চাকু দেখিয়ে অনশন-ভঙ্গ, নীরব রেজ্জাক-সিদ্দিকুল্লা

সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রশ্নে তাঁরা বরাবর সরব। সিরিয়া থেকে সিউড়ি, গাজা থেকে গলসি— ঘটনা ঘটলেই তাঁরা প্রতিবাদে মুখর হন। কিন্তু খাস কলকাতায় প্রথমে মৌখিক আশ্বাস এবং তার পরে রীতিমতো চাকু হাতে দুষ্কৃতী দাপটে অনুদানহীন মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনশন তুলে দেওয়ার পরে তাঁদের সেই প্রতিবাদী কণ্ঠে ভাঁটা! কারণ, এখন তাঁরা শাসক দলের শিবিরে সৈনিক হয়ে উঠেছেন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৬
Share:

সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রশ্নে তাঁরা বরাবর সরব। সিরিয়া থেকে সিউড়ি, গাজা থেকে গলসি— ঘটনা ঘটলেই তাঁরা প্রতিবাদে মুখর হন। কিন্তু খাস কলকাতায় প্রথমে মৌখিক আশ্বাস এবং তার পরে রীতিমতো চাকু হাতে দুষ্কৃতী দাপটে অনুদানহীন মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনশন তুলে দেওয়ার পরে তাঁদের সেই প্রতিবাদী কণ্ঠে ভাঁটা! কারণ, এখন তাঁরা শাসক দলের শিবিরে সৈনিক হয়ে উঠেছেন!

Advertisement

প্রথম জন— সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। তৃণমূলের টিকিটে কোন আসন থেকে তিনি বিধানসভায় প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছে বিস্তর। অনশন ভাঙাতে সোমবার সন্ধ্যার বেনজির ঘটনা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাই যাচ্ছে না। যোগাযোগ করা হলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হচ্ছে, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সদস্যপদ পূরণের কাজ নিয়ে সিদ্দিকুল্লা এখন ব্যস্ত। কয়েক দিন কলকাতার বাইরেও রয়েছেন। তাই কথা বলা যাবে না।

দ্বিতীয় জন— আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। তিনি অনশন-কাণ্ডে মন্তব্য করতেই নারাজ। প্রশ্ন করা হলে বুধবার রেজ্জাক বলেছেন, ‘‘আমি ব্যাপারটা জানি না। না জেনে মন্তব্য করতে চাই না।’’ তৃণমূলের পতাকা হাতে নেওয়ার পরে তাঁকে ভাঙড় থেকে প্রার্থী করার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের প্রবল আপত্তি মোকাবিলা করে ভাঙড়ে ঘুঁটি সাজানোর চেষ্টা করছেন বাম জমানার ডাকসাইটে মন্ত্রী। তার মধ্যেই আবার রেজ্জাককে চাপে রাখতে শাসক দলের শীর্ষ একটি মহল থেকে কৌশলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, রায়দিঘীতে তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নাকি নামিয়ে দেওয়া হতে পারে প্রাক্তন এই সিপিএম নেতাকে। এমতাবস্থায় অনশন-কাণ্ডের নিন্দায় মুখ খুলে রেজ্জাক পরিস্থিতি জটিল করবেন, এমন প্রত্যাশা না করাই ভাল বলে মনে করানো হচ্ছে তৃণমূল সূত্রে!

Advertisement

বিরোধীদের অবশ্য এমন দায় নেই। হাজি মহম্মদ মহসিন স্কোয়ারে অনশন-স্থলেই আজ, বুধবার দুপুরে বিক্ষোভ-জমায়েত করবে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, অনশনরত শিক্ষকদের একাংশের ফোন পেয়েই তিনি সোমবার তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের আশ্বাস দেওয়ার সময়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। শিক্ষকদের একাংশ তাঁর কাছে একশো দিনের জবকার্ড পর্যন্ত দাবি করেছিলেন রুজি-রোজগারের জন্য। অধীর এ দিন বলেন, ‘‘চাকু দেখিয়ে যে ভাবে জোর করে মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনশন ভাঙা হয়েছে, তাতে সরকারের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু শিক্ষকদের এই অপমানের জবাব বাংলার মানুষ দেবেন!’’ বিষয়টি সংসদে তোলার জন্য নোটিস দিয়েছেন সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জও (ভিক্টর) এ দিন বলেছেন, ‘‘মা-মাটি-মানুষের দল এখন মাতাল-মস্তান-মাফিয়ার দল! এঁদের কাজকর্মের জবাব দেওয়ার জন্য মানুষ তৈরি হচ্ছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন