Abhishek Banerjee Sovan Chatterjee

বর্ষণের নাগরিক ভোগান্তির রেশ কাটতে না কাটতেই প্রাক্তন মেয়র শোভনের সঙ্গে বৈঠকে অভিষেক! ‘চাপে’ মেয়র ববি?

রাজনীতিতে নানা ঘটনার কারণে নানা সমীকরণ তৈরি হয়। সেই সমীকরণের ফলে কোনও পক্ষ নিশ্চিন্ত বোধ করেন, কারও উপর আবার তৈরি হয় মনস্তাত্ত্বিক চাপ। শোভনের সঙ্গে অভিষেকের এই বৈঠক মেয়র ফিরহাদের উপর চাপ বাড়াবে বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের অনেকের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:১৪
Share:

(বাঁ দিক থেকে) শোভন চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।

কালীঘাটের বাড়ির দফতরে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারের সেই বৈঠকে শোভনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই একান্ত বৈঠকের পরে শোভন-বৈশাখীর তৃণমূলে ফেরার জল্পনা যেমন আরও একবার শুরু হয়েছে, তেমনই জল্পনা শুরু হয়েছে কলকাতার মেয়র পদে ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ভবিষ্যৎ নিয়েও।

Advertisement

নজিরবিহীন বৃষ্টিতে মঙ্গলবার রাত থেকে ডুবে গিয়েছিল গোটা কলকাতা। গত ৪৮ ঘণ্টায় আর নতুন করে বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু তার পরেও পূর্ব কলকাতা, বেহালা-সহ বিভিন্ন এলাকার জল নামেনি। যাদবপুর, বাঁশদ্রোণী-সহ বিভিন্ন এলাকার বহু আবাসন এখনও জলবন্দি। নাগরিক ভোগান্তির সূত্রে কলকাতার মেয়র ববির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা চলছে। কলকাতার পুর প্রশাসন পরিচালনার সুবাদে ববিকেই জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। বিরোধীদলের তোপের মুখেও পড়েছেন ববি। তারই পাশাপাশি দলের মধ্যেও অনেকে ববির পুরসভা সংক্রান্ত কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সেই আবহেই প্রাক্তন মেয়র শোভনের সঙ্গে অভিষেকের বৈঠক ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই দলেরই অন্দরে অনেকে মনে করছেন। সেই সূত্রেই দলের ভিতরে-বাইরে প্রশ্ন উঠছে, মেয়র ববি কি চাপে পড়লেন?

তৃণমূল সূত্রে খবর, শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে একান্তে প্রায় ৫০ মিনিট কথা বলেছেন অভিষেক। ভিতরের কথা নিয়ে কোনও পক্ষই প্রকাশ্যে মন্তব্য করেনি। তবে বৈঠকের পর বৈশাখী সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছেন, শোভনের ‘সক্রিয়’ রাজনীতিতে ফেরা কেবল সময়ের অপেক্ষা।

Advertisement

অতীতে মমতার সঙ্গে নবান্নে গিয়ে দেখা করেছিলেন শোভন-বৈশাখী। কিন্তু কখনওই অভিষেকের সঙ্গে তাঁদের পৃথক বৈঠক হয়নি। বরং ২০২১ সালে শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে তাঁরই ছেড়ে আসা বেহালা পূর্ব আসনে প্রার্থী করার নেপথ্যে অভিষেকের ভাবনা ছিল বলে শোনা যায় তৃণমূলের অন্দরে। এর আগে নানা পর্বে শোভনের তৃণমূলে ফেরার জল্পনা তৈরি হয়েছিল। গত বছর ২১ জুলাই তৃণমূলের বার্ষিক সভার আগেও শাসকদলের মধ্যে শোভনের ঘরে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা গুঞ্জনেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে পুজোর আগের এই সাক্ষাৎ সময়ের কারণেই ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। কারণ, তুমুল বর্ষণে ভোগান্তি নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে। বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে যা তৃণমূলের জন্য উদ্বেগের।

কলকাতার মেয়র পদে বৃত হওয়ার আগে শোভন মূলত জলনিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতেন। যে কারণে তাঁর ডাকনামই হয়ে গিয়েছি ‘জল শোভন’। অত্যন্ত অল্পবয়সে কাউন্সিলর হওয়ায় তাঁর পুর পরিষেবা নিয়েও ধারণা স্বচ্ছ এবং ওই বিষয়ে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞও বটে। সেই সূত্রেই এই সময়ে শোভনের সঙ্গে অভিষেকের বৈঠক এবং তাঁর ‘সক্রিয়’ রাজনীতিতে ফেরা প্রসঙ্গে বৈশাখীর মন্তব্য বাড়তি ‘গুরুত্ব’ বহন করে। বিশেষত যখন অতীতে পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে ববি-অভিষেক সংঘাতের ইতিহাস রয়েছে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন অভিষেক। সেই সময়েই দলে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি চালু করার কথা বলেছিলেন তিনি। তখন ববি ছিলেন কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রের খবর, ববিকে তখন যে কোনও একটি পদ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ববি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন। মেয়র পদ নয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দলনেত্রী মমতার হস্তক্ষেপে ববির দু’টি পদই রক্ষা পেয়েছিল।

তবে এ কথা কেউই মনে করছেন না যে, শোভন সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে এলেও ববিকে তুলে নিয়ে তাঁকে কলকাতার মেয়র করে দেওয়া হবে। তার একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে শোভন মূলস্রোতের রাজনীতিতে ফিরে এলে তিনি যে বিধানসভা ভোটে টিকিট পাবেন, তা প্রায় নিশ্চিত। সে সবই আপাতত ভবিষ্যতের গর্ভে। আপাতত তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা, ববিকে ‘চাপে’ রাখতেই শোভনের সঙ্গে এই বৈঠক। রাজনীতিতে নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে নানাবিধ সমীকরণ তৈরি হয়। সেই সমীকরণে কোনও পক্ষ নিশ্চিন্ত বোধ করেন। কারও উপর তৈরি হয় মনস্তাত্ত্বিক চাপ। এখানে প্রথমজন শোভন এবং দ্বিতীয়জন ববি বলেই মনে করছেন অনেকে। যদিও দলের একাংশ আবার একে ‘অতি সরলীকরণ’ বলেও অভিহিত করছেন।

অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে শোভন পরে বলেন, ‘‘মমতাদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে আমার নিরন্তর যোগাযোগ ছিলই। কিন্তু আট বছর পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ ভাবে মুখোমুখি দেখা হল। তার আগে যে হেতু অনেকটা সময় একসঙ্গে পথচলা ছিল, তাই এই সাক্ষাতে অনেক কিছু ঝালিয়ে নেওয়া গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অভিষেক এখন দলের পুরো সংগঠন সামলাচ্ছেন। সেটা একটা বিরাট কর্মকাণ্ড। আমি তাঁকে জানিয়েছি যে, তাঁর বিরাট কর্মকাণ্ডে যদি আমি সক্রিয় ভাবে সামান্যতম ভূমিকাও পালন করতে পারি, তা হলেও খুশি হব।’’

বৈশাখী বলেন, ‘‘অনেকেই তো একটা দ্বিমেরু পরিস্থিতির কথা বলে নানা জল্পনা ছড়িয়ে রাখতেন। শোভন হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃত্তে তিনি কোথাও নেই— এ সব বলা হত। কিন্তু অভিষেকের সঙ্গে শোভনের বৈঠক দেখে বুঝলাম, একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক জানেন, কী ভাবে সঠিক লোকেদের কাছে টেনে নিতে হয়। এই বৈঠকে গত আট বছরের অনেক ক্ষতে প্রলেপ পড়েছে। ফলে অল্প কয়েক দিনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আবার সক্রিয় ভাবে রাজনীতির মাঠে দেখা যাবে বলে আশা রাখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement