ঋদ্ধিমাকে বাঁচাতে ভরসা ভিন্‌ রাজ্য

মালদহ থেকে ১৩ বছরের মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় আসা ঋদ্ধিমার বাবা-মা আপাতত অকূল পাথারে। এ রাজ্যে অস্ত্রোপচারের আশা ছেড়ে তাঁরা এখন দক্ষিণ ভারতে যেতে চাইছেন।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০৪
Share:

প্রতীকী চিত্র।

প্রথমে সমস্যাটা ছিল টাকার। স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) আক্রান্ত ঋদ্ধিমা পালের নুয়ে পড়া মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচারের জন্য সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ এগিয়ে আসায় টাকার বন্দোবস্ত যদিও বা হল, চিকিৎসকেরা জানালেন, অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় যন্ত্র খারাপ। কবে তা সারানো হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

Advertisement

মালদহ থেকে ১৩ বছরের মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় আসা ঋদ্ধিমার বাবা-মা আপাতত অকূল পাথারে। এ রাজ্যে অস্ত্রোপচারের আশা ছেড়ে তাঁরা এখন দক্ষিণ ভারতে যেতে চাইছেন। যেখানে ভিন্‌ রাজ্যে রোগী যাওয়া আটকাতে সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যের উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কথা ঘোষণা করছে স্বাস্থ্য দফতর, সেখানে এই ঘটনা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ফের প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করাল বলে মনে করছেন অনেকে।

বুধবার কলকাতার হোটেলে বসে ঋদ্ধিমার বাবা রাজীব পাল বলেন, ‘‘বেশি দেরি হলে মেয়েটাকে হয়তো হারাব আমরা। এ রাজ্যের ডাক্তারদের উপরে আমাদের ভরসা রয়েছে। আমরা কলকাতাতেই অস্ত্রোপচার করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা হল না। যাঁরা আর্থিক সাহায্য করেছেন, তাঁরা ফোনে জানতে চাইছেন অস্ত্রোপচার হল কি না। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, মেয়েটাকে সামনে রেখে মিথ্যে কথা বলে টাকা নিচ্ছি। ’’

Advertisement

ঋদ্ধিমার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল, আজ, বৃহস্পতিবার। গত মঙ্গলবার তার কলকাতার বেসরকারি নার্সিংহোম পার্ক ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী রবিবার মালদহের বাড়ি থেকে কলকাতায় আসে তারা। হোটেলে ঢোকার পরেই চিকিৎসকদের তরফে ফোনে জানানো হয়, অস্ত্রোপচার হবে না। রাজীববাবু বলেন, ‘‘আমি নার্সিংহোমে গিয়ে জানতে পারি, যন্ত্র খারাপ। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারবাবুদের জিজ্ঞাসা করি, কতদিনে ঠিক হবে? ওঁরা স্পষ্ট জানাতে পারেননি।এই অনিশ্চয়তার মধ্যে মেয়েকে ফেলে রাখা সম্ভব নয়। অস্ত্রোপচার করালে মেয়ে হেঁটেচলে বেড়াতে পারবে না, তা জানি। কিন্তু টানা কিছুক্ষণ অন্তত সোজা হয়ে বসতে পারবে। আমাদের কাছে সেটাই অনেক বড় পাওয়া।’’

এখন টানা আধ ঘণ্টাও সোজা হয়ে বসে থাকতে পারে না ঋদ্ধিমা। ব্যথায় কুঁকড়ে যায়। তার মেরুদণ্ড ক্রমশ নুয়ে পড়ে চাপ দিচ্ছে ফুসফুসকে। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে স্কোলিওসিস। অবিলম্বে অস্ত্রোপচার না করলে ফুসফুস অচিরেই স্বাভাবিক কাজের ক্ষমতা হারাবে। বাঁচিয়ে রাখতে গেলে ঋদ্ধিমাকে দিতে হবে ভেন্টিলেশনে। তার বাবা-মা জানালেন, কলকাতায় এসে স্টেশন থেকে গাড়ি পর্যন্ত মেয়েকে নিতে মোটবাহকদের সাহায্য নিতে হয়েছে তাঁদের।

পার্ক ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের হাসপাতালে নিয়মিত ওই যন্ত্র ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার হচ্ছে। তা হলে ঋদ্ধিমাকে ফেরানো হল কেন? কর্তৃপক্ষ জানান, এটা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পক্ষেই বলা সম্ভব। চিকিৎসক সৌম্যজিৎ বসুর তত্ত্বাবধানে ঋদ্ধিমার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। একাধিক বার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর টিমের নিউরো-অ্যানাস্থেটিস্ট তৃণাঞ্জন ষড়ঙ্গি জানান, পার্ক ক্লিনিকের যন্ত্রটি তাঁরা ব্যবহার করেন না। তিনি বলেন, ‘‘ক্লিনিকের যন্ত্রটি মূলত নিউরো সার্জারির জন্য ব্যবহার করা হয়। আমরা শুধু মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচারের জন্য অন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করি। সেটাই খারাপ।’’ কতদিনে তা সারানো সম্ভব? তিনি বলেন, ‘‘যন্ত্রের বিষয়ে তো ওই ভাবে বলা যায় না। ১০-১২ দিন লাগতে পারে।’’ তখন কি ঋদ্ধিমার অস্ত্রোপচার করা যাবে? তৃণাঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘যন্ত্র ঠিক হওয়ার পরে প্রথম অস্ত্রোপচারটাই ওর করতে চাইছি না। অন্য কোনও অস্ত্রোপচারে যন্ত্রটি ব্যবহার করে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে কি না দেখে নিয়ে তবেই করা যাবে। ঋদ্ধিমার বাবা মেয়েকে অন্য রাজ্যে নিয়ে যাবেন কি না জানতে চাইছিলেন। আমরা বলেছি, অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হলে সেটা করাই ভাল।’’

কলকাতায় থাকা, অস্ত্রোপচারের আগে বেশ কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা বাবদ ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে গিয়েছে পাল দম্পতির। রাজ্যের বাইরে গিয়ে এ বার অন্য লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তাঁরা। রাজীববাবুর কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচার না করিয়ে আর মালদহ ফিরব না। চোখের সামনে মেয়েটাকে শেষ হতে দেখা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন