Street Dogs

Rickshaw puller: লালু-ভুলুদের ত্রাতা রিকশা চালক চন্দন

রিকশা চালিয়ে যা রোজগার হয়, তার বেশিরভাগটাই বরাদ্দ থাকে পথকুকুরদের জন্য। বাকিটা নিজের খরচ করেন। সঞ্চয়ের তেমন বালাই নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভগবানপুর শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১ ০৬:২৭
Share:

কুকুর কোলে চন্দন। নিজস্ব চিত্র।

সাইকেল রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে এলাকায় এলে আশপাশের নেড়ির দলে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে হাজির হত। তাদের জন্য খাবার এসেছে, দিব্য বুঝত অবলা প্রাণীগুলো।

Advertisement

বাঁধভাঙা নদীর জলে চারপাশ প্লাবিত হওয়ার পরেও ওই পথকুকুরদের খাবার, এমনকি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতেও এগিয়ে এসেছেন ভগবানপুরের সেই রিকশা চালক চন্দন মাইতি।

ভগবানপুরের জনাদাঁড়ি গ্রামের বাসিন্দা চন্দন পশু অন্ত প্রাণ। বিশেষ করে সারমেয়দের প্রতি তাঁর অপত্যস্নেহ। রিকশা চালিয়ে যা রোজগার হয়, তার বেশিরভাগটাই বরাদ্দ থাকে পথকুকুরদের জন্য। বাকিটা নিজের খরচ করেন। সঞ্চয়ের তেমন বালাই নেই। বহুকাল হল ছেড়ে গিয়েছেন স্ত্রী আর ছেলে। এখন লালু-কালু-ভুলুদদের নিয়েই তাঁর সংসার। রোজকার খাওয়াদাওয়া, যত্নআত্তি তো বটেই, অসুস্থ হলেও পথকুকুরদের সেবা-শুশ্রুষায় খামতি রাখেন না বছর পঁয়তাল্লিশের চন্দন।

Advertisement

সেপ্টেম্বরে কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ভগবানপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। সড়কপথে যোগাযোগ এখনও বন্ধ। খুব প্রয়োজনে নৌকা বা কলার ভেলায় চড়ে এলাকাবাসীকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। গোপীনাথপুর বাজার লাগোয় রাস্তাতেও হাঁটু সমান জল। মাঝেমধ্যে বিনা পারিশ্রমিকে এই বাজারে সাফাইয়ের কাজ করেন চন্দন। আপাতত তারই কাছাকাছি একটি সেতুর কাছে কিছুটা উঁচু এবং শুকনো জায়গায় তাঁর ভালবাসার সংসার নিয়ে আছেন তিনি।

দিন সাতেক হল ঘরে ফেরেননি। তিনি চলে গেলে লালু-ভুলদের দেখবে কে! বন্যার পর সংসার বেড়েওছে। আগে চন্দনের পোষ্য ছিল ৮টি পথকুকুর। এখন হয়েছে ১৩টি। চারদিকে জল জমে। তাই চন্দনের রোজগারপাতি এখন তেমন নেই। তবে যেটুকু টাকা জমানো আছে, তা থেকেই তিনি চা, মুড়ি কিনে খাওয়াচ্ছেন পোষ্যদের। কখনও নিয়ে আসছেন ত্রাণের রান্না করা খাবার। চন্দন বলেন, ‘‘ওদেরও প্রাণ রয়েছে। মানুষের সঙ্গে এরা কখনও বেইমানি করেনা। বরং বিপদ দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবুও আমরা এদের অবহেলা করি। আমি অবশ্য বড্ড ভালবাসি ওদের। ওরাই এখন আমার সব।’’

এলাকায় সারমেয় প্রেমী হিসাবেই পরিচিত চন্দন। রাস্তায়ঘাটে কুকুর দেখলেই আদর করতে শুরু করেন, কোনও কুকুর আহত হলে শুশ্রূষা করতে ছোটেন। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় মাইতি বলছিলেন, ‘‘সারাদিন কুকুরদের নিয়েই থাকেন উনি। কখনও নিজের জন্য ভাবতে দেখিনি। কুকুরগুলোও ওঁকে খুব ভালবাসে।’’

এ ভালবাসা যে বড্ড খাঁটি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন