প্রয়াত অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

তারাতলার কাছে বন্দর কর্তৃপক্ষের হাসপাতালে সাহিত্যিক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। আজ, রবিবার সকালে নিমতলায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০০
Share:

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

দীর্ঘ বর্ণময় জীবনে তাঁর স্মৃতির ঝাঁপিতে জমা ছিল অজস্র হিরে-জহরত! শেষ পর্বে বার্ধক্যজনিত উপসর্গে কিছুটা অসংলগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন। বছর দেড়েক আগে স্ত্রীবিয়োগের ধাক্কাও সে-ভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেননি। মাঝে-মাঝেই খুঁজতেন দীর্ঘ দাম্পত্যের সঙ্গী মমতাদেবীকে। শনিবার বিকেলে সেই জীবনে যবনিকাপাত ঘটল। তারাতলার কাছে বন্দর কর্তৃপক্ষের হাসপাতালে সাহিত্যিক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। আজ, রবিবার সকালে নিমতলায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

অতীনবাবুর দুই পুত্র, তাঁদের পরিবারবর্গ রয়েছেন। ছোট ছেলে, চিকিৎসক শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বৃহস্পতিবার রাতে অতীনবাবুর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তারপর আর সাড় ফেরেনি।

অতীনবাবুর জন্ম সাবেক পুব বাংলায়, নারায়ণগঞ্জের কাছে রাইনাদি গ্রামে। দেশভাগের পরে সর্বস্ব খুইয়ে কলকাতায় শূন্য থেকে শুরু করা। জাহাজের স্টোকার থেকে শুরু করে নানা চাকরি করেছেন। নানা দেশ দেখেছেন। তাঁর লেখায় সে-সব অভিজ্ঞতা গভীর অনুভবের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে। আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ৫০টি গল্প-সংকলনের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন অতীনবাবু। এ ছাড়াও নানা স্বীকৃতি এসেছে লেখক-জীবনে। ওঁর শেষ উপন্যাস ‘পরমেশ্বরী’ও স্মৃতিকথামূলক। কয়েক বছর আগে একটি পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে তা প্রকাশিত হচ্ছিল। অতীনবাবুর বেশির ভাগ বইয়ের প্রকাশক বামাচরণ মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘বইটি আর কয়েক দিন বাদেই

Advertisement

বেরোনোর কথা। প্রচ্ছদ দেখে অতীনবাবু খুশি হয়েছিলেন।’’

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সংযোজন: অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও সেই অর্থে আঁতেল ছিলেন না। তিনি বিশ্ব সাহিত্যের পণ্ডিত বা হয়তো রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞও নন। কিন্তু জীবনকে মন্থন করে উঠে আসা বিষামৃতই তাঁর লেখাকে

স্মরণীয় করে তুলেছে। অদ্ভূত কবিতাকল্প ভাষা ছিল অতীনের। ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সৃষ্টি। এখনও পাঠকমহলে বইটির ভাল কদর। পূর্ববঙ্গের ফেলে আসা জীবন, গ্রাম, জীবন্ত সব চরিত্র অসামান্য কাব্যময়তায় উঠে এসেছে। এমন জীবনও খুব বেশি সাহিত্যিকের নয়! অতীন তো আমার অনেক দিনের বন্ধু। তুই-তোকারি সম্পর্ক। দু’জনের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক

যোগাযোগও ছিল। অতীন নিজের বিষয়ে সরল মনে কত কথাই বলতেন। উদ্বাস্তু জীবনে বাঁচার তাগিদেই জাহাজের চাকরি জুটিয়েছিলেন। জাহাজের খোলে অসহ্য গরমে বয়লারে কয়লা জোগানের কাজ। তখন আর্জেন্টিনা গিয়ে একটি

মেয়ের সঙ্গে ওঁর প্রেম হয়েছিল। ‘অলৌকিক জলযান’-এ সেই জাহাজের জীবনের কথা রয়েছে। পরে কলকাতায় ফিরে বিএ-বিটি পাশ করেছিলেন। চাকরির চেষ্টায় মুম্বই যাত্রা, কৌটোর কারখানায়

ম্যানেজারি থেকে খবরের কাগজের চাকরি— নানা অভিজ্ঞতা অতীনের জীবনে। চণ্ডালদের জীবন নিয়ে অতীনের লেখাও আমার খুব প্রিয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন