আন্তঃরাজ্য সমবায় খুলেও টাকা সরায় রোজ ভ্যালি

পঞ্জি স্কিমের নামে বাজার থেকে যে টাকা তুলেছিল রোজ ভ্যালি, তারই একটা বড় অংশ বহুমুখী সমবায় খুলে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল তারা। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৬
Share:

পঞ্জি স্কিমের নামে বাজার থেকে যে টাকা তুলেছিল রোজ ভ্যালি, তারই একটা বড় অংশ বহুমুখী সমবায় খুলে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল তারা। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে। ওই সমবায়গুলিতে যে সব ব্যক্তির নামে টাকা জমা পড়েছে, তাঁদের আদৌ কোনও অস্তিত্ব আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে ইডি।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সময়টা ২০১৩ সাল। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলো ঝাঁপ বন্ধ করতে ব্যস্ত। অথচ বাজারে তখন তাদের বহু টাকা ছড়িয়ে রয়েছে। কী হবে তার? উপায় হিসাবে বহু সংস্থাই সেই সময় আন্তঃরাজ্য বহুমুখী সমবায় (মাল্টি স্টেট কো-অপারেটিভ সোসাইটি) খুলে ফেলে। এক দিকে এই সমবায়ের মাধ্যমে ফের বাজার থেকে টাকা তোলা শুরু হয়। অন্য দিকে, হাতে থাকা কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে সমবায়ে রাখা হয়। লোক-ঠকিয়ে টাকা আত্মসাতের নতুন এই ব্যবসায় আরও অনেক সংস্থার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে রোজ ভ্যালিরও।

‘মাল্টি স্টেট ক্রেডিট কো-অপারেটিভ অ্যাক্ট’-এ ওই সমবায়গুলির লাইসেন্স দিয়েছিল কেন্দ্রের কৃষি ও কৃষক উন্নয়ন মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় আইনে রেজিস্ট্রিকৃত কোনও সমবায়ের একাধিক রাজ্যে আমানত ব্যবসা খোলায় বাধা নেই। সেই ফাঁক গলেই অনেক সমবায়ে এক অ্যাকাউন্টের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে সরানোর অভিযোগ মিলেছে। ইডি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘বহুমুখী সমবায়ের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ত্রিপুরায় আমানত ব্যবসা খোলার লাইসেন্স পেয়েছিল রোজ ভ্যালি।’’

Advertisement

তথ্য বলছে, ২০১৩-এর অক্টোবরে ভিআইপি রোডের পিজিই প্লাজা-র ঠিকানায় একটি আন্তঃরাজ্য বহুমুখী সমবায় খুলেছিল ‘আরভি মাল্টি পারপস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’। তার চেয়ারম্যান ছিলেন গৌতম কুণ্ডু ও ভাইস চেয়ারম্যান শিবময় দত্ত। ওই ঠিকানাতেই ছিল রোজ ভ্যালির বিনোদন চ্যানেলের অফিস। ইডি-র এক অফিসার বলেন, ‘‘সমবায়ের নামের বানান এআরআরভিইই (আরভি)। এক ঝলকে যাতে রোজ ভ্যালির সমবায় বোঝা না যায়, সেই জন্যই এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল।’’

আরভি-র পাশাপাশি মিশাল মাস্টি পারপস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে অন্য একটি সমবায়ের নথি পরীক্ষা করেছিলেন রাজ্যের সমবায় কর্তারা। সেই পরিদর্শন রিপোর্টে বলা হয়েছে, সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ-এর ঠিকানায় ওই সমবায় চালু হলে পরবর্তী কালে তা কলকাতার ম্যাঙ্গো লেনে উঠে আসে। তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, মিশালের কর্মকর্তা হিসেবে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁরা রোজ ভ্যালি সংস্থার সঙ্গেই নানা ভাবে যুক্ত ছিলেন। সমবায়ের ওয়েবসাইটেও রোজ ভ্যালির নাম লেখা আছে, ব্যবসা ‘চকোলেট অনলাইন হোটেল চেন’।

তবে ওই দুই সমবায়ের কাজকর্ম যে স্বচ্ছ ছিল না, তার ইঙ্গিত রয়েছে পরিদর্শন রিপোর্টে। আরভি-র ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বোর্ড মিটিং অনিয়মিত ছিল, মেগা ফুড পার্ক ও ডেয়ারি তৈরির সিদ্ধান্ত থাকলেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ ছিল না, এমনকী, দৈনন্দিন খরচ চালাতে প্রতি মাসে মিশাল সমবায় থেকে ঋণ নেওয়া হলেও ব্যবসা বাড়ানোর কোনও চেষ্টা ছিল না। উল্টে সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে প্রচুর কাটাকাটি ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।

মিশাল সমবায়ের ব্যাপারে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ত্রিপুরায় বিবিধ আমানত প্রকল্পে টাকা তোলার দায়িত্ব (সার্ভিস প্রোভাইডার) ন্যস্ত করেছিল রোজ ভ্যালি হোটেল অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট সংস্থাকে। ইডি সূত্রের খবর, পরবর্তী কালে কেন্দ্রীয় রেজিস্ট্রারের নির্দেশে ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। আমানতকারীরাও টাকা ফেরত পায়নি। এই টালমাটালের মধ্যেই ২০১৩-তে ত্রিপুরার আমতলিতে ডেয়ারি প্রকল্পের জন্য ১১ একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সমবায় কর্তৃপক্ষ। জমির দাম দেখানো হয়েছিল ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেড় কোটি টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল বলে রাজ্যের সমবায় কর্তাদের কাছে দাবি করেছিল মিশাল। একই ভাবে হাওড়ার বাগনানের বাইনানে পাঁচ কোটি টাকা খরচে ৯ একর জমি কিনতে চেয়েছিল ওই সমবায় এবং দুই ক্ষেত্রেই জমি কেনার দায়িত্ব পেয়েছিল সার্ভিস প্রোভাইডার। ইডি-র বক্তব্য, এমন সব তথ্যই এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন