ঠেকা দিয়ে আর চলছে না।
তদন্তকারী অফিসারের অভাবে থানাগুলিতে মামলার পাহাড় জমছে। মহিলা থানা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। কেননা যথেষ্ট সংখ্যায় মহিলা পুলিশকর্মীই নেই। সেই সঙ্গে অনুমোদিত পদের তুলনায় কনস্টেবলের সংখ্যা এত কম যে, নিত্যদিনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকর্তাদের। এই অবস্থায় পুলিশকর্মীর সংখ্যা না-বাড়িয়ে কয়েক বছর ধরে শুধু ‘সিভিক পুলিশ’ নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার।
কিন্তু তাতে সমস্যার আদৌ সুরাহা হয়নি। সিভিক পুলিশকর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না-থাকায় পুলিশি পরিষেবায় ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের একাংশের অভিমত। এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র দফতরের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ।
কী বলেছে সুপ্রিম কোর্ট?
পুলিশকর্মী কেন কম, সেই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত। কেন শূন্য পদ পূরণ হচ্ছে না, তা জানতে চেয়ে আগামী শুক্রবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের এজলাসে। হাজির থাকতে বলা হয়েছে তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রসচিবদেরও। পশ্চিমবঙ্গের মতো ওই সব রাজ্যেও অনুমোদিত পদের তুলনায় পুলিশের সংখ্যা অনেক কম।
বাংলার অবস্থাটা ঠিক কেমন?
‘‘রাজ্যে এই মুহূর্তে পুলিশের ঘাটতি ঠিক কত, তার চূড়ান্ত হিসেব চলছে। তবে গত পাঁচ বছরে দেড় লক্ষের বেশি সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে,’’ বলেন এক পুলিশকর্তা। সিভিক পুলিশ দিয়ে সমস্যা মিটছে কি? সিভিক পুলিশকর্মীরা থানার রোজকার কাজে সহায়তা করছেন। রাস্তায় নেমে যান শাসন করছেন। এমনকী কোথাও গোলমাল হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটেও যাচ্ছেন। কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না-থাকায় তাঁদের যে পুরোদস্তুর কাজে লাগানো যাচ্ছে না, সেটা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন পুলিশকর্তারাও।
রাজ্য প্রশাসনের একাংশ বলছেন, সিভিক পুলিশ নিয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হবে না। কেননা সিভিক পুলিশ অপরাধী ধরতে পারবে না, তদন্তে সাহায্য করতে পারবে না, এমনকী থানায় প্রতিদিনের কাগজ-কলমের কাজও করতে পারবে না। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “অপরাধী যাতে শাস্তি পায়, তার জমি তৈরি করাই পুলিশের মূল কাজ। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করতে পারলে তবেই পুলিশের সদর্থক ভূমিকার প্রমাণ পাবেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেই কাজটা ঠিকঠাক করার মতো যথেষ্ট লোকবলই নেই রাজ্যের পুলিশবাহিনীতে।”