সুন্দরবনের সুরক্ষায় যৌথ উদ্যোগ শুরু হয়েছে আগেই। এ বার জলের রুপোলি শস্য ইলিশ বাঁচাতেও ভারত আর বাংলাদেশকে একসঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন মৎস্যবিজ্ঞানী এবং প্রাক্তন আমলারা। তাঁদের মতে, যৌথ প্রয়াসে বাঘ বাঁচানো জরুরি। ইলিশের মতো যৌথ সম্পদ বাঁচাতে দুই দেশকে হাতে হাত ধরেই এগোতে হবে।
‘‘প্রজেক্ট টাইগারের মতো ইলিশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও ‘প্রজেক্ট হিলসা’র প্রয়োজন রয়েছে,’’ সম্প্রতি কলকাতায় ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে বলেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব হেম পাণ্ডে। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলিকেও এগিয়ে আসতে হবে।
নদীর দূষণ, নির্বিচারে ছোট ইলিশ ধরার মতো নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন কমছে। মৎস্যবিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যেতে পারে এই মাছ। এই পরিস্থিতিতে ইলিশ নিয়ে সচেতনতা ও সার্বিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। দেশের প্রাক্তন পরিবেশসচিব মীনা গুপ্তের মতে, ইলিশ বাঁচাতে শুধু মৎস্যজীবীদের সজাগ করলেই হবে না, প্রয়োজন ক্রেতা-সচেতনতাও। এই সচেতনতায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে বলে মনে করেন তিনি। মীনাদেবী জানান, ৫০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশ ধরতে থাকলে ওই মাছ প্রজননের বয়সে পৌঁছতেই পারবে না। অবলুপ্তির পথে এগিয়ে যাবে ইলিশ।
অপরিণত ইলিশ ধরা বা কেনার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে বর্জ্য ফেলার প্রবণতাও ইলিশের বিপদ ডেকে আনছে বলে জানান বিশেষজ্ঞেরা। পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নানান বর্জ্য নদীতে পড়তে থাকায় সেই জলে থাকতে পারছে না ইলিশ। এ ভাবে চলতে থাকলে ইলিশ অচিরেই বাঙালির পাতের বদলে থাকবে শুধু বইয়ের পাতায়।’’
সচেতনতা প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে আসতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। বাংলাদেশের মৎস্য গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানী আনিসুর রহমান জানান, ইদানীং পয়লা বৈশাখে তাঁদের দেশে ইলিশ ও পান্তা ভাত খাওয়ার চল হয়েছে। তবে গত দু’বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বাড়িতে পয়লা বৈশাখে ইলিশ রান্না হচ্ছে না। সেটা প্রচারও করছেন তিনি। আনিসুর আরও বলেন, ‘‘চারা ইলিশ বা জাটকা না-ধরলে আখেরে যে ধীবরদেরই লাভ, সে-কথাও বোঝানো হয়েছে।’’
রাজ্যের ইলিশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বিজ্ঞানী সপ্তর্ষি বিশ্বাস জানান, ইলিশ বাঁচাতে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে ইলিশের চাহিদা বাড়ছে। তার জোগান দিতেই অনেক সময় ছোট ইলিশ ধরা হচ্ছে। তবে চারা ইলিশ ধরলে তা অনেক ক্ষেত্রে বাজেয়াপ্তও করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠছে, ছোট ফাঁদের গিল নেট (জাল) ব্যবহারের ফলেই চারা ইলিশ ধরা পড়ছে। অনুষ্ঠানে সপ্তর্ষিবাবু জানান, গিল নেটে ৯০ মিলিমিটার ফাঁদ থাকে। কিন্তু শক্তিশালী ইঞ্জিনের ট্রলার দ্রুত গতিতে ছোটে। তখন জলের টানে ফাঁদ কমে ৭০ মিলিমিটার হয়ে যায়। তাতেই ছোট মাপের মাছ আটকে যাচ্ছে। তাই নতুন ট্রলারের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।