সাফল্য: আইসিএসই পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরে শহরের একটি স্কুলের ছাত্রীরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
নোটসের উপরে ভরসা নয়। পাঠ্যক্রম একেবারে খুঁটিয়ে পড়েছে ওরা। মঙ্গলবার আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে মেধা তালিকায় থাকা পড়ুয়ারা জানাল এমনটাই।
আইসিএসই-তে দ্বিতীয়দের মধ্যে রয়েছে এ রাজ্যের তিন জন। গার্ডেন হাইস্কুলের অন্বেষা চট্টোপাধ্যায়, দ্য ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্থনি পাবলিক স্কুলের অভি শরাফ এবং কাঁকুড়গাছি পূর্বাঞ্চল বিদ্যামন্দিরের রাজ ঘোষ। এরা পেয়েছে ৯৯.৪০ শতাংশ নম্বর।
বিকেল তিনটে বাজতেই ওয়েবসাইট দেখে নিজের নম্বর জেনে নিয়েছিল গড়িয়ার বাসিন্দা অন্বেষা। কিন্তু সে জানত না যে, দ্বিতীয় হয়েছে। অন্বেষার কথায়, ‘‘টিভি দেখে জানতে পারি, আমি দ্বিতীয় হয়েছি। পরে স্কুল থেকে ফোন আসে। ভাল করব ভেবেছিলাম। কিন্তু এতটা ভাল হবে, ভাবতে পারিনি।’’ অন্বেষার বাবা কৌশিক চট্টোপাধ্যায় একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করেন। মা অপরাজিতা কলেজশিক্ষিকা। অন্বেষা জানায়, সে জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চায়।
কাঁকুড়গাছি পূর্বাঞ্চল বিদ্যামন্দিরের রাজ ঘোষও অন্বেষার সঙ্গে দ্বিতীয় হয়েছে। তার এই সাফল্যে গোটা স্কুলে উৎসবের আবহ। আইসিএসই-তে ছেলে দ্বিতীয় হওয়ায় রাজের মা-বাবাও উচ্ছ্বসিত। বাবা সলিল ঘোষ সিইএসসি-তে কর্মরত। মা রিঙ্কু ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের অত্যন্ত সাধারণ পরিবার। ছেলে যে ভাল করবে, তা বুঝেছিলাম। কিন্তু এতটা ভাল ফল করবে, কল্পনাও করতে পারিনি।’’ রাজ জানাল, সে চিকিৎসক হতে চায়। আপাতত জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা তার।
আইসিএসই-তে তৃতীয় হওয়া গার্ডেন হাইস্কুলের তিয়াসা চন্দ্র জানাল, সে চিকিৎসক হতে চায়। তার মতে, সিবিএসই বোর্ডে পড়াশোনা করলে মেডিক্যালের সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে কিছু সুবিধা হয়। তাই পুরনো স্কুল ছেড়ে সে একটি সিবিএসই বোর্ডের স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তৃতীয় হওয়া আর এক জন, হাওড়ার অগ্রসেন বালিকা শিক্ষা সদনের রত্না নাঙ্গালিয়া জানিয়েছে, তার বাবা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সে-ও চায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে।
এ রাজ্য থেকে আইএসসি-তে দ্বিতীয় হয়েছে মোট চার জন। প্রাপ্ত নম্বর ৯৯.৭৫ শতাংশ। এদের মধ্যে আমতলার কে ই কারমেল স্কুলের দেবদূত মণ্ডল ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে চায়। অক্সিলিয়াম কনভেন্টের দিমিত্রি মল্লিক আইএএস হতে চায়। তাই আপাতত ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় সে। কাশীপুর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নির্ঝর দাস বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে চায়। আওয়ার লেডি কুইন অব দ্য মিশনের খুশি দাগা বাণিজ্য শাখায় পড়াশোনা করেছে। এ বার এমবিএ করতে চায় সে।
কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে সফল হল এই ছাত্রছাত্রীরা?
কৃতী ওই পড়ুয়ারা সকলেই কার্যত একমত যে, কোনও শর্টকাট পদ্ধতি নয়, পুরো পাঠ্যক্রম খুঁটিয়ে পড়েছে তারা। বাড়িতে বসে পরীক্ষার সময় ধরে বারবার উত্তর লেখা অনুশীলন করেছে। আইএসসি-তে প্রথম হওয়া দেবাঙ্গকুমার আগরওয়াল জানিয়েছে, সে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। বিজ্ঞান প্রিয় হলেও প্রতিটি বিষয়ই সে খুঁটিয়ে পড়েছে। গার্ডেন হাইস্কুলের অন্বেষার কথায়, ‘‘কোনও বিষয় বেশি ভাল লাগতেই পারে। কিন্তু তা-ই বলে অন্য বিষয়গুলিকে অবহেলা করিনি। সমান যত্ন নিয়েই সব ক’টি বিষয় খুঁটিয়ে পড়েছি।’’
কাশীপুর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নির্ঝরও বলছে, ‘‘আমিও প্রতিটি বিষয় খুঁটিয়ে পড়েছি। নোটসের উপরে ভরসা করিনি।’’ নির্ঝর আইআইএসসি বেঙ্গালুরুতে পদার্থবিদ্যা নিয়ে ভর্তি হতে চলেছে। কাঁকুড়গাছি পূর্বাঞ্চল বিদ্যামন্দিরের রাজও প্রায় একই কথা জানিয়েছে। রাজ বলে, ‘‘প্রতিটি বিষয়ই খুঁটিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছি।’’ দেবদূতও বলল, ‘‘আমার যে হেতু ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো বিষয় ছিল, তাই নোটস তৈরি করে পড়তে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সবার আগে পাঠ্যবইটাও একেবারে খুঁটিয়ে পড়তে হয়েছে। পাঠ্যবই খুঁটিয়ে না পড়লে বিষয়টা আয়ত্তে আসে না।’’