‘রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য’ এ বার লালগড়ে!

এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কোত্থেকে, কোন পথে লালগড়ে এল, তার সদুত্তর বনকর্তাদের কাছে নেই। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় গত ৫০-৬০ বছর বাঘের দেখা মেলেনি। ফলে, এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৩
Share:

লালগড়ে ধরা পড়ে এই হানাদার। ফাইল চিত্র।

পায়ের ছাপ, গরু-বাছুরের মৃত্যুতে রটেছিল— লালগড়ে জঙ্গলে হানা দিয়েছে বাঘ। বনকর্তারা গোড়ায় সে কথা উড়িয়ে দিলেও জঙ্গলে বসানো ক্যামেরার ছবি শুক্রবার সামনে আসতেই সব অঙ্ক ওলটপালট। ছবিতে স্পষ্ট, ঝরা পাতার জঙ্গলে রাজকীয় ভঙ্গিমায় ঘুরছে পূর্ণবয়স্ক একটি বাঘ।

Advertisement

ভুটানের পাহাড় থেকে তরাইয়ের নেওড়া উপত্যকায় বাঘের আনাগোনা চলছে। গত বছর ট্র্যাপ-ক্যামেরায় একাধিকবার তার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু যে জঙ্গল মাওবাদী-ঘাঁটি ছিল, যেখানে দাপায় দলমার দাঁতাল, সেখানে বাঘের হদিসে হইচই পড়েছে। অনেকেই বলছেন, ‘রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য’ এ বার লালগড়ে!

কিন্তু এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কোত্থেকে, কোন পথে লালগড়ে এল, তার সদুত্তর বনকর্তাদের কাছে নেই। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় গত ৫০-৬০ বছর বাঘের দেখা মেলেনি। ফলে, এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের কথায়, ‘‘বাঘ ধরতে একটি দল গিয়েছে। ধরা পড়লে তার মতিগতি বুঝে ও দিল্লির অনুমতি মিললে তাকে বক্সায় পুনর্বাসন দেওয়া হতে পারে।

Advertisement

মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা জানিয়েছেন, আজ, শনিবার সকাল থেকে খাঁচা পাতার তোড়জোড় শুরু হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, লালগড়ের বন বাঘের পাকা ঠিকানা নয়। খাবার ও সঙ্গিনীর অভাবে সে হয়তো গভীর জঙ্গলে পাড়ি দেবে। সে ক্ষেত্রে ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ বাঁকুড়ার সুতান তার গন্তব্য হতে পারে। যদিও ময়ূরঝর্না হস্তী প্রকল্প রূপায়িত হলে বাঘটিকে হয়তো ঠিকানা বদলাতে হতো না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদিচ্ছা সত্ত্বেও লাল ফিতের গেরোয় সেই প্রকল্প অবশ্য থমকে।

হানাদার: লালগড়ের জঙ্গলে ডোরা-কাটা। ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে।

লালগড়ের জঙ্গলে বড় বড় পায়ের ছাপ এবং হিংস্র প্রাণীর হানায় ৭টি গরুর মৃত্যু এবং ৩টি গরু জখম হওয়ায় ৭টি ট্র্যাপ-ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। কাঁটাপাহাড়ির জঙ্গলখাসের মেলখেরিয়ার ফাঁদ-ক্যামেরাতেই বন্দি হয়েছে বাঘের ছবি। প্রথম ছবি উঠেছে শুক্রবার ভোর ৪টে ২৮ মিনিটে, শেষটি সকাল সওয়া ছ’টায়।

কোন পথে লালগড়ে (সম্ভাব্য)

• ওডিশার সিমলিপাল থেকে গরুমহিষানি-দুমারিয়া হয়ে সুবর্ণরেখা-কংসাবতী পেরিয়ে

• ঝাড়খণ্ডের পলামু থেকে পূর্ব সিংভূম-হাতিবাড়ি হয়ে

• ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে বেলপাহাড়ির কাঁকরাঝোড় হয়ে লালগড়ের পথে

কেন লালগড়ে

• ঝাড়খণ্ড-ওডিশার খনি এলাকায় খোঁড়াখুঁড়িতে অতিষ্ঠ

• সঙ্গিনীর খোঁজে

তুমি যে এখানে...

• কাঁটাপাহাড়ির জঙ্গল খাসের মেলখেরিয়ায় পাতা ফাঁদ ক্যামেরায় বন্দি বাঘ

• ছবি উঠেছে চারটি। প্রথম শুক্রবার ভোর ৪-২৮’এ, শেষ ৬-১৫’য়

• বাঘ ধরতে সুন্দরবনের দল

কিন্তু বাঘটি এল কোত্থেকে?

রাজ্য বন দফতরের অবসরপ্রাপ্ত চিফ কনজারভেটর প্রণবেশ সান্যালের মতে, সিমলিপাল থেকেই আসার সম্ভাবনা বেশি। ঝাড়খণ্ড, এমনকী ছত্তীসগঢ় থেকেও বাঘটি আসতে পারে বলে বনকর্তাদের একাংশ মনে করছেন। দলমা থেকে হাতিদের চেনা পথে বাঘ আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

বাঘ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সরিস্কা থেকে বাঘ রাজস্থানের ভরতপুর পক্ষী অভয়ারণ্যে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রের নাগজিরার জঙ্গল থেকে জয় নামে একটি বাঘ প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে উম্বেদ কারহান্ডলায় এসেছিল। অসমের কাজিরাঙা থেকে মানস পর্যন্ত ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে। বন দফতরের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য জয়দীপ কুণ্ডুর সংযোজন, ‘‘বাঘ একটানা দীর্ঘপথ চলে না। মাঝে থেমে, শিকার করে এগোয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন