যাদবপুর কাণ্ডে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সরকারের উপর চাপ বাড়াল বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী রাজ্যের শাসক দলের নিজস্ব লোক। তাই তিনি ছাত্রছাত্রীদের শাসন করতে পুলিশ ও তৃণমূলের লোকজনকে ব্যবহার করেছেন। এই প্রেক্ষিতেই উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলগুলির নেতারা।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে উপাচার্যকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। পরে তিনি বলেন, “রাজ্যপালকে জানিয়েছি, যিনি অস্থায়ী উপাচার্য আছেন, তাঁর ওই পদে থাকার যোগ্যতা নেই। কিন্তু সরকার তাঁকে ওই পদে এনেছে এবং এখনও রেখে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আপনি হস্তক্ষেপ করে ওঁকে সরান।”
একই দাবিতে আজ, শুক্রবার রাজ্যপালের কাছে যাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল। এ দিন অধীর জানান, আজ, শহিদ মিনার ময়দানে কংগ্রেসের জনসভা আছে। সেই জনসভাতেও যাদবপুরে পুলিশি তাণ্ডব এবং উপাচার্যের ভূমিকার প্রতিবাদ জানানো হবে। উপাচার্যের ভূমিকার নিন্দা করে অধীর বলেন, “উপাচার্য যে আচরণ করেছেন, তার নিন্দার ভাষা নেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নারকীয় এবং বর্বরোচিত। এই ঘটনা প্রমাণ করেছে রাজ্যে শিক্ষায় নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।” যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের বক্তব্যেরও সমালোচনা করে অধীর বলেন, “উনি তৃণমূলের তৈরি চিত্রনাট্য পড়েই মন্তব্য করছেন।” যাদবপুর কাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ছাত্রছাত্রীদের উপর আক্রমণের সঙ্গে বাম জমানার নানা ঘটনার তুলনা টেনে রাহুলবাবু বলেন, “আজ বলা হচ্ছে, ছাত্রদের কাছে অস্ত্র ছিল! কাল বলা হবে ছাত্ররা মাওবাদী! গেঞ্জি পরা পুলিশকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে! যাদবপুর কাণ্ড ফের দেখিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল জমানা বাম জমানারই পুনরাবৃত্তি।”
এ দিন বর্ধমানে অণ্ডালে দলের কর্মিসভায় বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ও যাদবপুরের পড়ুয়াদের উপর হামলার নিন্দা করেন। পুলিশ-প্রশাসনের সমালোচনা করে তাঁর তির্যক মন্তব্য, “পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য শুনে মনে হল সরকার এবং প্রশাসন নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে!”
বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদেও রাজ্য ছিল সরগরম। কলকাতায় চার বাম ছাত্র সংগঠনের ডাকে ঢাকুরিয়া থেকে যাদবপুর ৮ বি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মিছিল হয়। যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। বাম ছাত্র সংগঠনগুলির মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সিপিআই নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় এবং দলের কলকাতা জেলা সম্পাদক প্রবীর দেব।
এ দিন রাজ্য জুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। খড়্গপুর আইআইটি, বিশ্বভারতী এবং পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যাদবপুরের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পথে নেমেছিলেন। কোনও সভা-সমিতিতে যোগ না দিলেও ঘটনার নিন্দা করেছেন আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অধীনস্থ বিভিন্ন কলেজে কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানান বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-র সদস্যরা। হিলকার্ট রোডে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল করে হাসমিচকে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ায় এসএফআই।