সমাগম: স্মৃতি ইরানির হেলিকপ্টারের অপেক্ষায় সিউড়ির সভাস্থলের হেলিপ্যাডে উৎসুক জনতা।
অসুস্থতার জন্যে সিউড়ির সভায় আসতে পারেননি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তা নিয়ে হতাশা ছিল দলের অন্দরমহলে। বুধবার বিকেলে সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির হেলিকপ্টারও না পৌঁছনোয় তা বাড়ল কয়েক গুণ।
অসুস্থতার জন্য অমিত আসতে পারবেন না সিউড়িতে— মঙ্গলবার সেই খবরেই মনখারাপ ছিল দলের নেতাকর্মীদের। তবে সকলেরই আশা ছিল— অমিত না আসুন, বুধবারের সভায় স্মৃতি ইরানি আসলে মনখারাপ অনেকটাই কমবে।
এ দিন সিউড়িতে সভাস্থলের পাশাপাশি উৎসুক মানুষের ভিড় জমেছিল হেলিপ্যাডের পাশে। মঞ্চে রাজ্যস্তরের নেতাদের বক্তৃতা চলাকালীনও অনেকে দাঁড়িয়েছিলেন হেলিপ্যাডের আশপাশেই।
বিকেল ৪টে নাগাদ মঞ্চে বক্তৃতার ফাঁকে রাহুল সিংহ ঘোষণা করলেন— ‘‘স্মৃতিজি আজ আসছেন না।’’ দলের নেতাকর্মীদের চোখমুখে তখন স্পষ্ট হতাশার ছাপ। তাঁদের অনেকে নালিশের সুরে বললেন, ‘‘সভায় আসার পথে বাস ভাঙচুর হয়েছে। শাসকদলের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। অনেককে আসতেই দেওয়া হয়নি। দূর থেকে এত বাধা উপেক্ষা করে কষ্ট করে সভাস্থলে এসে যদি দেখা যায়, মূল বক্তাই নেই, মনখারাপ তো হবেই।’’
একই রকম বিরক্ত দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও আড়ালে তাঁরা বলছেন, ‘‘কোনও হেভিওয়েট নেতাকে তো পাঠানোই যেত। যে মানুষগুলোকে সভায় এনেছি, তাঁদের কী জবাব দিই বলুন তো!’’ রাহুল সিংহ অবশ্য অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকারের ষড়যন্ত্রের জন্যই স্মৃতিজি সিউড়িতে আসতে পারলেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ঝাড়গ্রামে সভাস্থলের পাশে হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দেয়নি রাজ্য সরকার। হেলিকপ্টার নামার অনুমতি ছিল কলাইকুণ্ডায়। ঝাড়গ্রামের সভাস্থল থেকে এত দূরে হেলিপ্যাড হওয়ার জন্যই সময়ের অভাবে স্মৃতি ইরানি ও কৈলাস বিজয়বর্গীয় সিউড়িতে আসতে পারলেন না। কারণ তাঁদের দিল্লি ফিরতে বিমান ধরতে হবে।’’
কর্মীদের হতাশার প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি কর্মীরা অবুঝ নন। তাঁরা সব বোঝেন। হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আরও বড় বড় সভা হবে বীরভূমে। নেতারা আসবেন। আরও লোকসমাগম করে সভা হবে।’’
গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট বিজেপির ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ যাত্রায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তার পরের দিন বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘গণতন্ত্র বাঁচাও সভা’র কথা ঘোষণা করে বিজেপি। জানানো হয়, এ রাজ্যে পাঁচটি সভা করবেন অমিত শাহ। সেই তালিকায় ছিল বীরভূম। দলীয় সূত্রে খবর, কিন্তু অমিত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি আসবেন কিনা এই নিয়ে যখন চর্চা চলছে, সিউড়িতে পৌঁছে কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করেন— অমিত শাহ আসছেনই। সভাও হবে। শুরু হয় প্রস্তুতি। দলের নেতা কর্মীরা বলছেন, মাঠ খোঁজা থেকে প্রশাসনিক অনুমতি পেতে প্রচুর সমস্যা হয়েছে। কিন্তু সর্বভারতীয় সভাপতি সভা করলে জেলায় দল চাঙ্গা হবে ভেবে চেষ্টায় ত্রুটি ছিল না। হেলিপ্যাডের অনুমতি বাদ দিয়ে সিউড়ি শহরের কাছে জাতীয় সড়ক ঘেঁষে কৃষিজমিতে সভার সব প্রস্তুতি যখন প্রায় পাকা, তখনই জানা যায় অমিত শাহ আসছেন না। দলের নিচুতলার নেতাকর্মীদের মন ভেঙেছিল তখনই। জানানো হয়, স্মৃতি ইরানি সিউড়িতে সভা করবেন।
কিন্তু বুধবার তা-ও হল না।
তবে এ দিন সভার শুরুতে উৎসাহ ছিল সবস্তরের নেতাকর্মীদের। হেলিপ্যাডের অমুমতি মিলেছিল। ছিল পুলিশ, দমকল। অভিযোগ উঠেছিল— সভাস্থলে আসার জন্য বাস বা অন্য গাড়ি পথে আটকানো হয়েছে। কর্মী-সমর্থকদের বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। কৃত্রিম যানজটের চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু তার পরেও প্রায় হাজার দশেক লোক জমায়েত ছিল। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল সিংহ সহ রাজ্য ও জেলার নেতৃত্বের উপস্থিতি এবং শাসকদল ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন সরকারকে আক্রমণ করে তাঁদের বক্তব্য মজে ছিলেন জনতা।
কিন্তু অনেকের ধৈর্য্য হারাতে শুরু করে দুপুর ৩টের পর থেকে। কখন আসবেন স্মৃতি ইরানি, কৈলাস বিজয়বর্গীয়— তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। চিন্তিত ছিলেন নেতারাও। হেলিপ্যাডের সামনে তখন প্রচুর মানুষ কেন্দ্রীয় নেতাদের অপেক্ষায়। ৪টের পর হতাশ করা খবর পেয়েই মাঠ ছাড়লেন কর্মী-সমর্থকেরা।
বিজেপি কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, স্মৃতি যে আসবেন না তা ঝাড়গ্রামের সভার পরেই জেনে গিয়েছিলেন সিউড়িতে থাকা দলীয় নেতারা। কিন্তু হঠাৎ সেটা বললে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় খবর চেপে গিয়েছেন।
বর্ধমানের ভেদিয়া থাকে বাসে লোক নিয়ে আসা বিজেপি কর্মী বাচ্চু ধীরর বলছেন, ‘‘এটা ঠিক হল না। কী বোঝাই বলুন তো সঙ্গে আসা লোকেদের।’’ মনখারাপ মুরারাই থেকে আসা পল্টু বাগদি, মল্লারপুরের দীপক রুই দাসেরও। তাঁরা বলছেন, ‘‘দলকে ভালবেসেই এসেছি। তবে স্মৃতিজি এলে ভাল লাগত।’’