ট্র্যাডিশন মেনেই ধর্মঘটে খোলা স্কুল

দোকানপাট খোলেনি। সুনসান রাস্তা। রাজ্য সড়ক দাপিয়ে মাঝে মধ্যে দু-একটা ছুটন্ত গাড়ি। নিঝুম ধর্মঘটের সকালে ছবিটা ধাক্কা খাচ্ছে যেখানে, সে’টি একটি স্কুল, যেখানে দিনভর কয়েকশো পড়ুয়ার হল্লা, ডাস্টার হাতে শিক্ষকদের এ ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে অন্য দিনের মতোই অবিরাম ছোটাছুটি। এস এন হাইস্কুল। মুর্শিদাবাদে সাগরদিঘিতে রাজ্য সড়কের কোল ঘেঁষে দোতলা স্কুলটি অন্য দিনের মতোই এ দিনও সকাল থেকে ছিল সরগরম। স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়ার সঙ্গে সকালেই স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিলেন ৩৫ জন শিক্ষকের প্রায় সকলেই। এ অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। ২০০২ সাল থেকেই যে কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকা ধর্মঘটে সাড়া না দিয়ে, এস এন হাইস্কুলে ক্লাস হয়েছে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

দোকানপাট খোলেনি। সুনসান রাস্তা। রাজ্য সড়ক দাপিয়ে মাঝে মধ্যে দু-একটা ছুটন্ত গাড়ি।

Advertisement

নিঝুম ধর্মঘটের সকালে ছবিটা ধাক্কা খাচ্ছে যেখানে, সে’টি একটি স্কুল, যেখানে দিনভর কয়েকশো পড়ুয়ার হল্লা, ডাস্টার হাতে শিক্ষকদের এ ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে অন্য দিনের মতোই অবিরাম ছোটাছুটি।

এস এন হাইস্কুল। মুর্শিদাবাদে সাগরদিঘিতে রাজ্য সড়কের কোল ঘেঁষে দোতলা স্কুলটি অন্য দিনের মতোই এ দিনও সকাল থেকে ছিল সরগরম। স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়ার সঙ্গে সকালেই স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিলেন ৩৫ জন শিক্ষকের প্রায় সকলেই।

Advertisement

এ অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। ২০০২ সাল থেকেই যে কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকা ধর্মঘটে সাড়া না দিয়ে, এস এন হাইস্কুলে ক্লাস হয়েছে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

প্রধানশিক্ষক তামিজুদ্দিন মল্লিক বলছেন, ‘‘গত তেরো বছর ধরেই এই ট্র্যাডিশন চলছে। ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সমস্ত ধর্মঘটকে উপেক্ষা করে আমরা স্কুল খোলা রেখেছি। এ দিনও সকালেই স্কুলে এসে গিয়েছিলেন শিক্ষকেরা। বেলায় পড়ুয়াদেরও অনেকেই এসেছে।’’

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিচালন সমিতি এবং অভিভাবকেরাও এ ব্যাপারে স্কুলের সঙ্গে বারবর সহযোগিতা করে এসেছেন। তামিজুদ্দিন বলছেন, ‘‘বলতে পারেন ধর্মঘট রুখতে আমরা এক সূত্রে বাঁধা।’’ তাঁদের দাবি, ওই স্কুলে পরিচালন সমিতিতে শাসক দলের পাশাপাশি বাম এবং কংগ্রেসের সমর্থকেরাও রয়েছেন। তবে ধর্মঘটে স্কুল খোলা রাখার ব্যাপারে আপস করা হয়নি কখনও। স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে চাপ যে আসেনি তা নয়। তবে আমরা কখনও মাথা নোয়াইনি। এখন অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলি ধর্মঘট ডাকলেও আমাদের বিশেষ ঘাঁটায় না।’’

তৃণমূল শিক্ষা সেলের সাগরদিঘি কমিটির সভাপতি ওই স্কুলেরই শিক্ষক নিবিড় সোম বলছেন, ‘‘নীতিগত ভাবে তৃণমূল ধর্মঘটের বিরুদ্ধে। তাই স্কুলের কর্মসংস্কৃতি রক্ষার সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই।’’

কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠনের জেলার সাধারণ সম্পাদক পীযূষ রায়ও ওই স্কুলেই শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘বন্‌ধ যে কর্মনাশা তা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। এক সময় এ রাজ্যে প্রতি মাসে একাধিক দিন বন্‌ধ হয়েছে। তৃণমূলও অতীতে সেই পথেই হেঁটেছে। তবে স্কুলের সংস্কৃতি মেনে আমরা কখনও জোর করে স্কুল বন্ধ রাখার চেষ্টা করিনি।’’

কিছু দিন আগেও স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক ছিলেন সিপিএম নেতা জয়দীপ দাস। তিনিও বলছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত ছাত্রদের স্বার্থে। তাই পরিচালন সমিতি তাতে বিশেষ হস্তক্ষেপ করে না।’’ এবিটিএ-এর সাগরদিঘি পূর্ব জোনাল কমিটির সভাপতি দীপ্তেন্দু মিত্রের দাবি, ‘‘স্কুল তো ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যই। তাদের স্বার্থে স্কুল খোলা রাখলে অসুবিধা কোথায়।’’ আর পড়ুয়ারা কী বলছে? দশম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ সইনুর শেখ বলে, ‘‘ধর্মঘটের দিন প্রথম দিকে স্কুলে আসতে ভয় করত। বাড়িতেও বলত, স্কুলে গিয়ে লাভ নেই। কিন্তু এখন মা-বাবাই জোর করে স্কুলে যেতে বলেন।’’

দ্বাদশ শ্রেণির অহেদা খাতুনের কথায়, ‘‘আমার মতো অনেকেরই গৃহশিক্ষক নেই। স্কুলের শিক্ষকরাই ভরসা। তাই স্কুলের এমন সিদ্ধান্তে আমরা উপকৃতই হয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন