দিল্লিতে সাহায্যের আশ্বাস, শহরে তালা ভাঙল সিবিআই

সারদা তদন্তের নথি দেওয়ার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সিবিআই অধিকর্তাকে আশ্বস্ত করলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। আর সেই দিনেই সুদীপ্ত সেনের ছেলে শুভজিতের সল্টলেকের বাড়িতে তালা ভেঙে ঢুকতে হল সিবিআইকে। অভিযোগ, সিবিআই চাওয়া সত্ত্বেও ওই বাড়ির চাবি তাদের দেয়নি রাজ্য পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সল্টলেকের বাড়ি সিল করে দিচ্ছেন সিবিআই অফিসারেরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সৌভিক দে।

সারদা তদন্তের নথি দেওয়ার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সিবিআই অধিকর্তাকে আশ্বস্ত করলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। আর সেই দিনেই সুদীপ্ত সেনের ছেলে শুভজিতের সল্টলেকের বাড়িতে তালা ভেঙে ঢুকতে হল সিবিআইকে। অভিযোগ, সিবিআই চাওয়া সত্ত্বেও ওই বাড়ির চাবি তাদের দেয়নি রাজ্য পুলিশ।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার আগে সারদা কাণ্ডের তদন্ত করছিল রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। তদন্তে নেমে কিছু দূর এগিয়ে সিবিআই অভিযোগ করে, রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে তারা সমস্ত নথি পাচ্ছে না। সিবিআইয়ের অধিকর্তা রঞ্জিত সিন্হা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ওই সমস্ত নথি চেয়ে পাঠান। বৃহস্পতিবারই সেই সময়সীমা শেষ হয়। এ দিন দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি বৈঠকের ফাঁকে সিবিআই অধিকর্তার সঙ্গে আলাদা কথা বলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি। সারদা তদন্তের নথি দেওয়ার বিষয়ে সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। রঞ্জিত সিন্হা বলেন, “সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পর গত কয়েক দিনে বেশ কিছু নথি, প্রমাণ রাজ্য পুলিশ আমাদের হাতে দিয়েছে। যেহেতু এই তদন্তের ভার সুপ্রিম কোর্ট আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে, তাই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কাছ থেকে কী কী তথ্য পাওয়া গিয়েছে, কী কী পাওয়া যায়নি, তা জানানো হবে সর্বোচ্চ আদালতকেও।”

এ দিনই ওড়িশার শাসক দল বিজেডি (বিজু জনতা দল)-র সাংসদ রামচন্দ্র হাঁসদার বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। পশ্চিমবঙ্গের সারদা এবং ওড়িশার বেশ কিছু অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে একযোগে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। সেই রকমই একটি অর্থলগ্নি সংস্থা ‘নবদিগন্ত ক্যাপিটাল সার্ভিস লিমিটেড’-এর প্রতিষ্ঠাতা ডিরেক্টর হলেন রামচন্দ্র। তাঁর বাড়িতে থেকে নগদ ২৮ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সূত্রের খবর, রামচন্দ্র ছাড়াও এ দিন বিজেডির প্রাক্তন বিধায়ক সুবর্ণ নায়েক এবং বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক হিতেশ কুমার বাগার্তির বাড়িতেও হানা দেন তদন্তকারীরা। সুবর্ণ নায়েকের বাড়ি থেকে ২২ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিটের রসিদ এবং নগদ ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে।

Advertisement

তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সময়েই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এটি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। এতে যে সব ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি লাভবান হয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বার করতে হবে। ওড়িশার শাসক দলের সাংসদের বাড়িতে সিবিআই হানার পর মনে করা হচ্ছে, সেই প্রভাবশালীদেরই এ বার তদন্তের আওতার মধ্যে আনা শুরু হল। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে সারদার সঙ্গে যোগাযোগ থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও যে রেহাই দেওয়া হবে না, এ দিনের ঘটনায় তা-ও স্পষ্ট হয়ে গেল বলে মনে করছেন অনেকে। প্রসঙ্গত, এই রাজ্যেরও শাসক দলের সাংসদ কুণাল ঘোষ সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলে রয়েছেন।

সিবিআই সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত হাতে আসা নথিপত্রের ভিত্তিতে আরও কাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তার একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা, রাজ্য প্রশাসনের আমলা এবং সারদা-কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ অফিসারদের নাম রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সিবিআই অধিকর্তা বলেন, “এটুকু বলতে পারি, যাঁরা এই ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি, তাঁদের প্রত্যেককে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তাঁদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, যাঁদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।” এ বার একে একে তাঁদেরও ডাক পড়বে বলে সিবিআই-সূত্রের খবর।

এ দিন পশ্চিমবঙ্গেও দশটি জায়গায় হানা দেয় সিবিআই। যার মধ্যে রয়েছে সল্টলেকে সুদীপ্ত ও শুভজিতের বাড়ি। এফডি ব্লকে সুদীপ্তর বাড়ি থেকে তেমন কোনও নথি মেলেনি। বাড়িটি তল্লাশির পর সিল করে দেয় সিবিআই। এইচএ ব্লকে শুভজিতের বাড়ি থেকে একটি ল্যাপটপ, দু’টি মোবাইল ফোন ও কিছু দলিল মেলে। এই বাড়িতে ঢোকা নিয়েই এ দিন একপ্রস্ত নাটক হয়। সারদার যে সব অফিস ও বাড়িতে তালা ঝুলছে, তার চাবি থাকছিল রাজ্য পুলিশের কাছেই। এইচএ ব্লকের এই বাড়িটির চাবি হাতে না থাকায় সদর দরজার তালা ভেঙেই ঢোকে সিবিআই। ভাঙা হয় বিভিন্ন ঘরের দরজাও। এমনকী নথি জোগাড়ের জন্য একটি ট্রাঙ্ক, ডিভান, দু’টি দেওয়াল আলমারি ও একটি ফ্রিজও ভাঙা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।

কুণাল ঘোষের বাড়িতেও এ দিন হানা দেয় সিবিআই। ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে সুদীপ্তর ঘনিষ্ঠ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান সিবিআই অফিসারেরা। দেবযানীর বাবা-মাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গরফা রোডে সুদীপ্ত-ঘনিষ্ঠ আর এক মহিলার ফ্ল্যাটেও গিয়েছিলেন সিবিআই অফিসারেরা।

সল্টলেকের মিডল্যান্ড পার্ক, ডিএন ব্লক, ডায়মন্ড হারবার রোড, শেক্সপিয়র সরণিতে সারদা রিয়েলটি এবং সারদা ট্রাভেলস-এর দফতরেও হানা দেন তাঁরা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে সংস্থার দু’জন হিসাবরক্ষক, দু’জন গাড়িচালক এবং এক জন অফিস কর্মচারীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সুদীপ্ত-দেবযানী কোথায় বসতেন, কোথায় কম্পিউটার রাখা হতো, কোথায় হিসেবের খাতাপত্র থাকত, তা ওই কর্মীদের কাছ থেকে জানতে চান অফিসারেরা। সকাল ন’টা থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত এই অভিযান চলে। পরে বেশ কিছু ফাইল বাজেয়াপ্ত করে তাঁরা সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন