সরকারি চালে পেট ভরে না, নেই চালের পলিথিনও

জলভরা দিঘির ধার বরাবর সেই রাস্তা অল্প বৃষ্টিতেই ডুবে যায়। হাঁটাচলাই তখন দায়। বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এবড়ো খেবড়ো কাঁচা রাস্তার ধারে সার দিয়ে শবরদের মাটির অথবা ছিটেবেড়ার বাড়ি।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

দহিজুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৩
Share:

দুর্দশা: ঘরের হাল এমনই। দহিজুড়ির শবরপাড়ায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

পনেরো দিনে ৭ জন শবরের মৃত্যু সামনে এনে দিয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় ব্লকের জঙ্গলখাস মৌজার বাসিন্দা লোধা-শবরদের দুর্দশার ছবি। অন্যত্র কেমন আছেন তাঁরা?

Advertisement

ওই ব্লকেরই অন্য প্রান্ত দহিজুড়ির লোধাপাড়াতেও ছবিটা সেই নেই-রাজ্যের। জেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে দহিজুড়ি পঞ্চায়েত অফিসের ঠিক পিছনেই এই লোধাপাড়া। দোতলা অফিসের পাশ দিয়ে কিছুটা ঢালাই রাস্তা হয়েছে। বাদবাকি শবরপাড়ায় যাওয়ার রাস্তাই নেই। জলভরা দিঘির ধার বরাবর সেই রাস্তা অল্প বৃষ্টিতেই ডুবে যায়। হাঁটাচলাই তখন দায়। বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এবড়ো খেবড়ো কাঁচা রাস্তার ধারে সার দিয়ে শবরদের মাটির অথবা ছিটেবেড়ার বাড়ি। লম্বু মল্লিকের মাটির বাড়ির ছাদে পলিথিনের চাদর। লম্বু বলেন, “মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করি। বাকি সময় জঙ্গলের ডালপাতাই ভরসা। পঞ্চায়েত অফিস থেকে পলিথিন মেলেনি। এক জনের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে এনেছি।” বৃদ্ধা যতন মল্লিক বলেন, ‘‘জঙ্গলে গিয়ে ঝাঁটি (শুকনো ডালপাতা) কুড়িয়ে এনে বিক্রি করি। হাড়ভাঙা খাটুনি। কিন্তু সেই মতো খাবার কোথায়? সপ্তাহে মাথাপিছু দু’কেজি চালে কি পেট ভরে!’’

দহিজুড়িতে রয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, প্রাথমিক স্কুল। লোধা শিশুদের কেউ কেউ স্কুলে ভর্তি হয় বটে, কিন্তু পরে স্কুলছুট হয়ে যায়। কেউ আবার স্কুলেই যায় না। ২১ বছরের জয়ফল মল্লিক যেমন। বছর দু’য়েক আগে তাঁর জোয়ান দাদা বিফল অসুখে মারা গিয়েছেন। তৃণমূল পরিচালিত দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ফাল্গুনী দে বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্বে এসেছি। লোধাপাড়ার উন্নয়নে নতুন করে সমীক্ষা শুরু হয়েছে।”

Advertisement

লোধাপাড়ায় অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। যেমন, বহু ক্ষেত্রে বার্ধক্য এবং প্রতিবন্ধী ভাতা মেলে না। বাড়ি তৈরির পুরো টাকা না-মেলায় তা অসমাপ্ত পড়ে থাকে। তৈরি হয় না রাস্তা। লালগড়ের বিডিও মহম্মদ ফৈজান আসরাফ আনসারি বলেন, “লোধা ও শবর পাড়াগুলি নিয়মিত পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি পরিষেবা যথাযথ ভাবে পৌঁছে দিতে সর্বতো ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।”

তৃণমূলের দহিজুড়ি অঞ্চল সভাপতি নন্দদুলাল ত্রিপাঠী অবশ্য লোধা-শবরদেরই দুষছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওরা ঘরের ইট-কাঠ বিক্রি করে দিয়ে মদ-মাংস খেয়ে টাকা শেষ করে। মদের নেশা কোনও ভাবেই ছাড়ানো যাচ্ছে না।’’ মেদিনীপুর লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাইচন্দ্র নায়েকের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘লোধা-শবরদের উন্নয়নের টাকা মাঝপথে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। তাই এই ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে। এই ধরনের অভিযোগ তুলে শবর সম্প্রদায়ের অপমান করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন