পুলিশের নামে অ্যাপ-গুজবে বিভ্রান্তি চরমে

এই বিভ্রান্তির সর্বশেষ সংযোজন রবিবার রাতে ছড়ানো কলকাতা পুলিশের নাম এবং লোগো ব্যবহার করে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা। তাতে বলা হয়েছে, সোমবার থেকেই সব কল রেকর্ড করা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০৪:০৪
Share:

‘বার্তা’ যখন ভিত্তি-নির্ভর খবর, তা রটে গেলে বেশি মানুষের কাছে সংবাদটা পৌঁছয়। তাতে হয়তো সমস্যা নেই। কিন্তু এমন কিছু ‘বার্তা’ রটছে, যা খবর নয়, গুজব। তাতে সমাজ ও সামাজিকের সমস্যা বাড়ছে। এবং সমস্যার উপরে সমস্যা হল, সেটা রটাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া!

Advertisement

কখনও কলকাতা পুলিশের নাম করে সব ফোন-কল রেকর্ড করা, ফেসবুক-টুইটারে নজরদারি চালানো, কখনও বা কেন্দ্রীয় সরকারের নাম করে ফেসবুকে নানা বিষয় পোস্ট করা। গুজবের মধ্যে আছে এই সব কিছুই। প্রশাসনের দাবি, এই ধরনের কোনও নির্দেশিকা নেই। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া বা মেসেঞ্জার অ্যাপে আমজনতা এ-সব গুজব পড়েই বিভ্রান্ত হচ্ছে, উদ্বিগ্ন হচ্ছে।

এই বিভ্রান্তির সর্বশেষ সংযোজন রবিবার রাতে ছড়ানো কলকাতা পুলিশের নাম এবং লোগো ব্যবহার করে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা। তাতে বলা হয়েছে, সোমবার
থেকেই সব কল রেকর্ড করা হবে। ফেসবুক ও টুইটারে আপত্তিকর কিছু ছড়ানো হচ্ছে কি না, তার উপরে নজরদারি চালানো হবে। এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ-সব যাতে করা না-হয়, সেই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে এই ধরনের হুঁশিয়ারি হয়তো অপরাধ নয়। কিন্তু একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম করে মিথ্যে কথা রটানো অবশ্যই অপরাধ। কোনও গুরুতর অপরাধ ছা়ড়া সাধারণ মানুষের ফোন-কল রেকর্ড করাও আইনত স্বীকৃত নয়।

Advertisement

লালবাজারের খবর, এমন ভুয়ো খবর বা গুজব এর আগেও ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু কে বা কারা এই সব গুজব ছড়ানোর মূলে আছে, তা জানা যায়নি। যদি কোনও নাগরিক এই বিষয়ে অভিযোগ জানান, সে-ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘‘কোনও নতুন নিয়ম চালু করা হলে তা আমাদের ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। কোনও উড়ো খবরে বা গুজবে কান দেওয়ার আগে বিষয়টি ভাল ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত,’’ বলেন কলকাতা পুলিশের এক কর্তা।

কিন্তু এই গুজবের পিছনে কে বা কারা, তা জানা গেল না কেন?

রাজ্যের সাইবার সংক্রান্ত মামলার বিশেষ কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য মেলে না। ফলে তদন্তে নেমে সূত্র খুঁজে পাওয়া মুশকিল। লন্ডনে বিস্ফোরণের আগে হোয়াটসঅ্যাপ মারফত বার্তা চালাচালি হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ে তথ্য দিতে অস্বীকার করে হোয়াটসঅ্যাপ। পরবর্তী কালে ব্রিটেন সরকার এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের জন্য ‘ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ারস অ্যাক্ট, ২০১৬’ নামে একটি আইন চালু করে। এ দেশেও তেমন জোরালো আইন প্রয়োজন। তবে এই ধরনের বার্তা ছড়ানো রুখতে পুলিশ মামলা ঠুকে তদন্ত শুরু করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সাইবার আইনজীবী রাজর্ষি রায়চৌধুরী মনে করেন, এই ধরনের গুজব রুখতে পুলিশের উচিত স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করতেই পারে। সম্প্রতি এমনই একটি ‘মেসেজ’ পেয়ে তিনি লালবাজারের সাইবার থানায় কথাও বলেছিলেন। সাইবার বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, আগুপিছু খতিয়ে না-দেখে মেসেজ ছড়াতে থাকেন অনেকে। এটাও উচিত নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement