কড়া পাহারায় সাঁতরাগাছি ফুট ওভার ব্রিজ। —ফাইল ছবি।
প্রতিদিন শহরতলি ও দূরপাল্লার ট্রেনে ওঠেন যত যাত্রী, তার তিন গুণেরও বেশি নামেন সাঁতরাগাছি স্টেশনে। ফলে আয় কম হলেও পরিকাঠামো এবং পরিষেবা দেওয়ার দাবি এখানে অনেকটাই বেশি। অথচ সেখানেই বিস্তর পিছিয়ে রেল। জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানোর মাসুল দিতে হল দু’টি তরতাজা প্রাণকে।
বুধবার, রেলের তরফে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়া হলেও কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা এবং গাফিলতিকে দায়ী করছেন আধিকারিকদের একাংশ। রেলের তরফে প্রাথমিক ভাবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অল্প সময়ের ব্যবধানে ৮টি ট্রেনের এসে পড়াকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও যাত্রীসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকাঠামো উন্নত না করাকেই দূষছেন ওই আধিকারিকেরা।
রেল সূত্রে খবর, সাঁতরাগাছি থেকে প্রতিদিন টিকিট কেটে যাতায়াত করেন এমন যাত্রীর সংখ্যা ১৫-২০ হাজারের মধ্যে। কিন্তু গড়ে ৫০-৬০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন ওই স্টেশনে নামেন। কিন্তু পরিকাঠামো ২০ বছর আগের অবস্থাতেই থমকে রয়েছে।
যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই ফুট ব্রিজটি ১৯৯৭ সালে তৈরি। ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ১৩২ মিটার লম্বা ফুটব্রিজটি মাত্র ২.৮ মিটার চওড়া। লাগেজ নিয়ে পাশাপাশি ৪ জন হাঁটলেই পুরো পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ফুট ব্রিজে এবং সিঁড়িতে পর্যাপ্ত আলো, সিসি-ক্যামেরা, ডিসপ্লে-বোর্ড, রক্ষী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য র্যাম্প, এসক্যালেটর কিছুই নেই। কার্যত অন্ধকারের মধ্যে হুড়োহুড়িতে অনেকে আহত হন বলে অভিযোগ।
হাওড়া স্টেশনের উপর চাপ কমাতে বছর দুয়েক আগে সাঁতরাগাছি স্টেশনকে ঢেলে সাজার কাজ শুরু হয়। ওই কাজে ভবন নির্মাণের কাজ হলেও অনান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ তেমন গতি পায়নি বলে অভিযোগ।
ফলে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের প্রায় ১৩০ মিটার পথ হাঁটতে হয়। লোকাল ট্রেনের যাত্রীদেরও একই দশা। এর জেরে প্রায়ই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও রেল কর্তৃপক্ষ তা এত দিন অবহেলা করেছেন বলেও অভিযোগ। এমনকী ফুটব্রিজ থেকে প্ল্যাটফর্মে নামার জন্য সিঁড়িও অপর্যাপ্ত। বুধবার রেলের খড়গপুর ডিভিশনের আধিকারিকরা স্টেশনের ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখার সময় এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। ভিড় দ্রুত খালি করতে ফুটব্রিজের দু’পাশে সিঁড়ি তৈরির পরামর্শও দেন তাঁরা। পরিকাঠামো উন্নত না হওয়ার পিছনে স্টেশনের আয় কম হওয়াকেই দুষছেন রেলের আধিকারিকদের একাংশ। এ দিন স্টেশনে যাত্রী পরিবহণের পরিসংখ্যান চেয়ে পাঠান রেল কর্তারা।
ঘটনার সময় রেলের তরফে ঘোষণা এবং রেলরক্ষী বাহিনীর কর্মীদের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন বাড়তি রক্ষী মোতায়েন ছাড়াও রেলের স্কাউট বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবকদের ভিড় নিয়ন্ত্রণে নামানো হয়। তবে যাত্রীদের মতে সবটাই লোক দেখানো।
রেলের তরফে তদন্তকারী কমিটির অন্যতম সদস্য জি কে দ্বিবেদী বলেন, “সাধারণ ভাবে আধ ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট আগে ট্রেনের খবর জানানোই নিয়ম। এ ক্ষেত্রে ওই নিয়ম মানা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশপাশি অনান্য কারণও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
রেল পুলিশের পক্ষ থেকে এ দিন শালিমার জিআরপি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত, গাফিলতির কারণে মৃত্যু ঘটানো-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, ফুটব্রিজে ঠাসাঠাসি ভিড়ের মধ্যে এক যাত্রী ব্রিজ ভেঙে পড়ছে বলে চেঁচিয়ে ওঠায় আতঙ্ক ছড়ায়। যা মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন স্টেশনের ঘটনাকে মনে করাচ্ছে। কিন্তু ওই যাত্রীকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘তদন্ত রিপোর্ট আসার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’’
সাঁতরাগাছি ফুট ওভার ব্রিজ
• তৈরি হয়: ১৯৯৭ সালে
• ইস্পাতের কাঠামো ও কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে তৈরি
• দৈর্ঘ্য: ১৩২ মিটার
• প্রস্থ: ২.৮ মিটার
• সিঁড়ি: ৩ মিটার (আনুমানিক)
সূত্রঃ দক্ষিণ-পূর্ব রেল