school inspector

সরকারি নির্দেশিকাই সার, খেলার নামে শিক্ষকদের টাকা দিতে বাধ্য করছেন স্কুল ইনস্পেক্টর!

“সরকারের অনেক নির্দেশিকা রয়েছে। ডোমজুড় সার্কলের রীতি মেনে চেষ্টা করবেন টাকাটা দিয়ে দিতে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:২২
Share:

অভিযুক্ত হাওড়ার ডোমজুড় সার্কলের স্কুল ইনস্পেক্টর অমরেশ মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র।

প্রাথমিক স্কুল পড়ুয়াদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্যে প্রতি সার্কলে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। ওই প্রতিযোগিতার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যাবে না, সে বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকাও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ সবকে উপেক্ষা করেই শিক্ষকদের টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল হাওড়ার ডোমজুড় সার্কলের স্কুল ইনস্পেক্টর অমরেশ মজুমদারের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েক জন শিক্ষকের অভিযোগ, ইতিমধ্যে অনেকেই টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

Advertisement

সম্প্রতি ডোমজুড়ে জয়চণ্ডীতলার মাঠে ওই এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলির গ্রামপঞ্চায়েত স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল। সেখানে ওই সার্কলের ইনস্পেক্টর অমরেশ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে শিক্ষকদের যে টাকা দিতে হবে সে কথা জানিয়ে প্রকাশ্যেই তিনি বলেন, “সরকারের অনেক নির্দেশিকা রয়েছে। ডোমজুড় সার্কলের রীতি মেনে চেষ্টা করবেন টাকাটা দিয়ে দিতে।” অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো এখন ওই সার্কলের শিক্ষকদের মোবাইলে ঘুরছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। ভিডিয়োতে অমরেশবাবুকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা থাকলেই হল না, আগে যেমন টাকা দিয়েছেন, সে ভাবেই দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব দিয়ে দেবেন।’’

এ বিষয়ে হাওড়া জেলার প্রাইমারি বিভাগের জেলা পরিদর্শক বাদলকুমার পাত্র বলেন, “প্রত্যেকটি সার্কলকেই এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্যে। শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এমন কেউ করেছেন বলে যদি অভিযোগ আসে, তা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

আরও পড়ুন: করিমপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশকে লাথি, কমিশনে বিজেপি

এ বিষয়ে অমরেশবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমার সার্কলে ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত, মহকুমা এবং সার্কলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ১ লাখ টাকায় কিছু করা সম্ভব নয়। এ জন্য শিক্ষকদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। এই টাকা ফেরতও পেয়ে যেতেন তাঁরা। আর্থিক সঙ্কটের বিষয়টি জেলা প্রাথমিক স্কুল কমিশনে আমি জানিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন শিক্ষকদের একাংশ।”

একটি সার্কলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য স্কুল শিক্ষা দফতর এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। সরকারি নিয়ম মেনেই এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে ডোমজুড় সার্কলেও। ওই বরাদ্দ থেকে গ্রামপঞ্চায়েত স্তরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য কমপক্ষে ১০ হাজার পাওয়ার কথা। কিন্তু অমরেশবাবুর এই সাফাই মানতে চাইছেন না অভিযোগকারী শিক্ষকেরা। তাঁদের বক্তব্য, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ওই স্কুল ইনস্পেক্টরের যোগ রয়েছে। তাঁকে সাহায্য করছেন গ্রামপঞ্চায়েতের আহ্বায়ক। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, এই টাকা দিয়ে কী হচ্ছে? অমরেশবাবুর বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ উঠলেও, তিনি কোনও শিক্ষকের কাছ থেকেই টাকা পাননি বলে দাবি করেছেন।

আরও পড়ুন: ফের বিতর্কে স্কুল পরিদর্শক

অভিযোগকারী শিক্ষককেরা জানাচ্ছেন, আগে রাজ্য জুড়েই শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করা হত। তা নিয়ে নানা সময় দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। সে কারণেই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্যে সার্কলভিত্তিক এক লক্ষ টাকা দিচ্ছে সরকার। ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব প্রাইমারি এডুকেশনের নির্দেশিকায় এক লক্ষ টাকার অনুদানের বিষয়টি লেখাও রয়েছে। একই সঙ্গে বলা রয়েছে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন