এখন: মনোরঞ্জনা সিংহ।নিজস্ব চিত্র।
জামিন পেয়েও হাসপাতাল থেকে বেরোতে পারছেন না অসুস্থতা ও অর্থকষ্টে জর্জরিত মনোরঞ্জনা সিংহ।
সারদা কাণ্ডে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত ৪৮ বছরের এই ডাকসাইটে মহিলা সম্প্রতি শর্তাধীন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জামিন পেতে তাঁকে পৈতৃক সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয়েছে আদালতে।
আপাতত কলকাতার শরৎ বোস রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন মনোরঞ্জনা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ইউরিক অ্যাসিডের গুরুতর সমস্যায় দুই হাঁটুতে কোনও জোর পাচ্ছেন না তিনি। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা প্রায় নেই। চিকিৎসকদের কথায়, দীর্ঘদিন হাঁটাচলা বন্ধ থাকায় তার প্রভাব পড়ছে স্নায়ু ও হৃদযন্ত্রে। তাই নিয়মিত চিকিৎসার প্রয়োজন।
এবং মনোরঞ্জনা এখন প্রায় নিঃস্ব। তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক আমানতও কব্জায় নিয়েছে ইডি। ভাই মণীশ সিংহ, বাবা কেদারনাথ সিংহ ও মা শ্যামাই এখন তাঁর সহায়। নার্সিংহোমে বসে মণীশ বলেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যম আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। গুয়াহাটিতে এখনও একটি ছোট বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম পরিচালনা করি আমি। ওটাই এখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনের জায়গা।’’ মেয়ের জামিনের জন্য সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে নিঃস্ব হতে বসেছেন বাবা-মাও।
আরও পড়ুন: মেয়েদের জীবন-রেখাকে কুর্নিশ
মনোরঞ্জনার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানান, প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের সঙ্গে দীর্ঘদিন বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চালিয়েছেন তিনি। আইনি লড়াই চালিয়ে একমাত্র ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে পেরেছেন। কিন্তু, এখন একেবারেই হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন।
সারদা কাণ্ডে ২০১৫ সালের অক্টোবরে মনোরঞ্জনাকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। দিন দুই সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকার পরই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সিবিআইয়ের হেফাজতে এসি-র ব্যবস্থা, দিনে তিন বার পোশাক পরিবর্তনের অনুমতি-সহ নানা বায়নাক্কার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সিবিআইয়ের দেওয়া খাবার নাকি তিনি মুখেও তোলেননি। দু’দিন শুধু বিস্কুট ও ফল খেয়েই থেকেছেন।
তার পর থেকে প্রায় আঠেরো মাস একের পর এক হাসপাতাল বদল করে এখন শরৎ বোস রোডের ওই নার্সিংহোমে মনোরঞ্জনা। সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার পর ইডি আর একটি পৃথক মামলা দায়ের করে মনোরঞ্জনার প্রায় ৫০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক আমানত ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।
সিবিআই এবং ইডি-র জোড়া আক্রমণের মুখে এখন মনোরঞ্জনা। সিবিআই তাঁর ফ্রন্টিয়ার টেলিভিশন কোম্পানিটিও বন্ধ করে দিয়েছে। বাজেয়াপ্ত করেছে অফিসের আসবাবপত্রও। পরিবারের দাবি, মনোরঞ্জনা এখন একেবারেই কপর্দকশূন্য।