রূপা অধরাই, ক্ষমা চাইলেন সভাপতি দিলীপ

এ রাজ্যে দলের তারকা-মুখ তিনি। রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁর কাছে দলের নেতা-কর্মীরা পৌঁছতে চাইবেন, এ নিতান্তই স্বাভাবিক। কিন্তু সাংসদ হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর দিনও অধরা থেকে গেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। না সশরীর, না ফোন— তাঁর নাগাল পেলেন না সহকর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৩
Share:

এ রাজ্যে দলের তারকা-মুখ তিনি। রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁর কাছে দলের নেতা-কর্মীরা পৌঁছতে চাইবেন, এ নিতান্তই স্বাভাবিক। কিন্তু সাংসদ হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর দিনও অধরা থেকে গেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। না সশরীর, না ফোন— তাঁর নাগাল পেলেন না সহকর্মীরা।

Advertisement

তাঁর গল্ফ গ্রিনের বাড়ি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিজেপি সাংসদদের বৈঠকে যোগ দিতে ঝাড়খণ্ডে যাচ্ছেন বলে ভোর ৬টায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন রূপা। যদিও সাংসদ হিসাবে তাঁর এখনও শপথ নেওয়া হয়নি। রাজ্য বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা আরও জানাচ্ছেন, ঝাড়খণ্ডে বুধবার সাংসদদের এমন কোনও বৈঠকের খবর তাঁদের কাছে নেই! যোগাযোগ করার জন্য এ দিনও তাঁকে ফোন করা হলে রূপা ধরেননি। বাড়ি থেকে তাঁর ঝাড়খণ্ড যাত্রার খবর জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা অবশ্য রূপার এই অধরা হয়ে ওঠার চেষ্টায় আদৌ বিস্মিত নন। তাঁদের ব্যাখ্যা, রূপা কখন কার সঙ্গে দূরত্ব রাখবেন এবং কার সঙ্গেই বা যোগাযোগ করবেন, সেটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এক জন তারকা ব্যক্তিত্বের অধরা হওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। তবে বিজেপি-র সাধারণ রাজনৈতিক কর্মীদের এমন ব্যাখ্যা বোঝানো যায়নি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে দলের অনেকেই অনুযোগ করেছেন, নিরীহ অভিনন্দন-বার্তা জানানোর জন্যও ফোনে রূপার নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকী, দল এবং অভিনয় জগৎ— দুই ক্ষেত্রেই সতীর্থ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও অভিনন্দন-বার্তা পাঠিয়ে কোনও সাড়া পাননি রূপার তরফে। অস্বস্তি এড়াতে দিলীপবাবু তাঁদের কাছে রূপার হয়ে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন। রূপার সঙ্গে দিলীপবাবুর সম্পর্ক ইদানীং ‘মধুর’। তাই এই ক্ষমা চাওয়ার মধ্যেও প্রচ্ছন্ন একটি বার্তা পড়ে নিতে পারছেন দলের অনেকে। প্রসঙ্গত, রূপা মঙ্গলবার দিলীপবাবুকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে ই-মেল মারফত নতুন পদপ্রাপ্তির খবর এসেছে। তখন দিলীপবাবু তাঁকে নিজের ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গটি জানিয়েও দিয়েছিলেন।

Advertisement

বিজেপি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বা শমীক ভট্টাচার্যের মতো নেতাকে নিজের সাংসদ হওয়ার খবর জানিয়ে কোনও ফোন বা মেসেজ করেননি রূপা। অথচ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রূপা আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার সময় শমীকই ছিলেন তাঁর পাশে।

রাজ্যসভার সাংসদ হচ্ছেন, জানার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে অবশ্য ফোনে কথা বলেছেন রূপা। বাবুল পরে টুইটও করেন, ‘‘যাক, এ বার তা হলে আমি আর রূপা দিল্লিতে এক সঙ্গে ঝালমুড়ি খেতে পারব। এবং দামটা রূপাকেই দিতে হবে!’’ প্রসঙ্গত, গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাবুলের ঝালমুড়ি খাওয়া নিয়ে রূপা প্রকাশ্যেই কটাক্ষ করেছিলেন। বাবুল টুইটে সকৌতুকে ঝালমুড়ির প্রসঙ্গ তুলে সেই পুরনো কথাই স্মরণ করিয়েছেন বলে বিজেপি-র একাংশের দাবি।

তবে রাজ্য বিজেপি-র একটা বড় অংশ, রূপার এই পদোন্নতিতে অসন্তুষ্ট। তাদের মতে, দলে প্রবীণ রাজনীতিকের অভাব নেই। কিন্তু তাঁদের কারও কাছে এমন পুরস্কার খুব একটা আসে না। দই সব সময় বাইরে থাকা উড়ে আসা কোনও তারকাই খেয়ে যায়! রাহুলবাবুই যেমন বহু বছরের সৈনিক। দলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন ৬ বছর। নেতা হিসাবে কেন্দ্রীয় বিজেপি-র কাছেও তাঁর গুরুত্ব যথেষ্ট। দিলীপবাবু-সহ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব চেয়েছিলেন, রাহুলবাবুকে রাজ্যসভার সাংসদ করা হোক। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সুপারিশে শেষ পর্যন্ত বেছে নেওয়া হয়েছে ১ বছর ৯ মাস আগে দলে আসা রূপাকে।

রাহুলবাবু অবশ্য রূপাকে অভিনন্দনই জানিয়েছেন। আর নিজের না পাওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা তো দলের বিপদের দিনের কর্মী। বিপদের দিনে আমাদের দরকার পড়বে নিশ্চয়ই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন