রাতে ফোন করে প্রথমে বলেছিলেন, ভোরে অটো নিয়ে পৌঁছে যেতে। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরে ফোন করে জানান, অটোয় হবে না, গাড়ি চাই তাঁর। ব্যাঙ্কের আধিকারিক সমরেশ সরকারের কথা মতো গাড়ির বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন তিনি— আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে সে কথাই জানালেন দুর্গাপুরের অটোচালক মহম্মদ নিয়াজউদ্দিন।
দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা সুচেতা চক্রবর্তী ও তাঁর চার বছরের মেয়ে দীপাঞ্জনাকে খুনের মামলায় এ দিন শ্রীরামপুর আদালতে সাক্ষ্য দেন নিয়াজউদ্দিন। শ্রীরামপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক রাজা চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। গত বছর অগস্টে শেওড়াফুলির কাছে মাঝগঙ্গায় ব্যাগ ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ে যান সমরেশ। অভিযোগ, ‘প্রেমিকা’ সুচেতা ও তাঁর মেয়ে দীপাঞ্জনাকে খুন করেন সমরেশ। তার পরে সুচেতার দেহ কয়েক টুকরো করে দেহাংশ তিনটি ব্যাগে ও দীপাঞ্জনার দেহ একটি ব্যাগে ভরে গঙ্গায় ফেলতে গিয়েছিলেন তিনি।
বিধাননগরে সুচেতার আবাসন থেকে দেহাংশ ভরা ব্যাগ নিয়ে একটি গাড়িতে সমরেশ বর্ধমানে পৌঁছেছিলেন বলে জেনেছিল পুলিশ। এ দিন আদালতে মামলার সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তরে নিয়াজউদ্দিন জানান, দুর্গাপুরে থাকাকালীন সমরেশ মাঝেমধ্যেই তাঁর অটোয় চেপে যাতায়াত করতেন। কখনও তাঁর সঙ্গে এক মহিলা ও এক শিশুকন্যা থাকত। মেয়েটিকে নিয়ে ওই মহিলা বিধাননগর হাউসিং থেকে অটোয় চাপতেন। নিয়মিত যাতায়াত করায় সমরেশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। গত অগস্টের শেষ দিকে এক সন্ধ্যায় সমরেশ তাঁকে ফোন করে জানান, পরের দিন ভোরে তাঁর অটোটি ভাড়া লাগবে। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরেই আবার ফোন করে জানান, অটোয় হবে না। গাড়ি দরকার।
পুলিশের কাছে নিয়াজউদ্দিন ঘটনার পরে জানিয়েছিলেন, তিনি ও তাঁর দাদা গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন কাকভোরে। চারটে ব্যাগ-সুটকেস নিয়ে আবাসনের পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠেন সমরেশ। তার পরে তাঁর দাদাকে জানান, বর্ধমানে ছেড়ে দিতে হবে। এ দিন আদালতে নিয়াজুদ্দিনের দাবি, তিনি তখন সমরেশকে জানান, তাঁর দাদার গাড়ি আছে। দাদার মোবাইল নম্বরও সমরেশকে দেন। পরে পুলিশের কাছে শোনেন, ওই মহিলা এবং শিশুকে খুন করে দেহ টুকরো করে ব্যাগে ভরে শেওড়াফুলিতে গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন সমরেশ। তিনি আরও জানান, ওই ঘটনায় পুলিশ তাঁকে জেরা করেছে। শ্রীরামপুর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ দিন আদালতে সমরেশকে শনাক্তও করেন নিয়াজউদ্দিন। আসামীপক্ষের আইনজীবী ধূর্জটিনারায়ণ পাকড়াশির প্রশ্নে তিনি জানান, সমরেশের মোবাইল নম্বর তিনি মনে করতে পারবেন না। তবে তাঁর মোবাইলে সেই নম্বর ‘সেভ’ করা আছে। তা দেখে বলতে পারবেন।