হস্টেলে মদ, বাড়িতে জানিয়ে মৃত্যু ছাত্রের

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০৪:৫৩
Share:

উঁচু ক্লাসের দাদারা হস্টেলে তার ঘরে বসেই মদ খায়। বারণ করলেও শোনে না। ছুটিতে বাড়িতে এসে মায়ের কাছে নালিশ করেছিল পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া ছেলেটা। হস্টেলের ওই ঘরেই মিলল তার মৃতদেহ। শরীরে কলম দিয়ে খোঁচানো এবং অন্য আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট।

Advertisement

বুধবার সকালে মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার বসন্তপুর গ্রামে এক বেসরকারি স্কুলের হস্টেলে মেলে সামাউল শেখ নামে ১০ বছরের ছাত্রের দেহ। তার বাড়ি নাজিরপুর গ্রামে। ঘটনায় উত্তেজিত জনতা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে। সামাউলের বাবা-মা খুনের অভিযোগ জানান। হস্টেল সুপার আবুল বাশার রুহুল আমিন মোল্লাকে জেরা করে পুলিশ। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

ডিসেম্বরে ডোমকল মডেল স্কুলে ভর্তি করানো হয় সামাউলকে। সামাউল যে ঘরটিতে থাকত, সেটিতে ছিল তিন জন। সে ছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুই ছাত্র। ঘরটির পিছন দিকে আগাছা ভরা জমি, পাঁচিল। সে দিকে বড় জানলার একটি শিক ভাঙা, সেখান দিয়ে গলে যাতায়াত করা যায়। আর তার ফলেই ঘরটি মদের আসর বসানোর উপযুক্ত হয়ে দাঁড়ায়। সামাউলের বাবা-মায়ের অভিযোগ, তাঁরা বারবার বিষয়টি সুপারকে জানালেও তিনি আমল দেননি।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে ওই ঘরে কেউ ছিল না। সামাউল ছাড়া বাকি দু’টি ছেলে বাড়ি গিয়েছিল। সে একা হয়ে পড়ায় হস্টেলের নিয়ম অনুযায়ী তাকে পাশের ঘরে শুতে পাঠানো হয়। তার ঘরটিতে বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিল। চাবি ছিল তারই কাছে। রাতে হস্টেলের ফোন থেকে মাকে ফোনও করেছিল সামাউল। সে দিনই মাধ্যমিক শেষ হয়েছে। সব পরীক্ষার্থী বাড়ি চলে গেলেও ‘মজা করবে’ বলে ৪-৫ জন হস্টেলে থেকে গিয়েছিল।

হস্টেলের একতলায় সামাউলের ঘরের কাছেই সুপারের ঘর। তাঁর দাবি, বুধবার সকালে চা-বিস্কুট খেয়ে সামাউল নিজের ঘরে ফেরে। তার পরে আর স্কুলে, কোচিং ক্লাসে যায়নি। বরং জামাকাপড় ঝোলানোর সরু নাইলন দড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে দরজার মাথায় ছিটকিনি লাগানোর আংটা থেকে ঝুলে পড়ে সে। দরজা ভেজানো দেখে ঠেলে ঢুকতে গিয়ে সুপার দেখেন, নিথর দেহ ঝুলছে। পুলিশের অপেক্ষা না করে তিনিই দড়ি কেটে নামান। যদিও অভিভাবকদের একাংশ আত্মহত্যার এই তত্ত্ব বিশ্বাস করতে চাননি। পুলিশও তা উড়িয়ে দিয়েছে। এসডিপিও (ডোমকল) মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘মৃতদেহ বিছানাতে শোওয়ানো ছিল। কলম দিয়ে খোঁচানো ও কালশিটের চিহ্ন স্পষ্ট। খুনের মামলা রুজু হয়েছে।’’ দরজা বন্ধ থাকলে কী করে ছিটকিনির আংটা থেকে ঝোলা সম্ভব, সেই প্রশ্নেরও যুক্তিগ্রাহ্য জবাব মিলছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন