অভিনেতা নয়, মানুষ সঞ্জয়ের জাদু কি ঝাপ্পি

বলিউডের ‘বেয়াড়া বাচ্চা’ তকমাটা এখন অনেক দূরের! বরং কলেজের তরুণ তুর্কিদের প্রেরণা হয়ে এ শহরে ফিরে এলেন তিনি। শেষ এসেছিলেন এক দশক আগে। শরৎচন্দ্রের কাহিনি ‘পরিণীতা’র সেই শ্যুটিং-পর্বেও তিনি ছিলেন আইনের চোখে অভিযুক্ত। কিন্তু সোম-সন্ধ্যায় কলামন্দির প্রেক্ষাগৃহে যাঁকে দেখল কলকাতা, তিনি মুক্ত পুরুষ। কিন্তু কঠিন পথ চলার ধাক্কাগুলো ভোলেননি। ঘাড় সোজা করেই এক-একটি ক্ষতচিহ্ন যত্নে বয়ে বেড়াচ্ছেন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

নবান্নে মু্খ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সঞ্জয় দত্ত। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

বলিউডের ‘বেয়াড়া বাচ্চা’ তকমাটা এখন অনেক দূরের! বরং কলেজের তরুণ তুর্কিদের প্রেরণা হয়ে এ শহরে ফিরে এলেন তিনি।

Advertisement

শেষ এসেছিলেন এক দশক আগে। শরৎচন্দ্রের কাহিনি ‘পরিণীতা’র সেই শ্যুটিং-পর্বেও তিনি ছিলেন আইনের চোখে অভিযুক্ত। কিন্তু সোম-সন্ধ্যায় কলামন্দির প্রেক্ষাগৃহে যাঁকে দেখল কলকাতা, তিনি মুক্ত পুরুষ। কিন্তু কঠিন পথ চলার ধাক্কাগুলো ভোলেননি। ঘাড় সোজা করেই এক-একটি ক্ষতচিহ্ন যত্নে বয়ে বেড়াচ্ছেন।

টকশো-র মঞ্চে এ হেন ‘কাম ব্যাক’ মুহূর্তে সত্যিই ঘাড় ঘুরিয়ে তাঁর জেল-জীবনের একটি স্মারক মেলে ধরলেন সঞ্জয় দত্ত। রং করা চুলের পনিটেল-মার্কা ঝুঁটি বা ‘চুটিয়া’খানা জেলেরই এক সঙ্গী ‘মিশ্রজি’র উপহার! পেশায় নাপিত সেই জেলতুতো বন্ধুটি খুনের আসামি। জেল সুপারের বিশেষ অনুমতিমাফিক তিনি ‘মুন্নাভাই’-এর চুল কেটে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জেল থেকে বেরোনর সময়েও এই ঝুঁটির কেতা ধরে রাখতে। সঞ্জয়ের সহাস্য ঘোষণা, ‘‘এ আমার ব্লন্ড চুটিয়া! পারলে এই স্টাইলই ধরে রাখব।’’

Advertisement

‘দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা’র সহযোগিতায় ভবানীপুর কলেজের পড়ুয়াদের জন্য অনুষ্ঠানে আর এক অভিনব উপহার পেলেন ৫৭ বছরের সুঠাম ঝুঁটিধারী! একটি খেলনা ‘একে-৪৭’ রাইফেল তাঁর হাতে দিয়ে সঞ্চালক মির ওটা সঞ্জয়ের ছেলেকে দিতে বললেন। শুনে ‘খলনায়ক’-এর জবাব, ‘‘হ্যাঁ দেব! দিয়ে বলব এ জিনিস জীবনে কখনও ধরিস না!’’ মিরের রসিকতা, সৌরভের শো ‘দাদাগিরি’ হলে সঞ্জয়ের শো কি ‘টাডাগিরি’ হবে? শুনে ‘মুন্নাভাই’ বাউন্ডারি হাঁকালেন, ‘‘আমার তো গাঁধীগিরিই পছন্দ।’’ বেআইনি অস্ত্র হাতে রাখার অভিযোগে টাডা আইনে নাজেহাল লোকটির গোটা জীবনই পাল্টে দিয়েছে ‘মুন্নাভাই’ ও ‘গাঁধী’! সে-কথা তুলে ধরে সঞ্জয় শোনালেন, পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে গাঁধীর স্মৃতি-জড়িত জায়গাটি তাঁর কাছে তীর্থ হয়ে উঠেছিল। ‘‘মনে-মনে বলতাম, এখানেও তুমি আমায় ছাড়লে না! গাঁধী পড়া একটা অভিজ্ঞতা! জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বেরোনর সময়ে ওই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে ওঁকে মনে-মনে ‘স্যালুট, স্যার’ বলে এসেছিলাম!’’

কলকাতা সফরের কয়েক ঘণ্টায় ‘নবান্ন’তেও ঢুঁ মেরেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে আধ ঘণ্টা কাটিয়ে স্মরণ করলেন, জেল-জীবনে ‘মমতাদিদি’ তাঁর পাশে ছিলেন। খানিকটা যেন পুরনো জীবনের ঋণ চোকাতেই মুক্ত কারাগার নিয়ে রাজ্য সরকারের কাজ কিংবা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অনুষ্ঠানের নেমন্তন্ন— সব কিছুতে সঙ্গে থাকার অঙ্গীকারটি রেখে গেলেন ‘সঞ্জুবাবা’।

নবীন প্রজন্মের সামনে তিনি এখন মুখোশহীন একটি মানুষ। শোনা যায়, আপনি নাকি মা নার্গিসের অকালমৃত্যুর শোকেই ড্রাগ ধরেছিলেন? জবাবে সোজা বললেন, ‘‘না না ও রকম বলাটা অজুহাত হবে। আমি নিজে চেয়েছিলাম, তাই মাদকের খপ্পরে পড়ি।’’ পড়ুয়াদেরও বারবার সাবধান করলেন, ‘‘আমার মতো মাদকের নেশা ধরলে শুধু তুমি নও, গোটা পরিবার গোল্লায় যাবে!’’

এই চড়াই-উতরাই দেখা জীবন নিয়েই এখন সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক তৈরির কাজ করছেন মুন্নাভাই-এর স্রষ্টা রাজকুমার হিরানি। আড্ডার আসরে সেই জীবনের ছোঁয়াচই কলকাতার জন্য ‘জাদু কি ঝাপ্পি’র উত্তাপ ছড়িয়ে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন