গুজবে‌ মার খেয়ে মৃত্যু হবিবপুরে

কয়েক দিন ধরেই হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকে গুজব ছড়াচ্ছে— এলাকায় জঙ্গি ঢুকেছে, চোর-ডাকাত-ছেলেধরা ঘুরছে। মেয়েদের যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। এ রকম লোক ধরতে পারলে পিটিয়ে মারুন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৪
Share:

জ্বলছে বাস। হবিবপুরে। —নিজস্ব চিত্র

কয়েক দিন ধরেই হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকে গুজব ছড়াচ্ছে— এলাকায় জঙ্গি ঢুকেছে, চোর-ডাকাত-ছেলেধরা ঘুরছে। মেয়েদের যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। এ রকম লোক ধরতে পারলে পিটিয়ে মারুন।

Advertisement

কাজের খোঁজে শুক্রবার নদিয়ার হবিবপুর থেকে বর্ধমানের কালনায় গিয়েছিলেন পাঁচ জন। ভোটার কার্ড দেখানো সত্ত্বেও ছেলেধরা সন্দেহে তাঁদের লাঠি-রড দিয়ে পেটানো হয়। মারা যান অনিল বিশ্বাস (৪৮) নামে এক জন। বাকিরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তার মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

খবর আসার পর থেকেই ফুটছিল হবিবপুর। শনিবার বেলা ১০টা নাগাদ এলাকার হাজারখানেক বাসিন্দা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। রানাঘাট থেকে শান্তিপুরে কালনাঘাট যাওয়ার বাস আটকে পড়েছিল। ‘কালনা’ শব্দটি দেখেই উত্তেজিত জনতা যাত্রীদের নামিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তা দেখে অন্য সব বাসের যাত্রী, চালক, খালাসিরা নেমে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। জনতাকে হটাতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়। জনতার পাল্টা ইটে জখম হন কয়েক জন পুলিশকর্মী। শেষে র‌্যাফ নেমে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বাসে আগুন দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ আট জনকে আটক করেছে। কৃষ্ণনগর-রানাঘাট ও রানাঘাট-কালনাঘাট রুটে বাস চলাচল আপাতত বন্ধ।

Advertisement

এ দিনই সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হুগলির বলাগড়ে জিরাট-আসানপুর গ্রামে শিশুচোর সন্দেহে একটি গাড়ি আটকে মা-মেয়ে ও চালককে মারধর করেন গ্রামবাসীরা। গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। কল্যাণীর সেন্ট্রাল পার্কের রঞ্জুবালা ঘোষ ও তাঁর মেয়ে অপর্ণা জিরাটে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই কয়েকশো গ্রামবাসী শাবল, তির-ধনুক, লাঠি-সোঁটা নিয়ে গাড়ি ঘিরে ফেলেন। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে কল্যাণী হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন গ্রামবাসী। পুলিশকে লক্ষ্ করে ইট-তিরও ছোড়া হয়। কয়েক জন পুলিশকর্মী জখম হন। এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।

কালনায় মারধর করে খুনের ঘটনায় সাত যুবক ও পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মারধরের হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও শহরে ছড়াচ্ছিল। সেটি দেখেই পুলিশ জড়িতদের অনেককে চিহ্নিত করেছে। গণপিটুনিতে নিহতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কালনা মহকুমা প্রশাসন। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ চাকদহ থেকেও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সবর্ত্রই কড়া নজরদারি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন