প্রতীকী ছবি।
দিন দু’য়েক ধরেই শুনছিলাম, জলের তোড়ে শিলাবতীর বাঁধ ভাঙতে পারে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল বুধবার রাতে। সাড়ে ন’টা নাগাদ জানতে পারলাম, ঘাটালের প্রতাপপুরে শিলাবতীর বাঁধ ভেঙেছে। জল এগোচ্ছে দাসপুর-২ ব্লকের দিকে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ঘাটাল শহরও ভাসিয়ে দিল শিলাবতী। আগেই মহকুমার ২৫টি পঞ্চায়েত এলাকা জলের তলায় চলে গিয়েছিল। বাঁধ ভাঙায় আরও ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত পুরোপুরি জলমগ্ন।
বাপ-ঠাকুর্দার মুখে শুনেছি, বর্ষা মানেই ভাসবে ঘাটাল। আশৈশব নিজেও দেখছি, ভারী বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে যায়। চলে নৌকো। কয়েক বছরে ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি সবথেকে খারাপ ছিল ২০০৭-এ। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘাটালে বন্যা নিয়ন্ত্রণে মাস্টার প্ল্যান ও বাঁধ সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু কাজ এগোচ্ছে না কিছুই। তাই ঘাটাল আর বন্যা এখনও সমার্থকই। প্রতিবার বর্ষায় শহরের ১৭টি ওয়ার্ডের ১২টিই ডুবে যায়। তবে বাকি পাঁচটি ওয়ার্ড তুলনায় উঁচু। ২০০৭-এর পরে ওই ওয়ার্ডগুলি সে ভাবে জলমগ্ন হয়নি। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ঘোরালো। প্রতাপপুরে বাঁধ ভাঙায় ডুবেছে গোটা ঘাটাল শহর।
ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল, আদালত, বাজার, থানা, পুরভবন—কোথাও হাঁটু জল, তো কোথাও এক কোমর। শহরে বিদ্যুতের মূল সাব স্টেশনও জলের তলায়। তাই মঙ্গলবার থেকে ঘাটাল বিদ্যুৎহীন। বহু বাড়ির একতলা ডুবেছে। পাম্পে জল না ওঠায় পানীয় জলের হাহাকার। চার্জের অভাবে কম্পিউটার, মোবাইলও অকেজো। দোকান-বাজার সবই প্রায় বন্ধ। ক’দিন শিলাবতীর সেতুর উপর আনাজ বিক্রি চলছিল। বাঁধ ভাঙায় সেটাও বন্ধ হল। এটিএম পর্যন্ত জলের তলায়। একান্ত প্রয়োজনেও টাকা তোলার জো নেই।
দুর্ভোগের ছবি ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালেও। একতলা জল থইথই। তাই রোগীদের পাশের সুপার স্পেশ্যালিটির ভবনে সরানো হয়েছে। শহরের অধিকাংশ স্কুল-কলেজ বন্ধ। পর্যাপ্ত নৌকো না থাকায় জরুরি কাজে পথে বেরিয়েও বিপদ।
আরও পড়ুন: মমতার মুখে ফের ‘ম্যানমেড’ বন্যা
গ্রাম থেকে শহর, ঘাটাল জুড়ে এখন জলবন্দি মানুষের হাহাকার। সংবাদপত্রের প্রতিবেদক হিসেবে গাঁ-গঞ্জে ঘুরে কয়েক দিনে সে ছবি নিজে চোখে দেখেছি। এখন আমি আর আমার পরিবারই জলবন্দি। চাল-ডাল-আনাজ সরিয়ে দোতলায় তুলতে পেরেছি বলে ক’টা দিন হয়তো চলে যাবে। কিন্তু যাঁদের গেরস্থালিও ভেসে গিয়েছে! অভিযোগ, এমন দুর্গতদের সাহায্যে প্রশাসনের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। দিকে দিকে ত্রাণ শিবির খুলেছে, স্পিড বোট নামিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জলবন্দিদের সেখানে উদ্ধার করে নিয়েও আসছে। কিন্তু শিবিরে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী নেই। মনোহরপুর, গোপমহল, রত্নেশ্বরবাটি, রানিচক, খাঞ্জাপুরে ত্রিপল, শুকনো খাবার না পৌঁছনোয় বাড়ছে ক্ষোভ।
এ দিন ঘাটালে এসেছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা। বৈঠক করে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছনোর নির্দেশ দেন। কিন্তু জল-যন্ত্রণার যা পরিস্থিতি, তাতে কবে পরিত্রাণ মিলবে সেই জবাবই হাতড়াচ্ছেন ঘাটালবাসী।