স্ত্রীর অ্যাকাউ​ন্টে স্বামীর মাইনে, নিদান এসডিও-র

মাসের শুরুতে বেতন মিলছে ঠিকই। কিন্তু, খরচের রাশ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এত দিন স্ত্রী সংসার খরচের জন্য হাত পাততেন। এ বার নিজের রোজগারের টাকাই স্ত্রী-র কাছে চাইতে হচ্ছে স্বামীকে! বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক দুই সরকারি কর্মীকে ‘শায়েস্তা’ করতে এমনই নিদান দিয়েছেন।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭ ০৩:১৪
Share:

মাসের শুরুতে বেতন মিলছে ঠিকই। কিন্তু, খরচের রাশ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এত দিন স্ত্রী সংসার খরচের জন্য হাত পাততেন। এ বার নিজের রোজগারের টাকাই স্ত্রী-র কাছে চাইতে হচ্ছে স্বামীকে! বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক দুই সরকারি কর্মীকে ‘শায়েস্তা’ করতে এমনই নিদান দিয়েছেন।

Advertisement

ওই দু’জনের এক জন কংসাবতী সেচ দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। অন্য জন, বাঁকুড়ার একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। পরিবারের উপর নির্যাতন চালানো ও অবহেলা করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। যার প্রেক্ষিতে এক অভিনব শাস্তি বিধান করেছেন মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালা। পদাধিকার বলে যিনি ম্যাজিস্ট্রেটও। এক জন সংশোধনের পথে এগোলেও অন্য জন স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মহকুমাশাসকেরই দ্বারস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে এখন চর্চা বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের অন্দরে। কর্মীদের একাংশের মতে, এটাই উচিত শাস্তি। অন্য অংশ আবার রোজগেরে স্বামী হাত থেকে রোজগার খরচের অধিকার ‘কেড়ে নেওয়ার’ বিপক্ষে।

গত ডিসেম্বরে, স্কুল শিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী কাছে অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামী নির্যাতন চালাচ্ছেন। এমনকী ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ বা সংসারে প্রয়োজনীয় খরচের জন্য টাকা-পয়সাও দেন না। জানুয়ারি মাসে কংসাবতী দফতরের ওই কর্মীর বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেন, এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে স্বামী নিজের পরিবারকে দেখছেন না। এমনকী, নিজের বয়স্ক বাবা-মাকেও অবহেলা করছেন তিনি।

Advertisement

অভিযোগের তদন্ত করে ২৭ ডিসেম্বর মহকুমাশাসক ওই স্কুল শিক্ষকের মাস মাইনের ৬০ শতাংশ টাকা যাতে তাঁর স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে, সেই নির্দেশ জারি করেন। জানুয়ারি থেকেই তা কার্যকর হয়েছে। কংসাবতীর চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ক্ষেত্রে শাস্তিটা তুলনায় কড়া। মাস মাইনের পুরো টাকাই মাসে-মাসে তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার নির্দেশ ২ ফেব্রুয়ারি মহকুমাশাসক দেন। তবে স্বামী যাতে একেবারেই ‘অর্থ-হীন’ না হয়ে পড়েন, সে বন্দোবস্তও করেছেন মহকুমাশাসক। তাঁর নির্দেশ, বেতনের টাকার ২০ শতাংশ স্বামীর হাতে তুলে দেবেন স্ত্রী। নির্দেশ কার্যকর করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে কংসাবতী সেচ বিভাগ।

মহকুমাশাসক বলেন, “অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। পরিবার যাতে ভাল থাকে, তা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাব-ডিভিশনাল এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ওই কর্মীদের মাইনে তাঁদের স্ত্রী-র অ্যাকাউন্টে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার আমার রয়েছে।”

নির্দেশ জারি হওয়ার পরেই পরিবারের মন জয়ের চেষ্টা শুরু করেছেন সেচকর্মী। তাঁর কথায়, “বাবা, মা, স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গেই আমি থাকতে চাই।” যদিও না আঁচিয়ে স্বামীকে বিশ্বাস করতে নারাজ বলে জানিয়ে দিচ্ছেন স্ত্রী। স্কুল শিক্ষক কিন্তু ভাঙলেও মচকাচ্ছেন না। মহকুমাশাসকের কাছে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “আমার মাইনের বড় অংশ পেয়ে এখন স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে স্ত্রী। বাড়িতে আমার খাবার জুটছে না।’’ যদিও তাঁর স্ত্রীর দাবি, “স্বামী মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন