মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ বা ‘সামলে চালান, প্রাণ বাঁচান’ প্রচার চলছে মাস তিনেক। আর সেই তিন মাসেই রাজ্যে পথ-দুর্ঘটনা অনেকটা কমে গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
কতটা কমেছে দুর্ঘটনা? গোটা রাজ্যের পরিসংখ্যান মেলেনি। তবে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল সুরজিৎ করপুরকায়স্থ জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই স্লোগান নিয়ে প্রচার শুরুর তিন মাসের মধ্যে কলকাতার লাগোয়া তিন জেলা হুগলি, দুই ২৪ পরগনা ও নদিয়ায় পথ-দুর্ঘটনা কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে এই দাবি করেন পুলিশ-প্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার হার কমেছে সারা রাজ্যেই। তার মধ্যে ওই চার জেলার হার সব চেয়ে ভাল।’’
একই সঙ্গে ডিজি জানিয়ে দেন, প্রথম তিন মাসে টানা প্রচারের এই ‘সাফল্য’-এর বিষয়টি পুজোর উদ্যোক্তারা নিজেদের প্রচারে রাখলে সরকার তাঁদের উৎসাহিত করবে। পুজো পুলিশের বড় পরীক্ষা। পুজোয় দুর্ঘটনা কতটা ঠেকানো গেল, তার উপরে সাফল্য অনেকটা নির্ভর করে, বলছে পুলিশেরই একাংশ।
এই অবস্থায় ডিজি-র দাবি নিয়ে এখনই বেশি মাতামাতি করতে রাজি নয় রাজ্য পুলিশের একাংশ। শীর্ষ স্তরের এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার হার যে অনেকটা কমেছে, তা নয়। কিছুটা কমেছে। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই এত আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই।’’ কখন আশাবাদী হওয়া যেতে পারে, তার একটা ব্যাখ্যাও দেন ওই কর্তা। তাঁর মতে, প্রতি বছরই উৎসবের মরসুমে দুর্ঘটনার হার বাড়ে। এ বার যদি সেটা যথেষ্ট কমে যায়, একমাত্র তা হলেই বলা যাবে যে, প্রচারের ইতিবাচক প্রভাব প়ড়েছে।
দুর্ঘটনা কমেছে বলে ডিজি যে-দিন ঘোষণা করছেন, তার ২৪ ঘণ্টা আগে, বুধবারেই টাকি রোডে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে বাবা এবং ন’বছরের মেয়ের। মঙ্গলবার খাস কলকাতায় অটোরিকশার ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ৭২ বছরের এক বৃদ্ধের। ওই রাতে জগদ্দলে ট্রাকের ধাক্কায় কোমর ভেঙেছে ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক হরিপদ বিশ্বাসের। তা হলে কী ভাবে বলা যাবে যে, দুর্ঘটনা ঘটছে না? নবান্নের এক কর্তার বক্তব্য, দুর্ঘটনা ঘটছে না, এমন কোনও দাবি মোটেই করা হয়নি। বলা হয়েছে, দুর্ঘটনা অনেকটাই কমেছে।
রাজ্য পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, আক্ষরিক অর্থে ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা না-কমলেও জেলাগুলির দেওয়া তথ্য দেখে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
কেমন সেই তথ্য?
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের দাবি, জুন পর্যন্ত গোটা রাজ্যে মাসিক দুর্ঘটনার সংখ্যা পাঁচশোর উপরে থাকত। জুলাইয়ে পথ-সচেতনতা নিয়ে প্রচার শুরু হওয়ার পরে সেটা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ৪৮৯-এ। আর অগস্টে তা কমে হয়েছে ৪৪৯। ডিজি-র উল্লিখিত চার জেলার হিসেব বলছে, উত্তর ২৪ পরগনায় জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাসিক গড় দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৩৩। জুলাই-অগস্টে সেটা আরও কমে হয়েছে ২৮। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া এবং হুগলিতে গড় দুর্ঘটনার হার কমে হয়েছে যথাক্রমে ৪০ থেকে ২৬, ৩৭ থেকে ২১ এবং ৪৫ থেকে ৩৯। দুর্ঘটনার হার লক্ষণীয় ভাবে কমেছে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেও। এই ধারা সেপ্টেম্বরেও বজায় ছিল বলে দাবি ট্রাফিক বিভাগের কর্তাদের।
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচারে সাফল্যের দাবি করছেন ব্যারাকপুরের কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী, নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়েরাও। পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, ডিজি সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সব জেলাতেই দুর্ঘটনার হার কমে যাওয়ার এই তথ্য তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে।