পরিদর্শন: উদ্বোধনের পর গ্রন্থাগার ঘুরে দেখছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, মধুপ দে, বিডিও বিশ্বনাথ চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র
সাজানো গ্রন্থাগার যেন শুধু সাজানোই না থেকে যায়। তাকে ব্যবহার করতে হবে উপযুক্ত ভাবে। তা হচ্ছে কি না, আগামী দিনে তা-ও জানতে আগ্রহী সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
সোমবার ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক অফিস চত্বরে ‘জঙ্গলসাথী’ গ্রন্থাগারের উদ্বোধন করে শীর্ষেন্দুবাবু বলেন, “অভাব ঘোচানোর জন্য গ্রন্থাগারটি হয়েছে। কিন্তু এটি যেন বাথরুমে রাখা অব্যবহৃত সাবানের মতো না হয়। অনেক দিন নতুন থেকে গেল, কিন্তু ব্যবহার হল না। বন্দোবস্ত ভাল কিন্তু লোক নেই, এমন না হয়।”
গোপীবল্লভপুর-১’এর বিডিও বিশ্বনাথ চৌধুরীর ভাবনাপ্রসূত এই গ্রন্থাগার সোমবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে একযোগে উদ্বোধন করেন শীর্ষেন্দুবাবু এবং জঙ্গলমহলের বর্ষীয়ান লোকসংস্কৃতি গবেষক মধুপ দে। ছিলেন জেলাশাসক আর অর্জুন, মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো।
একশো দিনের কাজে সাফল্যের জন্য রাজ্য সরকারের দেওয়া পুরস্কারের টাকায় গোপীবল্লভপুর ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে বিডিও অফিস চত্বরের একটি গুদাম ঘর ঢেলে সেজে তৈরি হয়েছে এই অভিনব গ্রন্থাগার। নাম দেওয়া হয়েছে ‘জঙ্গলসাথী’। সেখানে নিখরচায় পাওয়া যাবে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য স্টাডি মেটিরিয়াল এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি বই। রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে এখনকার বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের রচনাসমগ্র। উদ্বোধনের পরে গ্রন্থাগার ঘুরে দেখে খুশি শীর্ষেন্দুবাবু।
এর পর শীর্ষেন্দুবাবু, মধুপবাবু, আর অর্জুন-সহ বিশিষ্টেরা ‘ডব্লুবিসিএস মেটিরিয়াল’টির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন স্থানীয় কবি উত্পল তালধি ও গোপীবল্লভপুর থানার আইসি মিহির দে। ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’, ‘মানব জমিন’-এর মতো সাহিত্যকীর্তির স্রষ্টা শীর্ষেন্দুবাবুর অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন ঝাড়গ্রাম সদরের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো। বিডিওকে অভিনন্দন জানিয়ে জেলাশাসক আর অর্জুন বলেন, “এই গ্রন্থাগার জেলার গর্ব।” গবেষক মধুপ দে-র আক্ষেপ, “উপযুক্ত গ্রন্থাগারের অভাবে গোপীবল্লভপুরের অনেক প্রাচীন পুঁথি হারিয়ে গিয়েছে। এই গ্রন্থাগারে প্রাচীন ইতিহাস থেকে সব ধরনের তথ্যের আকর হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় শীর্ষেন্দুবাবু বলেন, “বিভিন্ন গ্রন্থাগারিকদের কাছ থেকে শুনতে পাই, এখন বইয়ের লেনদেন কমছে। কারণটা তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না। শহরাঞ্চলে গ্রন্থাগারগুলির সদস্যপদ কমে যাচ্ছে। মানুষ না কি বই পড়ছেন না।” তিনি অবশ্য আশাবাদী যে পাঠকদের পড়ার ধরন হয়তো বদলাচ্ছে। বই কেনার ঝোঁক বাড়াতেই হয়তো মানুষ গ্রন্থাগারে কম যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, বিডিও-র এমন উদ্যোগের কথা জেনেই আসতে আগ্রহ বোধ করি। এলাকার যুবক-যুবতীদের কর্মমুখী হওয়ার পথে যে সব বাধা রয়েছে, তা সহজে অতিক্রম করার ব্যবস্থা এই গ্রন্থাগারের মাধ্যমে করার চেষ্টা করেছেন বিডিও। আগামী দিনে এটি সম্প্রসারিত হবে।