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের অনেকেরই। সংস্কারের পরে প্রশ্ন রয়েছে বাঁকা নদী নিয়েও। কেন এই পরিস্থিতি, কী বলছেন কর্তারা— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় নোংরা শহরের তালিকায় নাম রয়েছে বর্ধমানের। নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই না হওয়া, নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের অনেকেরই। সংস্কারের পরে প্রশ্ন রয়েছে বাঁকা নদী নিয়েও। কেন এই পরিস্থিতি, কী বলছেন কর্তারা— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ০৭:২০
Share:

সংস্কার হয় না শহরের নানা নর্দমা। ভাতছালায়। ছবি: উদিত সিংহ

এই শহর রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন শহর। তবে তার উপরে যে আবর্জনার শহরের তকমা পড়ে যেতে পারে, টের পেয়েছিলেন পুরসভার কর্তারা। তাই গত কয়েক বছরে শহরকে স্বচ্ছ করার কাজে জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছিল বর্ধমান পুরসভা। কিন্তু তা বিশেষ হয়নি, সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারের এক রিপোর্ট সে কথাই বলছে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের এক লক্ষের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে এমন জেলা শহরগুলিতে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমীক্ষা চালায়। তাতে নোংরা শহরের তালিকায় নাম রয়েছে বর্ধমানের। শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, দেখভালের অভাবে বুজে গিয়েছে শহরের অনেক নর্দমা। গাফিলতি রয়েছে সাফাইয়ের কাজেও। তাই তালিকায় ঠাঁই হওয়ায় আশ্চর্যের কিছু নেই।

ওই সমীক্ষায় আবর্জনা সংগ্রহ ও নষ্ট করা, খোলা আকাশের নীচে শৌচকর্ম, বাজারহাটের নোংরা ফেলার ব্যবস্থার মতো বেশ কিছু দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বচ্ছ শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আবর্জনা সংগ্রহ। সেখানেই ঘাটতি রয়েছে বর্ধমানে। আবর্জনা সংগ্রহের সময়ে নীল রঙের বালতিতে অপচনশীল ও সবুজ বালতিতে পচনশীল আবর্জনা সংগ্রহ করার কথা পুরকর্মীদের। কিন্তু অভিযোগ, আদতে গৃহস্থের আবর্জনা থেকে রাস্তার আবর্জনা, নর্দমার পলি তুলে একটি জায়গাতেই জমা করেন পুরকর্মীরা।

Advertisement

রয়েছে নাগরিকদের সচেতনতার অভাবও। রাস্তার ধারেই আবর্জনা ফেলে রাখেন অনেকে। পুলিশ লাইনের কাছে ইন্দ্রকানন থেকে বীরহাটা, শাঁখারিপুকুর, সর্বমঙ্গলা পাড়া থেকে স্টেশনের সামনে, লক্ষ্মীপুর মাঠ, কৃষ্ণপুর মোড়— অনেক জায়গাতেই আবর্জনা ডাঁই করে রাখার দৃশ্য দেখা যায়। শহরবাসীর একাংশের দাবি, প্লাস্টিক-থার্মোকল ব্যবহারে কোনও নজরদারি না থাকায় নর্দমাগুলি অর্ধেক বুজে থাকে। তেমনই পুকুর-জলাশয় নিয়েও পুরসভার মনোভাব গা-ছাড়া, দাবি বাসিন্দাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘শহরের একাংশে মানুষজনকে বাঁকার পাড়ে শৌচকর্ম বা রাস্তার ধারে প্রাকৃতিক কাজকর্ম করতে দেখা যায়। জেলাশাসকের দফতর এলাকাও অপরিচ্ছন্ন দেখা যায় মাঝে-মধ্যে। এই শহরকে কী ভাবে পরিচ্ছন্ন বলা যায়?’’

পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (জঞ্জাল) খোকন দাসের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এই ক’বছরে শহর সাফ রাখার জন্য নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শহরের মূল রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সকাল ১০টার মধ্যে রাস্তার পাশে থাকা সমস্ত আবর্জনা তুলে নেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, প্রতিটি নর্দমা ঢাকা দেওয়ার পাশাপাশি দু’টি মাটি কাটার যন্ত্র কেনা হয়েছে।

শহরের আবর্জনার বড় অংশ ফেলা হয় কালনা রোডের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেখানেও পাকাপাকি ভাবে পাঁচিল তৈরির জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে পুরসভা। সেখানে আবর্জনা থেকে সার বা গ্যাস তৈরির জন্য রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরে প্রকল্পও জমা দেওয়া হয়েছে বলে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি। খোকনবাবুর ক্ষোভ, ‘‘শহরে ১১৪টি জায়গা থেকে প্রতিদিন আবর্জনা তোলা হয়। তার পরেও অনেকে রাস্তায় আবর্জনা ফেলছেন। শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’’

কেন্দ্রের ওই রিপোর্ট অবশ্য ‘মনগড়া’ বলে দাবি করেন বর্ধমানের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক মাস আগেই কেন্দ্র আমাদের পুরসভাকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। এই টাকা পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল শহরের পরিচ্ছন্নতা। তাহলে এরই মধ্যে বর্ধমান ‘নোংরা শহর’ হয়ে গেল!’’ তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন