মনিরুলের ৭ রক্ষী, আমরা গ্রামছাড়া

তিন সিপিএম সমর্থক ভাইকে পিটিয়ে মারার ঘটনার মূল অভিযুক্তের সাত-সাত জন পুলিশি নিরাপত্তারক্ষী। অথচ হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও অভিযোগকারীদের কেন কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন তুললেন লাভপুরের নবগ্রামে নিহত তিন ভাইয়ের মা জরিনা বিবি। ছেলেদের খুনের সিবিআই তদন্ত চেয়ে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে তিনি যে আবেদন পেশ করেছেন সেখানেই এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৬
Share:

কলকাতায় এবিপি আনন্দের অফিসে সানোয়ার, টুম্পা ও জরিনা।

তিন সিপিএম সমর্থক ভাইকে পিটিয়ে মারার ঘটনার মূল অভিযুক্তের সাত-সাত জন পুলিশি নিরাপত্তারক্ষী। অথচ হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও অভিযোগকারীদের কেন কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন তুললেন লাভপুরের নবগ্রামে নিহত তিন ভাইয়ের মা জরিনা বিবি। ছেলেদের খুনের সিবিআই তদন্ত চেয়ে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে তিনি যে আবেদন পেশ করেছেন সেখানেই এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

Advertisement

আবেদনে আদালতের কাছে জরিনা বিবি বলেছেন, ‘হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত গত এপ্রিলে আমাদের পরিবারের জীবিত সদস্যদের পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই নির্দেশ মানা হয়নি। তার ফলে আমরা তাড়া খেয়ে একবার এখানে, একবার সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। অথচ তিন খুনের মূল অভিযুক্ত, লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের সাত জন নিরাপত্তারক্ষী। অন্য অভিযুক্তেরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের ধরছে না।’

কেন তিনি সিবিআই তদন্ত চান, তা ব্যাখ্যা করে তিন সন্তান হারানো ৮০ বছরের বৃদ্ধা আদালতকে জানান, ‘যে পুলিশ এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, তাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ তদন্তের আশা করা যায় না। এই অবস্থায় সিবিআই তদন্তেই আমার তিন ছেলে কী ভাবে মারা গিয়েছিল, তা পরিষ্কার হবে। কারা কারা এর পিছনে ছিল, কেনই বা পুলিশ-প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না তা পরিষ্কার হবে।’

Advertisement

এ দিন জরিনা বিবির দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে মনিরুল ইসলাম কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। বেশ কয়েক বার ফোন করার পরে একবার ফোন ধরে তিনি বলেন, “ঘন ঘন ফোন করে আমাকে বিরক্ত করবেন না। প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব!”

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় কার্যত মনিরুলের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে-সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ওই তৃণমূল বিধায়কের চরিত্রহননেরই সামিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এ দিন বর্ধমানের মঙ্গলকোটে সভা শেষে মনিরুলকে নিয়ে দল কী ভাবছে, এ প্রশ্নের জবাবে মুকুল বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। তবে, কোনও সংবাদ মাধ্যমের কাউকে পছন্দ না-ও হতে পারে। তা বলে তাঁর চরিত্র হনন করা যায় না।”

দুই ছেলে (সানোয়ার ও আনারুল) ও নাতনি টুম্পা খাতুনকে (যাকে মনিরুল বাহিনী ২০১১ সালে অপহরণ করেছিল বলে অভিযোগ) সঙ্গে নিয়ে এ দিনই লাভপুর থেকে কলকাতায় এসেছেন জরিনা বিবি। ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে লাভপুরের নবগ্রামে বীরভূম জেলা তৃণমূলের তৎকালীন সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলামের বাড়িতে কী ঘটনা ঘটেছিল, কী ভাবে তাঁর তিন ছেলেকে খুন করা হয়েছিল, হাইকোর্টে দায়ের করা আবেদনে সে-সবের উল্লেখ করেছেন জরিনা বিবি। জানিয়েছেন, ওই বছরেরই ১৯ জুন মনিরুলকে গ্রেফতার করার পরে আদালতে পুলিশ যে ‘ফরওয়ার্ডিং রিপোর্ট’ জমা দিয়েছিল, সেখানে মনিরুলের নেতৃত্বে তিন ভাইকে খুন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

এর পরে গত চার বছর ধরে তাঁর পরিবার কী দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে, হাইকোর্টকে দেওয়া আবেদনে তার উল্লেখ করেছেন জরিনা বিবি এবং তাঁর ছেলে আনারুল। আবদনে তাঁরা বলেছেন, ‘গত চার বছর কী ভাবে যে কাটিয়েছি, তা আল্লাই জানেন। আমরা যেখানেই গিয়েছি, মনিরুলের লোকজন আমাদের ‘কুকুর-তাড়া’ করে বেরিয়েছে। নবগ্রামে নিজেদের বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেখানে কোনও দিন ফিরতে পারব কি না, জানি না। আমাদের পরিবারটাই ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। চাষের জমি নষ্ট করে দেওয়া দেওয়া হয়েছে।’

পুলিশ কখনও তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ বৃদ্ধার। তাঁর আক্ষেপ, গত এপ্রিলে হাইকোর্ট নির্দেশের পরও তাঁদের পরিবারের জন্য পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়নি। কেন পুলিশ হাইকোর্টের নির্দেশ মানল না, তা-ও আদালতকে খতিয়ে দেখতে আর্জি জানান বৃদ্ধা। চলতি সপ্তাহেই কলকতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি হবে বলে আশা জরিনার আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন