যাঁর সঙ্গে বিরোধে তাঁকে নিজের জেতা কেন্দ্র থেকে, এমনকী জেলা থেকেই সরতে হয়েছে, সেই শুভেন্দু অধিকারীর গুণগান গেয়ে প্রচার শুরু করলেন কেশপুরের তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহা। তারপর থেকে শাসক দলে গুঞ্জন, তবে কি ‘শত্রুকে বড় আসন দিতে হয়’ এই প্রবাদই সত্যি করলেন শিউলি!
প্রার্থী হওয়ার পর সোমবার প্রথম কেশপুরে এসেছিলেন শিউলি। দলের ব্লক কার্যালয়ে কর্মী-বৈঠকে শিউলিদেবী বলেন, “শুভেন্দুদা আমাদের গর্ব। শুভেন্দুদা যখন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন, আমি তখন যুব তৃণমূলের রাজ্য কার্যকরী সভাপতি। আমরা একসঙ্গেই কাজ করেছি।”
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা রাজনীতিতে অবশ্য বরাবরই দুই মেরুতে অবস্থান শুভেন্দু ও শিউলির। মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ শিউলির সঙ্গে তমলুকের সাংসদের বিরোধ বহুবার প্রকাশ্যেও এসেছে। পরবর্তী কালে দল থেকে ‘সাসপেন্ড’ হয়েছিলেন শিউলি। পরে অবশ্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে দলে ফিরে এসেছেন। তৃণমূলেরই একাংশের ব্যাখ্যা, তাঁকে দলে পুরনো জায়গায় ফেরানো
মানে যে কোনও ভাবে শুভেন্দুকে চটানো নয়, সেই বার্তা স্পষ্ট করতেই মমতা এ বার শিউলিকে হলদিয়া থেকে সরিয়ে কেশপুরে প্রার্থী করেছেন।
তবু কি অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করছেন শিউলি?
জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সেই আশঙ্কা অমূলক নয়। কারণ, এক সময় জঙ্গলমহলে দলের সংগঠনের দায়িত্ব সামলানো শুভেন্দুর পশ্চিম মেদিনীপুরেও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তার উপর তিনি মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হওয়ার সূত্রেও একটা আলাদা প্রভাব রয়েছে। এমনকী জেলা তৃণমূলের একাংশ নেতা শুভেন্দু-অনুগামী বলে পরিচিত। এই পরিস্থিতিতে যে কেশপুরে ২০১১ সালে পরিবর্তনের ঝড়েও জিততে পারেনি তৃণমূল, সেখানে শুভেন্দু গোষ্ঠীর লোকজন বিপক্ষে গেলে শিউলির জয় আদৌ সহজ হবে না। সে জন্যই তিনি শুভেন্দু-স্তুতির কৌশল নিয়েছেন বলে তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন।
শিউলি নিজেও এ দিন মেনেছেন, তাঁর লড়াই কঠিন। কর্মিসভায় তাঁকে বলতে শোনা যায়, “মমতাদি বলেছিলেন, ‘শিউলি তোকে নতুন জায়গায় যেতে হবে। তবে আমি জানি, তুই এই কঠিন লড়াইয়ে জিতবি’। সে দিনই বুঝেছিলাম, দিদি কেশপুরের প্রার্থী করবেন।”
বিরোধ সরিয়ে রাখার বার্তাও দিয়েছেন নন্দীগ্রামের মেয়ে। শিউলির কথায়, ‘‘আমি সবাইকে নিয়ে থাকতে চাই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলার পর্যবেক্ষক। তাঁর সঙ্গেও
কথা হয়েছে।’’
শিউলির মুখে তাঁর প্রশংসা নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু। বরং তিনি বলেন, “আমি চাই শিউলি সাহা বিপুল ভোটে জিতুন। কেশপুরে সিপিএম যে অত্যাচার করেছে, সেই দিন যেন আর ফিরে না আসে।” আপনার অনুগামীরা নির্বাচনে অন্তর্ঘাত করতে পারে এই আশঙ্কাতেই শিউলির এই প্রশংসা? এ বার শুভেন্দুবাবুর জবাব, “আমার কোনও অনুগামী নেই। আমরা সবাই দলের অনুগামী।”
কঠিন লড়াইয়ে উতরোতে দলই যে ভরসা তা বুঝেছেন শিউলিও। তাঁর আর্জি, ‘‘যদি উন্নয়ন চান ব্যক্তি শিউলি সাহাকে নয়, কেশপুরে তৃণমূলের প্রতীককে জেতান।’’