সুপ্রিম কোর্টে রাজীবের আর্জি খারিজ। —ফাইল চিত্র
সুপ্রিম কোর্টের পর বারাসত আদালত। খারিজ হয়ে গেল রাজীব কুমারের আগাম সুরক্ষার আবেদন। গ্রেফতারি এড়াতে মরিয়া রাজীব কুমার শুক্রবার সকালে দ্বারস্থ হয়েছিলেন শীর্ষ আদালতের। বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চে আবেদন করেছিলেন আইনি রক্ষাকবজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য। সেই আবেদন সকালেই খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।
এ দিকে শুক্রবারই শেষ হয় রাজীবের আইনি রক্ষাকবজের সাত দিনের মেয়াদ। শেষ রাস্তা হিসাবে এ দিন বিকেল চারটেয় রাজীব কুমারের আইনজীবী আগাম জামিনের আবেদন জানান বারাসত জেলা আদালতে। সাধারণত এই ধরনের আবেদন জানাতে হয় সকাল ১০টার মধ্যে। জেলা বিচারকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে রাজীবের আইনজীবী আগাম জামিনের আবেদন নথিভুক্ত করেন। সেই খবর পাওয়া মাত্রই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বারাসত আদালতের আইনজীবীদের বড় অংশ।
গত ২৪ এপ্রিল থেকে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলছে, তা বহাল ছিল এ দিনও। আইনজীবীরা জেলা বিচারকের কাছে জানান রাজীব কুমারের আবেদন বাতিল করতে। বারাসত জেলা আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মিহির দাস বলেছেন, ‘‘রাজীব কুমারের আবেদন ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ। তিনি নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে আবেদন করেছেন। সে ক্ষেত্রে জেলা বিচারক বিশেষ অনুমতি দিতে পারেন না। সেই কারণেই আমরা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করি।’’ আইনজীবীদের আবেদন শুনে শেষ পর্যন্ত রাজীব কুমারের আবেদন বাতিল করেন জেলা বিচারক।
আগামীকাল ও রবিবার আদালত বন্ধ থাকবে। সে ক্ষেত্রে সোমবারের আগে আবেোদন জানানোর সুযোগ পাবেন না রাজীব কুমার।
শুক্রবারই শীর্ষ আদালতের দেওয়া রাজীবের আইনি রক্ষাকবচের মেয়াদের সাত দিন শেষ হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট গত ১৬ মে রায়দানের সময় জানিয়েছিল, সারদা মামলায় তদন্তের প্রয়োজনে সিবিআই আইনি পদক্ষেপ করতে পারবে, তবে রাজীব কুমারও সাত দিন আইনি সুরক্ষা নেওয়ার সময় পাবেন। অর্থাৎ, তাঁকে সাত দিন গ্রেফতার করা যাবে না বলে জানিয়েছিল আদালত।
শুক্রবার রাজীব কুমারের রিট আবেদন খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। তাঁকে সুপ্রিম কোর্ট এ রাজ্যের হাইকোর্ট বা নিম্ন আদালতে আবেদন জানানোর পরামর্শ দিয়েছে।
এর আগে রাজীব কুমার এক বার শীর্ষ আদালতের দেওয়া তাঁর আইনি রক্ষাকবচের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছিলেন শীর্ষ আদালতের অবকাশকালীন বেঞ্চের কাছে। বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময় রাজ্যের এই শীর্ষ পুলিশকর্তার আবেদন শুনতে রাজি হননি। এর পর শীর্ষ আদালত তাঁর মামলার জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদনও খারিজ করে দেয়। এ দিকে কলকাতার নিম্ন আদালত এবং কলকাতা হাইকোর্টের আইজীবীরা কর্মবিরতি পালন করায় এখানেও তিনি আইনি সুরক্ষার জন্য আবেদন জানাতে পারেননি।
সেই কারণ সামনে রেখেই বৃহস্পতিবার রাজীব কুমার ফের তিন বিচারপতির বেঞ্চের কাছে রিট আবেদন জানান। শুক্রবার সকালে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রাজীব কুমারের আবেদন খারিজ করে দেয়। বেঞ্চের বাকি দুই সদস্য হলেন বিচারপতি বি আর গায়াই এবং বিচারপতি সূর্যকান্ত। রাজীব কুমার তাঁর আবেদনে দাবি করেছিলেন, সিবিআই যে অভিযোগ করছে, সেই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা।
আরও পডু়ন: দক্ষতার পরীক্ষায় দুই সেনাপতিই ‘ফেল’
আরও পডু়ন: বাইরে তৃণমূল ভিতরে বিজেপি, এটাই ছিল ছক
কিন্তু এ দিন সকালে বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, ‘‘আপনি এক জন শীর্ষ পুলিশকর্তা। আপনি বহু তরুণ আইনজীবীর থেকে আইন ভাল বোঝেন। আপনার বোঝা উচিত যে ইতিমধ্যেই প্রধান বিচারপতি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন আইনি সুরক্ষার জন্য নিম্ন আদালতে যেতে।” আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজীবের আইনজীবী এ দিন বিচারপতিদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে কলকাতায় আইনজীবীদের কর্মবিরতির জন্য রাজীব কুমার আইনি সুরক্ষার আবেদন জানাতে পারছেন না।
কিন্তু বিচারপতি অরুণ মিশ্র সেই আবেদনে কান দেননি। তিনি স্পষ্ট করে দেন শীর্ষ আদালত এ মামলা শুনবে না। রাজীব কুমারকে নিম্ন আদালতেই আবেদন জানাতে হবে। এ দিনই শেষ হচ্ছে রাজীব কুমারের আইনি রক্ষাকবচের মেয়াদ। রাজীব ঘনিষ্ঠদের আশঙ্কা, এই সময়ের জন্যই অপেক্ষা করছে সিবিআই। যে কোনও সময় তাঁরা রাজীবকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।